শেষের পাতা
ব্যর্থতা কবুল
হাসিনার বক্তব্য আগুনে ঘি ঢালছে
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
নিজের ব্যর্থতা একবাক্যে স্বীকার করে নিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বললেন- নিশ্চয়ই আমি পারছি না। না হলে আমাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? তবে হ্যাঁ, যদি কাউকে পাওয়া যায় যে আমার চেয়ে ভালো করবেন, আমি সানন্দে তাকে স্বাগত জানিয়ে সরকারের দায়িত্ব থেকে চলে যাবো। সোমবার সেগুনবাগিচায় এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন। বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীলতাকে সামাল দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা করছে জানিয়ে মিস্টার হোসেন বলেন, এটা আমাদেরই সামাল দিতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার বক্তব্য যে আগুনে ঘি ঢালছে, এটা স্বীকৃত। ভারতের আতিথেয়তায় শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান দ্বিপক্ষীয় সম্প���্কের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়, সেটি ভারতকেই ঠিক করতে হবে। নয়াদিল্লিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্যই ভারতের সঙ্গে ‘গুড ওয়ার্কিং রিলেশন’ চায় বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত কেমন সম্পর্ক চায় সেটি দুই পক্ষেরই বিষয়। এটাতে বলা দোষের কিছু নেই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বাংলাদেশের খুব স্পষ্ট সিদ্ধান্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে চমৎকার কার্যকরী সম্পর্ক চায়। যার ভিত্তি হবে পারস্পরিক সম্মান ও অভিন্ন স্বার্থ। এ বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো অস্পষ্টতা নেই। উপদেষ্টা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়, সেটি তো তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এস জয়শঙ্কর কিছু বলেছেন যে, বাংলাদেশ সরকারের ভেতর থেকে কিছু আপত্তিকর কথা-বার্তা বলেছেন ভারতবিরোধী। আমি এ বিষয়ে ন্যায়-অন্যায় বা উচিত-অনুচিত কিছু বিচার করতে চাই না। এ ধরনের কথা বাংলাদেশ থেকে বলা হচ্ছে, ভারত থেকেও বলা হচ্ছে। ভারতের মুখ্যমন্ত্রী তো বাংলাদেশে পারলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন পাঠিয়ে দেন। ��ারতের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অহরহ বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এগুলো চলতে থাকবে ধরে নিয়েই তো বাংলাদেশ চেষ্টা করছে সম্পর্ক ভালো করা যায় কিনা। আশপাশের দুই-চারজন কি বললো, তাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি, এটা আমাদের অবস্থান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আতিথেয়তায় থেকে বিভিন্ন কথা-বার্তা বলছেন পুনরুল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এগুলো আসলেই সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতাকে আমাদেরই সামাল দিতে হবে। কিন্তু শেখ হাসিনার বক্তব্য যে আগুনে ঘি ঢালছে, এটা স্বীকৃত ব্যাপার।
গত শনিবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য উৎসবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, দিল্লির সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়, তা বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ সময় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘ভারতবিরোধী’ বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ অভিহিত করেন তিনি।
ভারতের ভিসা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটি সর্ম্পূণ তাদের অধিকার। তারা কাউকে ভিসা না দিলে বাংলাদেশের কিছু করার নেই। ভিসা দেয়া হচ্ছে না বা কমিয়ে দেয়া হয়েছে বলেই বাংলাদেশ বিকল্প খুঁজছে। উপদেষ্টা বলেন, আমরা ভালো সম্পর্ক চাই, এটা যেমন সত্য, তেমনি কোথাও সমস্যা থাকলে আমাদের তো বিকল্প দেখতে হবে। সংখ্যালঘু নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অভিযোগগুলো প্রধানত ভারতের গণমাধ্যমের বিকৃত তথ্য প্রবাহ সৃষ্টি করেছে। তার ভিত্তিতে এগুলো বিভিন্ন জন বিভিন্ন কিছু বলে বেড়াচ্ছে। বড় ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু তো ভারতে বিষয় হতে পারে না, এটা বাংলাদেশের বিষয়। যেমন ভারতের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হচ্ছে, তা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ নীতিতে যেতে হবে। আমাদের সংখ্যালঘুদের বিষয়টি বাংলাদেশ দেখভাল করবে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক।
ট্রাম্পের ২৯ মিলিয়ন ডলার নিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই, কাকে টাকা দেয়া হয়েছে, কতো খরচ হয়েছে। এমনও প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানকে খরচের জন্য এ অর্থ দেয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, এখানে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে কোনো বাংলাদেশি যাচ্ছেন না। এটি আদম ব্যাপারীদের পাল্লায় পড়ে এরা যাচ্ছে, এদের অন্য কোনো লোভ দেখানো হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ, তাদের বেআইনিভাবে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। স্বীকার করি, এটি খুবই কঠিন কাজ। আমরা অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর চেষ্টা করছি, তবে খুব একটা পারছি না।
জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিয়ে কাজ চলছে। তবে জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফর করবেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতা নিয়ে কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমার চেয়ে ভালো কাউকে পেলে আমি সানন্দে চলে যাবো।
পাঠকের মতামত
বাংলাদেশের শত্রুকে আসামি খুনি দেশ দ্রোহী হাসিনা কে কোলে নিয়ে ভারত সুসম্পর্ক চায় !!! ভারতকে স্পষ্ট বলে দিন আগে হাসিনাকে হস্তান্তর করুন তার পর অন্যান্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
উনি এখন সঠিক লাইনে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কথা বলছেন
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু তো ভারতে বিষয় হতে পারে না, এটা বাংলাদেশের বিষয় । Like it.
সবাই বলছেন ব্যর্থতা- আসিফ নজরুল সাহেব বলছেন ব্যর্থতা, তইহিদ সাহেব বলছেন ব্যর্থতা। নিত্ত্য প্রয়োজনীয় জিনিস-পথ্যের দাম আকাশ চুম্বি, চালের কেজি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। আইনশৃঙ্খলার অবনতি। সাধারন মানুষ কি ভাবে survive করবে? কে সফলতা আনবেন? তা হলে এত উপদেষ্টা কেন? এত উপদেষ্টার দরকার আছে কি? আমাদের মনে হয় অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের এত বেশী উপদেষ্টা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
So far you are doing good.