দীর্ঘ চার বৎসর পর আবার রুমি এবং মারুফ একসাথে জড়িয়ে গেল এক অদ্ভূত রহস্য মীমাংসায়, এক সুদীর্ঘ অনুসন্ধানে । যে অনুসন্ধানে মিশে আছে সহস্রবছর ব্যাপী গোপনে উচ্চারিত প্রশ্ন, মূল্যবান শত শত জীবন এবং অবিশ্বাস্য ঐতিহাসিক সব স্মারক । এর সুবিস্তৃত পটভূমিতে ওরা খুঁজে ফেরে এমন এক সত্য যা ধামাচাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিথ্যা আর ছলনায় মোড়া দৈত্যাকার মহীরুহ । মিনিমালিস্ট একটি রহস্য উপন্যাস, নানা ঘটনা উপঘটনার সুদীর্ঘ যাত্রা । কিন্তু এ এক উপলক্ষ্যও, বৃহৎ ও মহতী এক বোধের । সবকালে সবযুগে মহামানবেরা যে পথে হেঁটেছেন, তাঁদের দর্শনকে নতুন করে ধারনের এক প্রচেষ্টা । সে জীবনবোধে আপনাকে স্বাগতম !
মাশুদুল হকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে লিখছেন থ্রিলার, সায়েন্সফিকশন ও শিশু-কিশোর সাহিত্য, প্রকাশিত হয়েছে নিয়মিত ভাবে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে।
সাহিত্য-পুরস্কার : এইচএসবিসি-কালিওকলম তরুণ কথাসাহিত্যিক পুরস্কার ২০১৩।
Masudul Haque is a contemporary writer from Bangladesh known for his works on thrillers, Sci-Fi, and children's literature. His works have been published in Bangladesh and India regularly for the last 12 years. He was awarded the Kali O Kalam Young Writer Award in 2013.
প্রথমেই বলি, মাশুদুল হকের প্রথম থ্রিলার "ভেন্ট্রিলোকুলিস্টিক" পড়ে উনার ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, তার কারন হল উনি নিজে প্রচুর পড়াশুনা করে লিখতে বসে। আমার এ ধরনের বই খুব পছন্দ যেখানে প্রচুর ইনফরমেশন থাকবে, যা আমরা অনেকেই আগে জানতাম না।
মিনিমালিস্টও অনেক আশা নিয়ে পড়তে বসেছিলাম। আমি হতাশ হই নি এতটুকু বলব। গল্প শুরু হয় রুমি আর মারুফকে দিয়ে, রুমি একটি মার্ডার কেস রিপোর্টিং করতে জড়িয়ে যায় তার সাথে, এক সাথে মারুফও জড়িয়ে যায়।
এবং কাহিনী এখান থেকেই শুরু হয়। খুব দ্রুত ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা! এত দ্রুত যে প্রতি অধ্যায়েই কিছু না কিছু ঘটছে। ( গল্প নিয়ে বেশি কিছু বলব না কারন আমার মনে হয় তা স্পোয়লার হয়ে যাবে, কারন একদম প্রথম থেকেই চমক আছে বইয়ে। বইয়ের বিষয়বস্তু খুবই অবাক করা :D )
বইয়ে প্রচুর ইনফোরমেশন আছে, এত বেশিই আছে যে এক অধ্যায় পড়ার পর অন্য অধ্যায়ে যেতে যেতেই সব ভুলে যাই আমি :/ তবে অনেক কিছু চমকপ্রদ ইনফোরমেশনে আমি খুব অবাক হয়েছি আর ভালোও লেগেছে জানতে পেরে। উনি কিছু প্রাচীন ধর্ম তুলে ধরেছেন, সাথে কিছু নতুন ধর্মের সম্পর্কে বলেছেন যা হয়তো অনেকেই জানি না।
মাশুদুল হকের লেখার আরেকটা যে বিষয়টা চোখে পড়েছে তা হল, প্রতিটি জায়গার এত ডিটেইল বর্ণনা করেছেন যেটা পড়লে মনে হবে যে আপনি নিজেও ওই জায়গায় আছেন এই মুহূর্তে। উনার লেখনীর ধরন আসলেই ম্যচুয়ারড।
গল্পের শেষ টা আসলেই ক্লাইম্যাক্স এ ভরা, আমি কখনই ভাবি নি যে এনডিং টা এমন হবে। পুরাই আনরিয়েলিস্টিক এনডিং ... but it's ok, fiction itself an unrealistic thing.... right? :)
পলিটিক্যাল থ্রিলার আমার দারুণ লাগে। সাথে যদি রিলিজিয়াস টাচ থাকে তবে ষোলোকলা পূর্ণ!
বিস্তর হোমওয়ার্ক করে বইটি লেখা বোঝা যায়। একদম শুরু থেকেই পাঠককে টেনে ধরে রাখার মতো। লেখনী ঝরঝরে। গল্পচ্ছলে প্রচুর তথ্য দিয়েছেন। তবে ইনফো ডাম্প ছিল না মোটেই। প্লট বিচারে ভেন্ট্রিলোকুইস্টকেও ছাড়িয়ে গেছে। প্রিক্যুয়েলের বিবেচনায় ব্রাউনীয় ছাপও কিছুটা কমেছে।
বাতিঘরের অন্যান্য বইয়ের মতো ভুল বানানের প্রাচুর্য কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাচ্ছেনা। নিয়মিত এই প্রকাশনার বই পড়তে থাকলে নিশ্চিতভাবে শুদ্ধ বানানকেও ভুল বলে ভ্রম হবে।
ননফিকশন হিসাবে- বেশ ভাল থ্রিলার হিসাবে - থ্রিল বিহীন থ্রিলার (যা আছে সেটাও আহামরি কিছু না) ড্যান ব্রাউনের ল্যাংডন সিরিজের পর যারা মিস্ট্রি থ্রিলার লেখার কাজ করছেন সবার ভিতরে একটা প্রচ্ছন্ন চিন্তা ধারা থাকে বেশি বেশি ইনফরমেটিভ করার।বেশি ইনফরমেশন দিতে গিয়ে যে থ্রিল জিনিসটাই হারিয়ে যায় সেটার খুব ভাল উদাহরন এই বইটা।
কিছু অদ্ভুত বানানরীতি ছাড়া চোখে পড়েছে ড্যান ব্রাউনের ছায়���। ল্যাংডনের ক্লাস নেবার দৃশ্য অথবা "বিখ্যাত ইলুমিনাটির সমাধি"- এরকম টুকটাক কিছু জায়গায় মনে হলো ব্রাউনের এডাপটেশন।
এবার ভালো লাগায় আসি। ভেন্ট্রিলোকুইস্টের থেকে উত্তরণটা চোখে পড়ার মতো। ভালো হোমওয়ার্ক ছিলো। ধর্মীয় ব্যাপারগুলো এড়ানো গেলে ভালো সিনেমা হতে পারতো।
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আমি প্রায় এক বসায় পড়ে শেষ করেছিলাম। কিন্তু মিনিমালিস্ট পড়তে গিয়ে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছি বলা চলে! নিঃসন্দেহে এটি একটি চমৎকার তথ্যবহুল থ্রিলার। বইয়ের প্রথম কয়েক পাতা পড়লেই বোঝা যায় যে লেখক কতটা পড়ালেখা করে এই বই লিখেছেন। কিন্তু এতো ইনফরমেশন আমার মাথা গুলিয়ে দিচ্ছিল একটু! তাছাড়া বইয়ের অধিকাংশ অধ্যায়েই নতুন নতুন চরিত্র কাহিনী বর্ণনা করে, যেটা আমার ঠিক কখনোই ভালো লাগে না, কাহিনী মেলাতে কষ্ট হয়! এজন্য পড়তে আরেকটু ঝামেলা হচ্ছিল।
থ্রিলার জনরার বই পড়তে সবসময়ই ভালো লাগে আমার। তাই শার্লক হোমস কিংবা ফেলুদার মতো কেউ ঢাকার রাস্তায়ও রহস্যের সমাধান করতে ব্যস্ত, এটা ভাবতে কিন্তু খারাপ লাগে না।
রিভিউয়ে ডুব দেয়ার আগে কিছু কথা বলার প্রয়োজনবোধ করছি। ভেন্ট্রিলোকুইস্টের অনেক রিভিউয়ে ব্যাপারটা দেখেছিলাম, মিনিমালিস্টের ক্ষেত্রেও চোখে পড়েছে। ড্যান ব্রাউনের লেখার সাথে তুলনা। অস্বাভাবিক কিছু নয়, একই জনরার বই, সে নাম আসবেই। এরকম ইতিহাস আশ্রিত/ স্বল্প পরিচিত বিভিন্ন ধর্মের তথ্যে ভরপুর বই যে ড্যান ব্রাউন প্রথম লিখেছেন তা নয় কিন্তু, তার আগেও লেখা হয়েছে, আর পরে তো বটেই। তাই বলে যে শুধুমাত্র তার সাথেই তুলনা দিতে হবে সেটা একটু দৃষ্টিকটু। এ ধরণের বই লেখার ক্ষেত্রে লেখককে ব্যাপক হোমওয়ার্ক করতে হয়, খাটতে হয়- তার কাছেও নিশ্চয়ই তুলনাটা(মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে) ভালো লাগবে না। অনেকে এরকম বই দেখলেই বলে বসেন ড্যান ব্রাউনকে অনুকরণ করার চেষ্টা, সেটাও সমীচীন নয় বলেই মনে করি।
মিনিমালিস্ট, পুরোপুরি শেষ করার পর তৃপ্তির শ্বাস ফেলতে বাধ্য হয়েছি বলা যায়। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ার পরে যেরকম আশা সেটুকু উশুল হয়েছে কড়ায় গণ্ডায়। যে দূর্বলতাগুলো ছিল সেগুলো থেকে উত্তরণ আসলেই প্রশংসার দাবিদার। লেখা, গল্প বলার ধরণ, মূল প্লট সবদিক থেকেই ছাড়িয়ে গিয়েছে আগের বইকে।
স্বাভাবিকভাবেই বইয়ে প্রচুর তথ্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে এমন ভাবে বর্ণনা করে হয়েছে সেগুলো, পড়ে যেতে অসুবিধে হয়নি। পুরোটা সময় একটা সূক্ষ্ম উত্তেজনাবোধ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন মাশুদ ভাই, যা থৃলারের আবশ্যিক উপকরণগুলোর একটি।
ভালো লাগার আরেকটি কারণ নন-লিনিয়ার স্টোরি টেলিং। একজনের পয়েন্ট অভ ভিউ থেকে আরেকজনের পয়েন্ট অভ ভিউয়ে যাবার ফ্লুয়েন্সি চোখে পড়ার মত। প্রথমদিকে হয়তো একটু সময় লাগবে মানিয়ে নিতে, কিন্তু গল্পের একটু গভীরে প্রবেশ করলেই সেটা ঠিক হয়ে যাবে।
শুরুটা একটা খুন দিয়ে, মাঝে চেজিং, অ্যাকশন, ঐতিহাসিক বর্ণনা কোনটারই কমতি ছিল না। বইটা শেষ করার পর আবারো মনে হয়েছে, পৃথিবী কত কিছুই এখনো অজানা। মিনিমালিজম নিয়েও আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেই সাথে আগ্রহ তৈরি আরো অনেক বিষয়ে।
মাশুদুল হক ভাইয়ার ধন্যবাদ প্রাপ্য :) সামনে মারুফ-রুমিকে আবারো দেখতে চাই সেটা বলাই বাহুল্য।
কাহিনী সংক্ষেপ বইয়ের পেছনেই লেখা আছে, আমি আর বাড়তি কিছু বলে পাঠকের থৃল নষ্ট করতে চাচ্ছি না :)
পুরান ঢাকায় একটা রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মৃতব্যক্তি বিশিষ্ট ধনকুবের আত���কুর রহমানের পিএ। খুন নাকি আত্মহত্যা, পুলিশ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। ঘরের দরজা জানালা সবই ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। রিপোর্টিং দা��়িত্ব পড়েছে সাপ্তাহিক প্রাগুক্ত পত্রিকার সাংবাদিক রুমির উপর।
নৃতত্ত্ববিদ বন্ধু মারুফকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলো রুমি। জানা গেলো দ্রুতই, সেদিন একই রকম দরজা ভেতর থেকে বন্ধ রেখে আরেকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ঢাকা শহরে! এবার মারা গিয়েছে একজন পাঞ্জাবী শিখ। বিষয়টি তেমন প্রচার পায়নি, কারণ এই মৃত্যুটি ঘটেছে শিখদের ঢাকাস্থ উপাসনালয় গুরুদুয়ারার ভেতরে।
রহস্যের গন্ধ পেয়ে গেছে রুমি, তাকে আর ঠেকায় কে। দুই বন্ধু চলে এলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থিত শিখ গুরুদুয়ারাতে, যেটি এই নগরীর অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা। লুকিয়ে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে চরম বিপদ টেনে আনলো রুমি। বন্দুকধারীরা পিছু নিয়েছে!
কেমন হবে যদি জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের খোয়া যাওয়া নোবেল পদকটি রয়েছে বাংলাদেশের কোনো শৌখিন ব্যক্তির সংগ্রহশালায়? ব্রিটিশদের কাছে যে কোহিনূর হীরে আছে তা কি সত্যিই নকল? আসলটা তবে কার কাছে? সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে কোহিনূরের জমজ রত্ন 'দরিয়া-ই-নূর' চুরি হয়ে যাওয়ার যে গুজব উঠেছে তা-ও কি সত্যি?
এসব কিছুর সঙ্গে কি সম্পর্ক কিছু ধর্মীয়গোষ্ঠির? দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানো পর্যন্ত শান্তি নেই রুমির।
'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট' এর রহস্যভেদের পর চার বছর কেটে গেছে। রুমি আর মারুফ জড়িয়ে পড়েছে নতুন সমস্যায়। এবার আর গা ছমছমে ভূতুড়ে কিছু নয়, বিশ্বের সব প্রাচীন ও নতুন ধর্মবিশ্বাস নিয়ে জমে উঠেছে গল্প। দুই বন্ধু বাংলাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে চলে এসেছে ভারতে রহস্য সমাধান করতে।
শিখ ধর্মের আদ্যোপান্ত ইতিহাস থেকে শুরু করে মিনিমালিজমের দর্শনের ব্যাখা বিস্তারিত ছিল উপন্যাসে। প্রাচীন যে মূল কয়টি ধর্ম ও তার মহামানবেরা রয়েছেন, তা নিয়েও নানারকম তত্ব আর চমকে দেওয়ার মতো তথ্য গল্পের প্রয়োজনে যুক্ত হয়েছে।
যারা টানটান থ্রিলার চান তারা কিছুটা হতাশ হতে পারেন। প্রচুর তথ্য আর ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে উপন্যাসে, কিন্তু পাতায় পাতায় টুইস্টের কোনো কমতি ছিল না। আমি বইটি পড়েছি থেমে থেমে, অনেক তথ্যই সাথে সাথে আরো জানার জন্য খুঁজে দেখেছি। এবং চমকে গিয়েছি জেনে যে, লেখক গল্পে যা কিছু থিওরী এবং তথ্য ব্যবহার করেছেন কিছুই মনগড়া নয়। বইয়ের শেষে লেখক তথ্যসূত্রও যোগ করে দিয়েছেন পাঠকদের সুবিধার্থে।
'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট' এর পর মাশুদুল হক এই উপন্যাসে এসে লেখনীতে আগের চেয়ে অনেক বেশী পরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছেন। সাবলীল বর্ণনায় দীর্ঘ ইতিহাসও ছিল সুখপাঠ্য। গল্পে বেশ কিছু চরিত্র এসেছে। কাহিনীর বর্ণনা এবার আর শুধু মারুফের ভাষ্যে নয়, বরং একেক সময় একেক চরিত্রকে উত্তম পুরুষে এ��ে গল্প এগিয়ে নিয়েছেন লেখক।
বইয়ে বানানের ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল বেশ। পরা ও পড়া'র মধ্যে বিভ্রান্তি দৃষ্টিকটু। চমৎকার সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রচ্ছদ লেখক নিজেই করেছেন।
বাংলাদেশের সাহিত্যের মৌলিক ঐতিহাসিক থ্রিলারের তালিকায় 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট'কে যদি বলা যায় দরিয়া-ই-নূর, 'মিনিমালিস্ট' উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে তবে কোহিনূর হীরে হিসেবে স্থান করে নিতে পারে���
ড্যান ব্রাউন স্টাইলের লেখা আমার বরাবরই প্রিয়। অনেক তথ্যবহুল আর ঘটনাবহুল। বাংলাদেশি কয়েকজন মাত্র থ্রিলার লেখকের মধ্যে মাশুদুল হকই এরকম তথ্যবহুল থ্রিলার লিখেন। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আমার বেশ ভালো লেগেছিল। মিনিমালিস্ট এর ক্ষেত্রে শুধু এইটুকু বলবো কয়েক জায়গায় মনে হয়েছে অপ্রাসঙ্গিক তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য বাদ দিয়ে উপন্যাসটা আর একটু ছোট হলে আরও উপভোগ্য হত। কিন্তু এই ছোটখাটো ব্যাপার ছাড়া পুরোটাই মনোমুগ্ধকর ছিল।
একটা লকড রুম মিস্ট্রি। মারা গেলেন শহরের বিখ্যাত এক ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সহকারী। এই নিউজ কাভার করতে গেলেন একজন সাংবাদিক, নাম তার রুমি। বন্ধু মারুফকে নিয়ে এই রহস্য সমাধানে নেমে বিরাট এক চক্রান্তে জড়িয়ে যায় দুজনেই। এর পেছনে ছুটতে গিয়ে ভারতবর্ষের কলকাতা, রাজস্থান এবং শেষে কাস্মীর অবধি ঘুরতে হয় রুমিদেরকে। ঘটনায় চলে আসে কোহিনূর হিরা, খালিস্তিনি আন্দোলন, জিশু খ্রিষ্ট, মুসা আরো কতজন আর কতকিছু। উপন্যাসটা খুব ইন্টারেস্টিং কিছু মিথ এবং সত্য ঘটনার মিশ্রনে গড়ে উঠেছে। লেখক ব্যাপক পড়াশোনা করে আটঘাট বেধে বইটা লিখতে নেমেছেন। পরিশেষে তথ্যের সোর্সও দিয়েছেন লেখক। সবই ভাল কিন্তু বইয়ের মাঝখানে মনে হচ্ছিল ইতিহাসের বই পড়ছি। এবং ব্যাপারটা খুবই একঘেয়ে লাগছিল। আর বইটাতে এত বেশী বাকবদল হচ্ছিল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে গল্প অনুসরণ করতেই সমস্যা হচ্ছিল। আর জোড়াগুলা বড্ড দুর্বল লাগল আমার কাছে। অবশ্য এই ব্যাপারটা একটা ফিলিংসের মত, সবার হয়ত এমন লাগবে নাহ। আর হ্যাঁ, ড্যান ব্রাউনের প্রভাব অনেক বেশী আকারেই আছে বলে মনে হল। অবশ্য এটা নিয়ে আমার কোন অনুযোগ নেই, শুধুমাত্র মৌলিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এইবারের বইমেলার যে বইটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড ছিলাম, তা হচ্ছে মিনিমালিস্ট। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ার পর থেকেই লেখকের ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম,সেইসাথে মারুফ এবং রুমির ও। অবশেষে দীর্ঘ চার বছর পর মারুফ এবং রুমির দেখা পেলাম।সেই সাথে তাদের সাথে নতুন এক মিস্ট্রি সলভ্ করতে নেমে পড়লাম।শুধু মিস্ট্রি সলভ্ ই করিনি, মিনিমালিস্ট এবং মিনিমালিজম সম্পর্কে জানার প্রতি ও আগ্রহ জন্মালো।
নিঃসন্দেহে, লেখক প্রচুর পড়াশুনা এবং পরিশ্রম করেছেন বইটির জন্য।লেখকের সেই পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।মিনিমালিস্ট বইটি খুবই ইনফরমেটিভ।কোহিনূর সম্পর্কে একটু আধটু জানা থাকলেও, দরিয়া - ই- নূরের কথা এই প্রথম জানলাম।এরপর খালিস্তান,শিখ সম্প্রদায়,এরপর মিনিমালিজমতো আছেই...মানে যতই পড়ছিলাম(পড়ছিলাম বললে ভুল হবে, গোগ্রাসে গিলছিলাম :p) ততই নতুন কিছু জানতে পারছিলাম এবং ততই লেখকের জানার পরিধি দেখে মুগধ হয়েছি।বইয়ের কভারটা ও অনেক জোস!
বাই দ্য ওয়ে, মিনিমালিজম/মিনিমালিস্টদের নিয়ে একটু আধটু পড়াশুনা করে বুঝলাম--- "We should all be minimalists" (মানে এটা জাস্ট আমার ধারণা আরকি) :p
এই সিরিজের নেক্সট বইয়ের জন্য শুভকামনা এবং লেখককে ধন্যবাদ এমন একটা অসাধারণ বই লিখার জন্য।
আমি একবার আমার এক বন্ধুর সাথে একমত হয়েছিলাম একটা ব্যাপারে। এই বইটার বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়া উচিত। আমাদের দেশের মৌলিক থ্রিলার লেখকরা যে আন্তর্জাতিক মানের এবং পটভূমির বই রচনা করতে পারেন, মাশুদুল হকের মিনিমালিস্ট তার একটি অন্যতম উদাহরণ। কি নেই এখানে? পাতায় পাতায় টুইস্ট, রোলার কোস্টার গতির এক আখ্যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তাই ঘরের কাছের গুরুদুয়ারার প্রতি আগ্রহটা বেড়ে যায় লেখকের এই বইটি পড়ে। নানা তথ্যের সমাহার, ইতিহাস, শিখদের সম্পর্কে নানা তথ্য আর চরিত্রের সম্মিলনে বইটি একেবারে যাকে বলা যায় ফার্স্টক্লাস। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ে লেখক���র প্রতি যে আগ্রহ আর ভালো বই পাবার যে আগ্রহটা তৈরি হয়েছিল, মিনিমালিস্ট নিঃসন্দেহে তা পুরোপুরি পূরণ করে।
মাশুদুল হকের লেখা এর আগেও বেশ কয়েকটি পড়েছি।তার গল্পের রহস্যময়তা আর টুইস্���ে লেখনীতে পাঠককে দারুণভাবে আটকে রাখতে পারেন। এই উপন্যাসটি তার লেখা ভেন্ট্রাকুইলিস্ট এর সিক্যুয়েল। তবে মিনিমালিস্ট তার পুর্ববর্তী বইকে ছাড়িয়ে গেছে বিস্তৃতি আর কাহিনীর গভীরতায়। বইটি পড়তে পড়তে একসময় ড্যান ব্রাউনের লিখা পুরো বিশ্বে সাড়া ফেলে দেওয়া "দ্য ভিঞ্চি কোড " খুব মনে পড়ছিল। গল্পের মধ্যে ইতিহাসকে তথা বিতর্কিত ইতিহাসকে তুলে ধরার এমন উদাহরণ বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি নেই। লেখকের প্রতি পরামর্শ রইল, প্লিজ বইটির ইংরেজি অনুবাদ বের করার ব্যবস্থা নেন। ভিঞ্চি কোডের মতোই বিখ্যাত হওয়ার উপাদান আছে এতে।
🍁🍂বইয়ের নাম - মিনিমালিস্ট🍂🍁 ✍️লেখক - মাশুদুল হক 🖨️প্রকাশক - অভিযান পাবলিশার্স 🗒️পৃষ্ঠা সংখ্যা - ২৭২ 💰মূল্য -4০০₹
#অভিযান_পাবলিশার্স #মাশুদুল_হক
Reading Done!!
🍁🍂দীর্ঘ চার বৎসর পর আবার রুমি এবং মারুফ একসঙ্গে জড়িয়ে গেল এক অদ্ভূত রহস্য মিমাংসায়, এক সুদীর্ঘ অনুসন্ধানে। যে অনুসন্ধানে মিশে আছে সহস্র বছর ব্যাপী গোপনে উচ্চারিত প্রশ্ন, মূল্যবান জীবন এবং অবিশ্বাস্য ঐতিহাসিক সব স্মারক। এর সুবিস্তৃত পটভূমিতে ওরা খুঁজে ফেরে এমন এক সত্য যা ধামাচাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিথ্যা আর ভ্রান্তিতে মোড়া দৈত্যাকার এক মহীরুহ। মিনিমালিস্ট একটি রহস্য উপন্যাস, নানা ঘটনা উপ-ঘটনার সুদীর্ঘ যাত্রা। কিন্তু এ এক উপলক্ষ্যও, বৃহৎ ও মহতী এক বোধের। সবকালে সবযুগে মহামানবেরা যে পথে হেঁটেছেন, তাঁদের দর্শনকে নতুন করে ধারনের এক প্রচেষ্টা। সে জীবনবোধে আপনাকে স্বাগত!🍂🍁
বইটা নাকি এর আগের বই মেলায় (বইমেলা-২০১৫) কম্পিলিট হয়ে যায়। কিন্তু লেখক প্রকাশকে বললেন তিনি সন্তুষ্ট না, নিলেন আরও একটি বছর। সর্বমোট চার বছর পর বের হল এই সিরিজ এর ২য় বই মিনিমালিস্ট। কেন এতটা সময় নিয়েছে সেটা বই পড়লেই বুঝবেন।
অনেক তথ্যবহুল একটা বই।ড্যান ব্রাউনিও একটা স্বাদ পাবেন।
বইটি পড়ার আগে এই সিরিজ এর প্রথম বই "ভ্রেন্ট্রিলোকুইস্ট" পড়ে নিতে পারেন অনেক ভাল একটা বই। পয়সা উসুল করার মত বই। তবে ��্রেন্ট্রিলোকুইস্ট না পড়লে মিনিমালিস্ট কাহিনি বুঝতে সমস্যা হবে না। কারন দুইটা বইয়ের কাহিনি আলাদা। তবে পড়ে নিলে চরিত্র গুলোর মজা বেশি পাবেন।
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর একটি যথার্থ সিকুয়েল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল টান টান উত্তেজনা।
চার বছর পরে রুমি আর মারুফের ফিরে আসা। পেশার সাংবাদিক রুমি একটি আত্মহত্যার রিপোর্ট করতে গিয়ে জড়িয়ে পরে গভীর রহস্যের সাথে। পরিস্থিতি আরও গভীর হয় যখন রুমি আর মারুফ দায়িত্ব নেয় এক কোটিপতির হয়ে একজনকে খুঁজে বের করার। বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক গোপন সংঘ আর তাদের ভয়ানক পরিকল্পনা। সবার উদ্দেশ্য গিয়ে মিলে একটি জায়গায়, কোহিনূর। ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত রত্ন, যা এবার আরও কিছু রক্তের কারণ।
"কোহিনূর এমন এক রত্ন যা কেনা যায় না, এটা তরবারির শক্তিতে বা মহান সম্রাটের দানের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।"
গল্পের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে চলে যায় শিখদের চারণভূমি ভারতের পাঞ্জাব পর্যন্ত। ইতিহাসের এক সময়ের শান্তিপ্রিয় এই গোষ্ঠী যুগে যুগে শাসিত, অত্যাচারিত হয়ে এসেছে। তারা কি শেষ পর্যন্ত শান্তিপ্রিয়ই হয়ে থাকবে?
"শিখরা হয় শাসক, আর নাহয় বিদ্রোহী।"
ধর্ম আর ইতিহাসের এক অপূর্ব মিশ্রণে এগিয়ে যায় গল্প। যার শেষ পর্যন্ত রয়ে গেছে রহস্যের জট।
***
লেখক বইটিকে প্রচুর তথ্যবহুল করেছেন। বুঝাই যায় এজন্য তিনি যথেষ্ট গবেষণা করেছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে একটি ফিকশনে এত বিস্তারিত তথ্যের দরকার ছিল না। সবচেয়ে নেগেটিভ লেগেছে যেটি, এতগুলি চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করাটা। মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। এছাড়া বাকিদিক থেকে মিনিমালিস্ট ভাল একটি বই। বিশেষ করে বাংলা ভাষার লেখা এই রকম একটি বই অবশ্যই প্রশংসনীয়।
রিভিউ বইয়ের নামঃ মিনিমালিস্ট (ভেন্ট্রিলোকুইস্ট #2) লেখকঃমাশুদুল হক জনরাঃহিস্টোরিকাল থ্রিলার প্রকাশনঃবাতিঘর প্রকাশনী প্রকাশকালঃ ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ মুদ্রিত মুল্যঃ৩০০ টাকা পৃষ্ঠাঃ৩১৭
মিনিমালিষ্ট !
নাম শুনে কি মনে হচ্ছে ???
কি জনরার বই বলে মনে করছেন??
আমার মতে পার্ফেক্ট হিস্টোরিকাল থ্রিলার বলা যায় মিনিমালিষ্টকে । ও হ্যাঁ আগেই বলে নিচ্ছি বইটি কিন্তু ভেন্ট্রিলোকুইস্টের সিকুয়েল। আগের বই মানে ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ার পর মাথায় একটা কথা ই ঘুর ঘুর করছিল আমি কি বাংলাদেশের কোনো রাইটারের লেখা পড়ছি ?? নাকি নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলার কোনো রাইটারের লেখা পড়ছি ।
মিনিমালিস্টের গল্প এগিয়েছে দুই বন্ধু রুমি আর মারুফ কে নিয়ে । রিপোর্টার রুমির লকড রুম মিস্ট্রির কেস ওদের দুই বন্ধুকে জড়িয়ে ফেলে এমন এক যাত্রার সাথে যেখানে চলতে থাকলে মনে হয় না থামার উপায় আছে । আমিও থামতে পারি নি ।
এই গল্প মিনিমালিজমের গল্প । মিনিমালিজম নামের এক অদ্ভুত চেতনার গল্প ।
শিখদের পঞ্চ ক এর গল্প :D ( কি মনে হয়েছে স্পয়লার হয়ে গেল , আরে না মশায় স্পয়লার নাহ :P )
এ গল্প জিনানের গল্প । জিনান ছাড়াও আরো অনেক মিনিমালিস্টের গল্পের উপাখ্যান ঘটেছে এই ছোট্ট বইটিতে ।
এ গল্প মাস্টার মাইন্ড এক উন্মাদের গল্প । তার স্বপ্নের খালিস্তানের উত্থানের গল্প।
এ গল্প ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এক হীরার । যারা জানেন তারা চুউপ করে বসে থাকুন :P
এই গল্পে একসাথে পাবেন মানুষের দর্শন , ধর্ম , ইতিহাস , রাজনীতির অদ্ভুদ এক অতিন্দ্রীয় উপাখ্যান । দুই এক পাতার ছোট্ট ছোট্ট অধ্যায় হয়তো আপনাকে কখনো নিয়ে যাবে অতীতে কখনো বর্তমান কখনো বা সুদূর ইতিহাসের কোনো ঘটনাবহুল স্থানে । কেননা সবই যে এক অদ্ভুদ সুত্রে গাথা রয়েছে ।
লেখক প্রচুর পড়াশুনা এবং শ্রম ব্যায় করেছেন বইটির জন্য । কোহিনুরে রূপের দর্শন আগে পেলেও , দরিয়া - ই- নূর এর সাথে এইবার লেখক পরিচয় করিয়ে দিলেন।
সবচেয়ে যে ব্যাপার টা আমার নজর কেড়েছে তা হল লেখকের লেখনী । উনার লেখনীতে সুন্দর ডিটেইলিং তা সত্যি বেশ নজর কাড়ার মতোই। কিছু কিছু জায়গার বর্ণনাতে মনে হয়েছে আমার চোখের সামনেই ভেসে উঠছে দৃশ্যপট।
আগের বই মানে ভেন্ট্রিলোকুইস্টের কাহিনী এগিয়েছিল অন্য এক অদ্ভুত গতিময়তা��ে । রিপোর্টার রুমি আর নৃতাত্বিক মারুফ ধীরে ধীরে একের পর রহস্যের এক স্তর থেকে আরেক স্তরে নিয়ে গিয়েছেন পাঠককে।
কিন্তু এইবার !!!!!!
এইবারের গল্প এগিয়েছে একেক জনের জবানীতে । লেখক অদ্ভুদ এক কায়দায় বিভিন্ন চরিত্রের ফার্স্ট পার্সন ভিউতে গল্প লিখে গেছেন। এমনভাবে গল্পটা সাজানো হয়েছে যাতে পাঠক একেক চরিত্রের ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পায় । লেখকের নিজস্ব মুন্সিয়ানাতে সাসপেন্সে বজায় ���াখতে সক্ষম হয়েছেন ঠিকি কিন্তু
প্লটে রাজনৈতিক অংশ গুলোকে কিছুটা অবহেলিত মনে হয়েছে।এই প্লটে রাজনৈতিক অংশকে আরেকটু শক্ত ভাবে আশা করেছিলাম ।
ইদানিং বেশীর ভাগ লেখকদেরই দেখছি বইতে সুযোগ পেলেই ইংলিশের অনুপ্রবেশ করান লাস্ট এমন টা লেগেছে কেপি ভাইয়ের মিথস্ক্রিয়াতেও । এটাকে মাঝে মাঝেই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে ।
পরিশেষে একটা কথা দিয়ে শেষ করি মিনিমালিস্ট নিছক কোনো হিস্টোরিকাল থ্রিলার নয় :P
নানা ঘটনা আর উপঘটনার সুদীর্ঘ যাত্রা । কিন্তু এ এক উপলক্ষ্যও, বৃহৎ ও মহতী এক বোধেরও ।
সবকালে সবযুগে মহামানবেরা যে পথে হেঁটেছেন, তাঁদের দর্শনকে নতুন করে ধারনের এক প্রচেষ্টার অপর নাম মিনিমালিস্ট।
"He who is not satisfied with a little, is satisfied with nothing " - Epicurus -------------------------------------------------------------------------------- রিভিউ : মিনিমালিস্ট জনরাঃ Historical thriller লেখকঃ মাশুদুল হক প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারী ,২০১৬(বাতিঘর প্রকাশনী) পৃষ্ঠাঃ ৩২০ মুদ্রিত মুল্যঃ ৩০০ টাকা --------------------------------------------------------------------------------
মিনিমালিস্ট এর কাহিনী শুরু হয় ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর ঘটনার চার বছর পরে। এক হত্যার রিপোর্টিং করতে গিয়ে অদ্ভুত ভাবে এক শতাব্দী প্রাচীন রহস্যের সাথে জড়িয়ে যায় রুমি আর তার বন্ধু মারুফ। তারা জানতে পারে ভারতীয় উপমহাদেশ এক মহা বিপদের সম্মুখীন যার সাথে জড়িয়ে আছে উপমহাদেশের সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন । আর তা বন্ধ করার জন্য তারা ছুটে বেড়ায় উপমহাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। শেষ পর্যন্ত তারা মহাবিপদকে রোধ ���রতে পারে কিনা আর রত্নটির শেষ পরিনতি কি হলো তা জানার জন্য পড়তে হবে " মিনিমালিস্ট " .
Rating : ৭.৫ /১০ (Historical fiction বরাবরই খুব পছন্দের বিষয়। আর এই বইতে অনেক ধর্ম আর দার্শনিকদের সম্পর্কে নতুন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়।তাই পড়ার সময় মনে হয়েছে যেন dan brown এর কোনো বই পরছি। রুমি-মারুফের সাথে robert langdon এর,নওরোজ এর সাথে silus এর, খ্রিস্টানদের হলি গ্রেইল এর সাথে শিখদের কোহিনুর এর এমনকি মারুফের মাঝে মাঝে লেকচার এর কথা মনে পড়া , রুমিদের জেট প্লেনে কলকাতায় যাওয়া আর শেষ দিকে বোমার ঘটনা গুলোতেও dan brown এর ছায়া পাওয়া যায়। অবশ্য উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের উপন্যাস লিখতে পারাও অনেক ইতিবাচক। তবে বইতে প্রধান ভিলেন গোষ্ঠিকে গল্পের মাঝে প্রকাশ করে দিলেও তার বিস্তারিত কোনো বর্ণনা পেলাম না ।নন লিনিয়ার স্টোরি টেলিং এর জন্য কিছু কিছু অধ্যয়ে কে নেরেট করেছে তা বুঝতেই অধ্যয় শেষ। আর কিছু কিছু বানান ভুল ছিল চোখে পড়ার মত। তবে এই সব খুটি -নাটি বিষয় বাদ দিলে "মিনিমালিস্ট" হলো ধর্ম ,ইতিহাস,দর্শন আর রাজনীতির মিশেলে এক দারুন হিস্টোরিকাল থ্রিলার !)
আমার পড়া প্রথম বাঙালি লেখকের থ্রিলার। সে হিসেবে মুগ্ধই বলা যায়। ভালোলাগার কথা বললে গল্প বলার শৈলী, কাহিনী সাজানো, অনেক জেনে বুঝে লেখার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়।
তবে অনেক ক্ষেত্রে কিছু(একেবারেই কম) বিবরণ খাপে খাপে মেলাতে সময় লেগেছে, কিছু অপ্রয়োজনীয়ও লেগেছে। (একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত) মোটাদাগে বলতে গেলে লেখকের লেখার ভক্ত হয়ে গেলাম।
অনেক অনেক অনেক বেশি রিসার্চ করে লেখা একটি বই। ভেন্ট্রিলোকুইস্টের থেকেও অনেকাংশে সেরা মনে হয়েছে বইটাকে। এত এত অজানা ধর্ম পৃথিবীতে বিরাজ করে তা এই বইটা না পড়লে জানতে পারতাম না। এখন শুধু "প্রাগুক্ত"- এর অপেক্ষায় থাকবার পালা। :(
রুমি-মারুফ সিরিজের প্রথম বই 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট' তেমন না জমলেও সিরিজের দ্বিতীয় বইতেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন মাশুদুল হক।প্রথম বইয়ের মতোই লেখক দ্বিতীয় বইতেও নাড়াচাড়া করেছেন পৃথিবীর প্রচলিত অপ্রচলিত ধর্ম ও তাদের অনুসারীদের বিশ্বাস নিয়ে।
ধর্মের সৃষ্টি সাধারণত মানুষকে পথপ্রদর্শন করার জন্যে।কিন্তু সেই ধর্মীয় বিশ্বাসই যখন উগ্রতার দিকে যায় তখন সেটা কি পরিমাণ বিধ্বংসী হতে পারে সেটা আমরা বর্তমান পৃথিবীতে চাইলেই দেখতে পাই।লেখকও তুলে এনেছেন সেই বিষয়গুলোই (অবশ্যই অপ্রচলিত ধর্মবিশ্বাস নিয়েই কারণ প্রচলিত ধর্ম নিয়ে লিখে কেইবা কোপ খেতে চায় বলুন?)।
কৌতুহলী সাংবাদিক রুমি একটা খুন কিংবা আত্মহত্যার রিপোর্ট করতে যায় পুরান ঢাকায়।তার সাথে তার সবসময়ের সঙ্গী নৃতাত্ত্বিক মারুফ।সেই আত্মহত্যা বা খুনের রিপোর্ট করতে গিয়েই একরাতের ব্যবধানে তারা জড়িয়ে পরে এমন কিছুতে যা সফল হলে বদলে যাবে পুরো পৃথিবীর ইতিহাস।শিখ,মিনিমালিস্ট,সাবমিশন,কোহিনূর,দরিয়া-ই-নূর সবকিছু মিলিয়ে পারফেক্ট।আর সিক্যুয়েলের মর্যাদা রাখতে শেষের দিকে 'ভেন্ট্রিলোকুইস্ট' থেকে উঠে আসে আরেক চরিত্র।
তবে হ্যাঁ,থ্রিলারকে থ্রিলার হিসেবে��� পড়তে হবে।বাস্তবতা খুঁজতে গেলে পড়ার আনন্দ মাটি হয়ে যাবে।কারণ বাস্তব জীবনে 'রুমি' হওয়া অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে।
লেখককে ধন্যবাদ তার ইনফরমেশনের সোর্স বইয়ের শেষে দিয়ে দেয়ার জন্যে।সময় পেলে ভবিষ্যতে পড়ে ফেলবো সেসব কন্সপিরেসি থিওরি আর তাদের প্রমাণ নিয়ে সেসব দুর্লভ বই।
Prelude: বাংলাদেশের এক ধনীব্যক্তি আতিক সাহেব। তার নাতনী জিনান হঠাৎ করে কিডন্যাপ হয়। Ransom হিসাবে চাওয়া হয় কোহিনূরের সিস্টার ডায়মন্ড দরিয়া-ই-নূর। তারপর শুরু হয় ঝামেলা। হীরেটি নিতে আসা ব্যক্তি খুন হয়, পড়ে জানা যায় তার পিছনে আছে আরও বড় এক ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠন। এমনকি জিনানও কিডন্যাপ হয়নি সে অন্য এক সংগঠনের সাথে মিলে নিজের কিডন্যাপ fake করেছিল। মোদ্দা কথা প্যাঁচের ওপর প্যাঁচ, জটের উপর জট এবং ক্রমশ জটিল হতে থাকা গল্পের গতিপথ। (দুমতানানানানা একদম। 😂 )
🌚 গল্পের genre বলা যায় ওই Dan Brown ধরন���র থ্রিলার (আলাদা করে কিছু নাম থাকলে আমার জানা নেই, ক্ষমা করবেন।) বাস্তবে রয়েছে একটি crisis কিন্তু তার সমাধানের জন্য ঘাঁটতে হবে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস। ধর্মের ইতিহাস, কন্সপিরেসির ইতিহাস। ইতিহাসের মাঝে চাপা থাকা সেই সব unsolved mystery solve করে তবেই আমাদের সামনের crisis avert করা যাবে।
🌀 প্রচুর প্রচুর ধর্মের ইতিহাস আর ধর্মগ্রন্থের মধ্যে গল্পদের লিংক করা আর সেই conspiracy theory দের একসাথে সুন্দর ভাবে বুনে একটা দারুন ফিকশনাল থ্রিলার বানানো হয়েছে। কোন ধর্ম নেই! ইসলাম ধর্মের নবী, জরাথ্রুস্ট, গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর এমনকি খ্রিস্টধর্মের জেসাস ক্রাইস্ট সবাইকে কি দুর্দান্ত গল্প দিয়ে connect করা হয়েছে। না পড়লে বিশ্বাস করতে পারবেন না যে এমনও করা যায়। লেখকের এত বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাস নিয়ে research রীতিমতো প্রশংসার দাবি রাখে।
🌀 Continuity এই গল্পের এক বিশাল plus point। আপনাকে ক্রমাগত তথ্য সরবরাহ করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে যে সবাই ঠিক এখন কি চিন্তা ধরে এগোচ্ছে। ইতিহাস ভালো না লাগলেও এত সুন্দর করে বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাসের গল্পগুলো আপনাকে দেওয়া হবে যে আপনি সেই ইতিহাসে ফেরত চলে গেছেন, বা সব কিছু চোখের সামনে হতে দেখছেন এমন মনে হবে। প্রত্যেকবারই সুন্দর এক ঐতিহাসিক journey তে চলে যাবেন, তারপরেই আবার আপনাকে বাস্তবে ফেরত আসতে হবে কারণ অনেকগুলো রহস্য সমাধান এখনও বাকি।
🌀 Changing narrative: গল��পের কথক বা সূত্রধর যাকে বলে সেটা একজন নয়। গল্পের সমস্ত মূলচরিত্ররা এক এক করে পালা করে নিজেদের point of view থেকে গল্প বলেছে। এই জিনিসটা ছন্দপতন তো করেই নি উল্টে গল্প কে আরও ইন্টারেস্টিং বানিয়ে দিয়েছে। যেমন একটা সময় আমাদের রামেন্দ্রদা (গল্পে ইনি একজন private investigator) বলছেন, "এরা যা ইতিহাস নিয়ে গল্প জুড়েছে মনে হয়না এই কেস আর সলভ হবে। আমি বরং অন্য দিক গুলো ভাবি। সলভ তো সেই আমাকেই করতে হবে।" 😂😂
🌀 প্রতিটি চরিত্রের মনস্তত্ত্ব সুন্দর করে আঁকা হয়েছে। কে কোন কাজ কেন করছে, কিসের জন্য সে এত inspired হয়ে খুনের পর খুন করছে কিন্তু তার হাত কাঁপছে না, সে সব আছে।
❄️ শেষে বলি আমি নিজেই একজন মিনিমালিস্ট। তবে এটা কোন ধর্ম এমন শুনিনি। তবে সেই চিন্তাকে কেন্দ্র করে এত দুর্দান্ত এক খানা গল্প ফাঁদা যায় এমন জানতাম না। বেশ মজা লাগলো পড়ে।
🌀 মাশুদুল ভাইয়ের লেখা আগের থ্রিলার ভেন্ট্রিলোকুইস্ট আমার পড়া হয়নি। তবে এই গল্প পড়তে তার বিশেষ কিছু দরকার পড়েনি। গল্পের climax ও খুব সুন্দর। একদম থ্রিলারের শেষ যেমন হাওয়া উচিত। খুব তাড়াতাড়িই সম্ভবত রুমি আর মারুফ ফেরত আসবেন আরও একটা গল্প নিয়ে। অপেক্ষায় থাকলাম।
অনেকদিন পর থ্রিলারের জগতে পা রাখা। বেশ কিছুদিন ক্লাসিকস, প্রবন্ধ, ইয়াং এডাল্ট বইই পড়া হচ্ছিল। থ্রিলারের প্রতি আগের আগ্রহটা পাচ্ছিলাম না। মিনিমালিস্ট দিয়ে আবার সেই থ্রিলার শুরু করা। মাশুদুল হকের ভেন্ত্রিলোকুইস্ট বেশ বিখ্যাত। কিন্তু আমার এখনো পড়া হয় নি। তারই সিক্যুয়াল টাইপই এই মিনিমালিস্ট। কিন্তু পূর্বের বই না পড়া থাকলেও এটা পড়তে তেমন কোন সমস্যা হয় নি। যাই হোক এখন মিনিমালিস্টে আসি। গল্পের কাহিনী গড়ে উঠেছে রুমি আর মারুফকে ঘিরে। ২টা লকড রুম মিস্ট্রির সমাধান করতে যেয়ে জড়িয়ে পড়ে আরেক অদ্ভুত রহস্যে! প্রাচীন ধর্ম, ধর্মীয় স্থান, বেশ কিছু কন্ট্রোভারসি! এর সাথে রয়েছে একটি ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কিছু বিদ্ধংসী প্ল্যান। জড়িত আছে দুটো রহস্যাময় প্রভাবশালী রত্ন, কোহিনূর হীরা আর দরিয়া ই নূর!
লেখকের লেখার মধ্যে ড্যান ব্রাউনের প্রভাব সুস্পষ্ট। তার মতই বিভিন্ন কন্ট্রোভারশিয়াল ব্যাপার নিয়ে কাহিনী গড়ে তুলেছেন। পড়ার সময় প্রতিটা মুহূর্তেই এই কথাটা মাথায় ঘুরছিল। তবে গল্প বলার ধরণ চমৎকার। ঝড়ঝড়ে লেখনী। একঘেয়েমী আসে নি একটুও। শিক সম্প্রদায় নিয়ে বলা কথাগুলো ভাল ছিল। ঐতিহাসিক নানারকম তথ্য নিয়ে আসা হয়েছে। শুধুমাত্র ফিকশন হিসেবে এটিকে মূল্যায়ন করলে বেশ ভাল বই বলা চলে। কিন্তু তথ্যগুলোকে সত্য হিসেবে ভাবলে সমস্যা! বাংলাদেশে থ্রিলার সাহিত্য বলতে এখনো বাতিঘরের অনুবাদ গুলোই চলে আসে। নিজস্ব থ্রিলার সেভাবে গড়ে উঠে নি। সেক্ষেত্রে মিনিমালিস্ট বেশ চমৎকার একটি বই। ধর্ম এবং তার বিভিন্ন কন্ট্রোভারসি নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে , তাদের জন্য উপযুক্ত একটি বই এটি। :)
মিনিমালিস্ট পড়তে সামান্য কষ্ট হয়েছে । বইটার কাহিনী অনেক বিশাল মনে হলেও এটা সত্যি যে লেখক অনেক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছেন । এই বই পড়লে আপনি শিখ সম্প্রদায় সম্পর্কে ভালো জানতে পারবেন । পৃথিবীর সবাচাইতে দামী রত্ন সম্পর্কে একটা আইডিয়া আসবে। খ্রিষ্ট ধর্ম , বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম সম্পর্কেও জানতে পারবেন। একদম শেষের দিকে লেখক তাঁর আগের বই ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর এক চরিত্র উঠায় আনে, আসলে এই চরিত্র অনেক প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলো কিন্তু তাঁর পরিচয় শেষে জানা যায়। মোদ্দা কথা একটু ধৈর্য্য রাখতে হবে পড়ার সময় । তারা কয়টা দিবো ! দুইটা ? না দুইটা না তিনটাই দেই...অনেক কিছু জানছি। লেখকের প্রাপ্য এইটা।
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়ে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম,কিন্তু এই বই পড়ে লেখকের অন্ধভক্ত বনে গেছি।আগের বই এর প্রায় সব অপূর্ণতাই এই বইএ অনুপস্থিত।অনেক বড় এক প্লট নিয়ে এবার কাজ করেছেন লেখক,একের পর এক টুইস্ট দিয়েছেন,সাথে ছিল ব্রাউনিয় স্টাইলে বিশ্লেষণ,সব মিলিয়ে অলমোস্ট পারফেক্ট।এই বছর আমার পড়া সেরা থ্রিলার এখন পর্যন্ত।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ মিনিমালিস্ট ----------------- রচনা, প্রচ্ছদ এবং স্বত্ত্বঃ মাশুদুল হক প্রকাশনাঃ বাতিঘর প্রকাশনী ১ম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
পাঠ-প্রতিক্রিয়া, ঋভ্যু (Review এবং বাংলা বানানটি Shariful Hasan ভাই এর “ঋভু” উপন্যাস এর শিরোনাম দেখে মাথায় আসা) এবং পাঠ-পর্যালোচনার চাইতে অনেক শিথিল বা উদার। পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় বইয়ের বাইরের অনেক কিছু যোগ করার যেমন সুযোগ থাকে, কিছু বাদ দেয়ারও স্বাধীনতা আছে। ব্যাপারটা তো, প্রতিক্রিয়া। আর প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে পাঠকের মনো-দৈহিক, আর্থিক, স্থানিক, এমন আরও অনেক বিষয় জুড়ে যায়। পাঠ-পর্যালোচনায় সে সুযোগ কম, ঋভ্যুতে একেবারেই নেই।শেষের দুটো অনেকটাই ফর্মাল ফিল দেয় আমাকে আর ব্যক্তিগতভাবে আমি ফর্মাল ব্যাপার-স্যাপার এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি খুব। সেজন্যই “পাঠ-প্রতিক্রিয়া” টার্মটি বেছে নেয়া। ব্যাপারটা এমন, “আসেন তেঁতুল তলে পাটি পেতে গল্প করি বইটা নিয়ে।বিল্লাল, দু’কাপ চা আর ম্যাচটা দিয়ে যাস”।
লেখকের আগের বই “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” এর সিক্যুয়েল “মিনিমালিস্ট”। সে শুধু শুরুতে আর শেষ পাতায়। বাকী পুরো বইটাতে গরমা-গরম নতুন গল্প, নতুন প্লট, নতুন সব চরিত্র এবং নতুন করে কিছু জানাশোনা। না ভুল হলো, জানা-শোনার আগ্রহ জাগিয়ে তোলা। “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” এও এই ব্যাপারটা ছিল পুরোদমে। বই পড়তে পড়তে বারবার নেট ঘাঁটতে হয়েছে।একবার তো বই রেখে পুরো দিন শুধু বই এ উল্লেখিত ব্যাপার-স্যাপার নিয়েই কাটিয়েছি গুগল, উইকি আর ইউটিউবে।মাশুদুল হকের সিগনেচার স্টাইল এটাই। নিজে জানে, পাঠকের জানার আগ্রহ তৈরি করে দেয়। মারহাবা ভাইডি। এই স্টাইলের কারণেই মাশুদুলের লেখা আমার কাছে আর্কাইভাল ভ্যালু পায়।
মিনিমালিস্ট নিছক কোন থৃলার নয়। (নাজিম ভাই এর “১৯৫২” থেকে লাইনটি ধার করে, মডিফাই করা)
অপ্রচলিত (আমাদের দেশে) ধর্ম-বিশ্বাস এবং ধর্মের ইতিহাসে লেখকের ঝোঁক আছে বোঝা যায়।“মিনিমালিস্ট” এ এমন কয়েকটি ধর্মের (বা মতবাদের) আনা-গোণা আছে প্রকটভাবে এবং এসব ধর্মের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ব্যাক্তিমানুষের চরিত্রের ভাল-খারাপ দিকের যে মিথষ্ক্রিয়া ঘটানো হয়েছে, বইয়ের নাড়ী পোঁতা সেখানে।শাখা-প্রশাখা গল্পের হাত ধরে যখন কেন্দ্রে অাপনি পৌঁছুবেন, তখন গোড়া থেকে গল্পটা আবার দেখতে বাধ্য আপনি। এই মুন্সীয়ানা, গল্প বলার।
নন-লিনিয়ার স্টোরীটেলিং এ শুরুতে থই পাবেননা।খাপছাড়া লাগতে পারে। আমার লেগেছিলও কিন্��ু আমার মতোই ভরসা রাখুন লেখকের ওপর। সময়মতো ঠিকই আপনার সব প্রশ্নের ব্যাখ্যা সে হাজির করেছে, সব চরিত্রের পরিচয় এবং মোটিভ। ও, লেখক আমার ভার্সতো (ভার্সিটির) ছোট ভাই তাই আপনি করে না বলা। এ ব্যাপারে, তারও প্রবল নিষেধ আছে।
থৃলারের নিয়মে খুন, ক্রাইম দিয়ে গল্প শুরু। এ্যাকশান, চেজিংও আছে কিন্তু আপনি ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারবেন না, এসব কেবলই স্টার্টার। মেইনকোর্সটা খুন, চুরি, চেজিং এর চাইতে আরও ব্���াপক, আরও অনেক গভীর। গল্পের পরিধি সুবিস্তৃত। লেখনীতে সাবলীলতা আছে এবং কিছুক্ষণ পর পর হুক দিয়ে আর প্রিভিয়াস টুইস্ট রিভিল করে পাঠককে আটকে রাখার ক্ষমতা আছে। নিজের সৃষ্ট চরিত্র কে (নাকি নিজেকেই?) অন্য একটি চরিত্র দিয়ে ব্যাঙ্গ করার মতো রসবোধও আছে লেখকের। সব ব্যাপারে, রুমি’র শেষ মূহুর্তে রহস্যটা ফাঁস করার অভ্যাসকে মারুফ একসময় বলেই ফেললো, “গল্প-উপন্যাসের গোয়েন্দাদের মতো স্বভাব” হা হা হা।
বইয়ের প্রিভ্যিউ তে আপনি কাহিনীর কিছু পা��েন না, আমি সে স্বাধীনতা কি করে নিই? পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখবার সময়, স্পয়লার এড়াতে ব্যাক-ফ্ল্যাপের বাইরে কোন তথ্য আমি ব্যবাহার করিনা, কখনোই। “মিনিমালিস্ট” এর ব্যাক-ফ্ল্যাপে গল্পের ছিঁটে-ফোঁটা প্রকাশও নেই, তাই অামাকেও লিখতে হয়েছে খুব সাবধানে। তবে যদি “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” পড়ে থাকেন, “মিনিমালিস্ট” ও পড়েন। পাঠকের আস্থা অর্জন করেছে মাশুদুল হক কিন্তু শুধু সে কারণেই পড়তে বলছিনা, একদম শুরুতে বলে এসছিলাম- “লেখকের আগের বই “ভেন্ট্রিলোকুইস্ট” এর সিক্যুয়েল “মিনিমালিস্ট”। সে শুধু শুরুতে আর শেষ পাতায়।” ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর শেষটাও তো জানতে হবে, তাইনা?
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট দুই বছর আগে পড়েছিলাম।তখনকার সেই ভালোলাগা এই দুই বছরে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। মিনিমালিস্ট শুরুর আগে তাই ভয় ছিল, মিনিমালিস্ট প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বলতে হয় বইটা বেশ ভালো লেগেছে। গল্পের বর্ণনাভঙ্গি ভালো লেগেছে, জিনানের ডায়েরীর কিছু অধ্যায় ছিল অসাধারণ, আর মোস্ট ফেমাস মিনিমালিস্ট এর ব্যাপারটা- উপমহাদেশে এমন কিছু থাকতে পারে বা তা নিয়ে এদেশে এমন থ্রিলার লেখা হবে তা ভাবিনি। আর ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর প্লটকে তো এটার তুলনায় বাচ্চা মনে হইছে। তবে কিছু ব্যাপার খারাপ লাগছে।(স্পয়লার) ১। সাবমিটারদের গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো আর ওদের নিয়ে কিনা মাত্র দুই-এক পৃষ্ঠা লিখা হইছে। ২। নন লিনিয়ার স্টোরি টেলিং এ পুরো গল্পটা বেশ ভালো লাগলেও অনেক আগেই আমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল যে, সাবমিটাররা সব কিছুর পিছনে ভূমিকা রাখতেছে। তাই গল্পের শেষে রুমিরা যখন রহস্যের সমাধান করে, তখন আমরা পাঠকরা বসে বসে দেখা(পড়া) ছাড়া কিছু করার ছিলো না। তাই ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এ শেষে অপ্রত্যাশিতভভাবে সব রহস্য সমাধানে যে পরিমাণ আনন্দ পেয়েছিলাম তা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হয়েছি। ৩। ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এ ধর্মতত্ত্বের পাশাপ���শি স্থাপত্য, গণিত আর বিজ্ঞানের অনেক বিষয় ছিলো। সে তুলনায় এখানে নিউক্লিয়ার এনার্জির কথা যাও ছিলো, এত এত ধর্মের মধ্যে তা যেনো হারিয়ে গেছে। আশা করি নেক্সট বই এ সবকিছু ভালোভাবে ফিরে আসবে।।।
***** স্পয়লার থেকে সাবধান ! বইটা না পড়ে থাকলে রিভিউটাও পড়ার দরকার নেই! *****
ভেন্ট্রিলোকুইস্ট বইটাও খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু এই বইটার জন্য আমার ভালো লাগা অন্য রকম । মূলত এই বই টা পড়ার জন্যই ভেন্ট্রিলোকুইস্ট পড়েছিলাম ।
ড্যান ব্রাউন যারা পড়েছেন এবং যারা তার ভক্ত , তারা "মিনিমালিস্ট" পড়তে গেলেই বুঝতে পারবেন যে , এই বই এ ড্যান ব্রাউনের লেখার স্টাইল টা খুব স্পষ্ট ভাবেই ফুটে উঠেছে । অনেকটা মনেও হয়েছে যে , "Angels & Demons" এর মতই রহস্যের জট পেকে যাচ্ছে , আবার সেটা ধাপে ধাপে খুলেও গেছে । অনেকে লেখার মধ্যে ড্যান ব্রাউন এর স্টাইল পেয়ে হয়ত হতাশ হয়েছেন কিঞ্চিৎ । কিন্তু আমার কাছে বিষয়টাকে ইতিবাচক মনে হয়েছে । "Angels & Demons" , "The Da Vinci Code " পড়তে পড়তে আমার মনে হত , "ইশ ! বাংলায় কেন এমন রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার হয় না ! " লেখক আমার সেই আক্ষেপ টা দূর করেছেন । এই বাংলাদেশ থেকে শুরু করে , ভারত , পাঞ্জাব , কখন ও বা পাকিস্তান , সত্যি ই , এদের এক সুতোয় গেঁথে, এমন একটা থ্রিলার ফেঁদে বসা - কয়জন ই বা পারে ! লেখক মাশুদুল হককে অনেক ধন্যবাদ , আর শুভ কামনা রইল সামনে এগিয়ে যাবার জন্য । লেখক একেবারেই নবীন । সামনে উনি আরো সুন্দর , রোমহর্ষক , রোমাঞ্চকর - কাহিনি , নিজের " স্টাইল" এ আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন- এই প্রত্যাশাই রইল ।
অ-সা-ধা-র-ণ!!! বইটা শেষ করার পর ঠিক এই অনুভূতিটাই হচ্ছিলো। বলা হয়েছিলো মিনিমালিস্ট বইটি লেখকের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এর সিকুয়াল। কিন্তু তা শুধু প্রথম আর শেষ অধ্যায় ছাড়া বোঝার কোন উপায়ই নেই! ইতিহাস, ধর্ম, দর্শন, রহস্য কি ছিলো না বইটিতে? কিছুক্ষণ পরপর নেট ঘাটতে হচ্ছিলো অনেক ব্যাপার জানতেই। নন লিনিয়ার স্টোরি টেলিং ব্যাপারটা অনেকের কাছে খাপছাড়া লাগলেও ব্যক্তিগত ভাবে আমার নিজের পছন্দ। পরে ছেঁড়া সুতো গুলো জোড়া লাগতে থাকলে চমৎকার একটা ভালো লাগা কাজ করে। প্রচুর ইনফরমেশন, প্রচুর টুইস্ট, পাতায় পাতায় উত্তেজনা সব মিলিয়ে দারুণ লেগেছিলো পুরো জার্নিটা। লেখকের থ্রিলার বই গুলোতে ড্যান ব্রাউনের ভাব প্রবল ভাবে লক্ষ্য করা যায়। ব্যাপারটা তার ব্যক্তিগত ভালো লাগা থেকেও হতে পারে।
ব্যক্তিগত আবে আমার নিজের ভেন্ট্রিলোকুইস্ট থেকে মিনিলাসিট বেশি ভালো লেগেছে।পাঠক, যদি রহস্যের এক দারুণ রোলার কোস্টারে ঘুরে আসতে চান তাহলে দ্রুতো পড়ে ফেলতে হবে মিনিমালিস্ট! Happy Reading! :D