শরীর ও মন
হাঁটু ব্যথার রিজেনারেটিভ থেরাপি
শামসুল হক নাদিম
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শনিবারবয়স্ক মানুষের মধ্যে হাঁটু ব্যথা প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দেখতে পাওয়া যায়। এর বিভিন্ন কারণের মধ্যে প্রধান কারণ অস্টিও-আর্থাইটিস বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়। আমাদের হাঁটুর জয়েন্টে একধরনের নরম এবং মসৃণ আবরণ বা কার্টিলেজ দিয়ে ঢাকা থাকে। এই কার্টিলেজ যখন ক্ষয় হয়ে অমসৃণ আকার ধারণ করে তখন জয়েন্ট নড়াচড়ায় ব্যথা অনুভূত হয়, অনেক সময় ফুলে যায়। এটিই অস্টিওআর্থাইটিস বা হাঁটুর এক প্রকার বাত।
আমি যদি আরও সহজভাবে বলি, হাঁটুর জয়েন্টে যে কুরকুরে বা কচকচ হাড্ডির মতো প্রলেপ থাকে সেটা ক্ষয় হয়ে যদি জয়েন্টে থাকা ফ্লুইডের সঙ্গে মিশে যায়, তখন ব্যথা অনুভূত হয় সেটাকেই অস্টিওআর্থাইটিস বা গিঁটে বাত বলে।
হাঁটুর অস্টিওআর্থাইটিস কেন হয়?
* হাঁটুর অস্টিওআর্থাইটিসের অন্যতম প্রধান কারণ বয়স বৃদ্ধি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্টিলেজে পানির পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমতে থাকে। সেজন্য তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ ক্ষয় হয়। ফলে অস্টিওআর্থাইটিস হতে পারে।
* হাঁটু আমাদের শরীরের ওজন বহন করে। ধরুন আপনার শরীরের ওজন যদি ১০০ কেজি হয় এবং আপনার বয়স যদি ৫০ কিংবা ৬০ বছর হয় তাহলে প্রায় ২০-৩০ বছর যাবৎ হাঁটু তা বহন করছে। তাই অতিরিক্ত দৈহিক ওজন হাঁটুতে বেশি চাপ সৃষ্টি করে; যার ফলে হাঁটুতে ক্ষয় বেশি হয়।
* আঘাত বা জয়েন্টে যদি কোনো ইনজুরি হয় সেখান থেকেও কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে এমনটি হতে পারে।
* হাঁটুর ভেতরে যে তরল পদার্থ বা সায়নোভিয়াল ফ্লোয়িড কমে গেলে জয়েন্ট নড়াচড়া করতে ঘর্ষণ হয় অর্থাৎ জয়েন্টে স্পেস কমে যায় তখনো অস্টিওআর্থাইটিস হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন যে আপনার অস্টিওআর্থাইটিস হয়েছে?
* হাঁটুতে ব্যথা হবে, হাঁটু ফুলে যাবে এবং হাঁটুতে হাত রাখলে গরম অনুভূত হবে।
* হাঁটু ভাঁজ করতে কষ্ট হবে বা জয়েন্ট জমে আছে এমন বোধ হবে।
* হাঁটু গেড়ে নিচে বসতে সমস্যা হবে এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হবে।
* হাঁটুর জয়েন্টের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং কখনো কখনো হাঁটুর ভেতর নড়াচড়ায় কটকট শব্দ করবে।
হাঁটুতে এই জাতীয় সমস্যা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধের পাশাপাশি লাইফস্টাইল মডিফিকেশন, নিয়মমাফিক চলাফেরা এবং সঠিক ফিজিওথেরাপি নিলে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রাম নেয়ার পাশাপাশি ওষুধ, ফিজিওথেরাপি যেমন- ম্যানিয়াল থেরাপি বা থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, ম্যানুপুলেশন থেরাপি, বিভিন্ন ধরনের ইলেক্টোথেরাপি যেমন- লেজার, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি এবং অন্যান্য যেসব ইলেক্টোথেরাপি আছে, এমনকি স্ট্যারোয়েড ইনজেকশন দেয়ার পরেও যদি আশানুরূপ উপকার না আসে, তাদের জন্য রিজেনারেটিভ থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর। যা এফডিএ (ঋউঅ) এপ্রুভড এবং সম্পূর্ণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত।
সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে দীর্ঘমেয়াদি হাঁটু ব্যথা বা অস্টিওআর্থাইটিস, পায়ের গোড়ালির ব্যথা এবং ফ্রোজেন সোল্ডার বা কাঁধের জয়েন্টে ব্যথার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব। আমরা দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ব্যথার জন্য ফোকা��ড এবং রেডিয়াল শকওয়েভ থেরাপি, টেকার রেডিওফ্রিকোয়েন্সি এবং পিআরপি বা প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।
চিকিৎসার এই পদ্ধতিতে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে শরীরের নিজস্ব পুনর্গঠন পদ্ধতি অর্থাৎ এনজিওজেনেসিস মানে নিউ ব্লাড ভেসেল ফরমেশন ও নিউরোজেনেসিস মানে নিউ নার্ভ সেল রিপেয়ার এবং রিডিউস ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ, এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে নতুন টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত হওয়া সম্ভব।
এই চিকিৎসার জন্য সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। কিন্তু চিকিৎসার পরেই রোগী তার নিজের কাজে বা বাড়ি ফিরে যেতে পারে। তিন সপ্তাহ অথবা এক মাস পর পর তিন থেকে চার বার এই চিকিৎসা নিতে হয় সর্বমোট। একজন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক বা রিজেনারেটিভ থেরাপি প্রাক্টিশনার এই চিকিৎসা প্রদান করেন।
এ ছাড়াও সঠিক খাদ্যাভাস, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ও লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করে এর সঠিক সমাধান সম্ভব।
লেখক: কনসালটেন্ট, রিজেনারেটিভ থেরাপি প্র্যাক্টিশনার। এডভান্সড সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ থেরাপি-২০৬৬, এভারকেয়ার হসপিটাল, লিংক রোড, বসুন্ধরা, ঢাকা-১২২৯। মোবাইল: ০১৯৭৭৬৫৬২৩৭