ঢাকা, ১৩ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

কলোরেক্টাল ক্যান্সার না অন্যরোগ

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১১ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার

উপসর্গ ও কিছু মিল থাকার কারণে কোলন ক্যান্সার আইবিএস নিয়ে রোগীরা গুলিয়ে ফেলেন। তবে রোগ দুটো যেহেতু পরিপাকতন্ত্র ও কলোরেকটাল সংক্রান্ত তাই একটু বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন। পার্থক্যগত কারণের দিক দিয়ে রোগ দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা। আইবিএস মনে করে কিছু হেলাফেলায় মারাত্মক জটিলতা হতে পারে।
কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে পায়খানার সঙ্গে রক্ত কিংবা পেটে ব্যথা। অধিকাংশ রোগী প্রথম এই ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। মলত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন অর্থাৎ কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য সঙ্গে দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এগুলোও কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ। 
অন্যদিকে আইবিএস’র (ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম) রোগীরা দীর্ঘমেয়াদি পেটের সমস্যায় ভোগে অর্থাৎ বদহজম, আমাশয় তাদের চিরজীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। পেটে হঠাৎ করে মোচড় বা কামড় দেবে এবং সঙ্গে সঙ্গে পায়খানায় যেতে হবে। এমনও ব্যক্তি আছে যার দিনে চার-পাঁচবার বাথরুমে যাওয়া লাগে। আরও পার্থক্য হলো- এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং অন্যটি মরণঘাতী রোগ। দ্রুত কলোনস্কপি করে নির্ধারণ করা সম্ভব কি রোগ হয়েছে। 
সতর্কতা: 
‘কলোরেক্টাল’ ক্যান্সারের শুরুটা হয় অন্ত্র কিংবা মলাশয়ে।
‘লার্জ ইন্টেসটাইন’,
‘লার্জ বাওয়েল’ দুটোই হলো বৃহদান্ত্রের আরেক নাম, যাকে আবার ‘কোলন’ নামেই চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে বৃহদান্ত্রের শেষপ্রান্ত থেকে শুরু হয়ে পায়ুপথে গিয়ে শেষ হওয়া ‘চেম্বার’টি হলো ‘রেকটাম’। 
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন কিংবা রেকটাময়ের ভেতরের দেয়ালে মাংসের দলা তৈরি হয় যাকে বলা হয় ‘পলিপস’। সময়ের পরিক্রমায় ‘পলিপস’ পরিণত হয় ক্যান্সার কোষে। বংশগত কারণ, খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, ধূমপান, ‘ইনফ্লামাটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিএস)’ ইত্যাদি এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। নারী-পুরুষ উভয়েরই এই ক্যান্সার হয়ে থাকে। 
উপসর্গ:
* অন্ত্রের কার্যক্রমের গুরুতর পরিবর্তন। বেশির ভাগ সময় ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা। সাধারণ সময়ের
চাইতে মলের আকার পরিবর্তন বা খুবই চিকন মলত্যাগ। 
* পায়ুপথে রক্ত, রক্তমিশ্রিত মলত্যাগ। 
* সবসময় পেটে বা অন্ত্রে অস্বস্তি। যেমন- খিঁচুনি, গ্যাস ও ব্যথা। 
* মলত্যাগের পরেও সব সময় অনুভূত হওয়া যে ভালোমতো পেট খালি হয়নি। 
* দুর্বলতা ও কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমা। 
কোলন ক্যান্সার নির্ণয় কলোনস্কপি ও বায়োপসী করা প্রয়োজন। 
চিকিৎসা:
ক্যান্সার কোনো ‘স্টেজ’-এ আছে তার ওপর নির্ভর করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘টিউমার’ অপসারণ, ‘রেডিয়েশন থেরাপি’, ‘কেমোথেরাপি’ ইত্যাদি চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার হলো প্রথম চিকিৎসা। অপারেশনের আগে বা পরে অনেক সময় রেডিও কেমো থেরাপির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। 
চিকিৎসা পদ্ধতি 
কী হবে তা রোগটির স্টেজ বা পর্যায় ও অন্ত্রের কোন অংশে অব���্থিত তার উপর নির্ভর করে। প্রয়োজনে সাময়িক বা স্থায়ী স্টেমা (পেটের মধ্যদিয়ে অন্ত্র বের করে দেয়া) করতে হতে পারে। 
প্রতিরোধ: 
কোলন ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। শাক-সবজি, শষ্যজাতীয় 
খাবার, ভিটামিন, খনিজ, ভোজ্য আঁশ এবং ‘অ্যান্টি-
অক্সিডেন্ট’ থাকে এমন খাদ্যাভ্যাস বেছে নিতে হবে। এই উপাদানগুলো অন্ত্রের সুস্বাস’্য বা ভালো অবস’া বজায় রা
খতে অত্যন্ত কার্যকর। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। শারীরিক ওজন একটা স্বাস’্যকর মাত্রায় থাকতে হবে। 
বংশে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী থাকলে পরিবারের সকল সদস্যের উচিত বয়স ৪৫ পেরোলে কিংবা তার আগে
থেকেই নিয়মিত কলোনস্কপি পরীক্ষা করানো। তবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রাচুর্য, অতিরিক্ত ওজন, অলস জীবনাযাত্রা ইত্যাদির কারণে এই রোগ আজ ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ৪০ বছরের কম বয়সীদের মাঝেও আজকাল এই রোগ দেখা দিচ্ছে এবং একবার অস্ত্রোপচার, ‘কেমোথেরাপি’ ও ‘রেডিয়েশন থেরাপি’র মাধ্যমে সুস্থ হওয়ার পর আবার তা ফিরে আসছে। 
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গ
বন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে.কমপ্লেক্স, লিফ্‌ট-৪, ঢাকা। ফোন: ০১৭১২৯৬৫০০৯

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status