বিষয়বস্তুতে চলুন

তারামন বিবি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মোছা: তারামন বেগম থেকে পুনর্নির্দেশিত)
তারামন বিবি
জন্ম১৯৫৭
মৃত্যু১ ডিসেম্বর ২০১৮(2018-12-01) (বয়স ৬০–৬১)[]
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বপাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
পেশামুক্তিযোদ্ধা
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
দাম্পত্য সঙ্গীআবদুল মজিদ
সন্তান২ জন

তারামন বেগম (১৯৫৭ - ১ ডিসেম্বর ২০১৮; যিনি তারামন বিবি নামে অধিক পরিচিত) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[][] ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪। গেজেটে নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম।[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি।[]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

[সম্পাদনা]

তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন।[][] তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।[] যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তিতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান।[]

পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[]

স্বাধীনতা পরবর্তী

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন।[][] কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।[] ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান।[] এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।

এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।[] সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন বেগম খালেদা জিয়ার সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন।[] তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামক একটি বই রয়েছে। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন তারামন বিবি। []

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ।[] এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থায় ভুগছিলেন। ১লা ডিসেম্বর ২০১৮ সালে তিনি নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।[১০] রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।[১০]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "তারামন বিবি আর নেই"। বাংলানিউজ২৪। ১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল|আর্কাইভের-ইউআরএল= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা।  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |death_place= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য);
  2. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"archive.prothom-alo.com। ২০১২-০৩-০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "'বীর প্রতীক' তারামন বিবি কেমন আছেন?"আমাদের সময়। ২০১৬-১২-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "ছদ্মবেশী নানা ভূমিকায় বীর প্রতীক তারামন বিবি - 12.02.2011"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  5. সময় টেলিভিশন। "বীরপ্রতীক তারামন বিবিকে সিএমএইচে নিয়ে আসা হচ্ছে"somoynews.tv। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  6. arthosuchak (২০১৬-০২-২১)। "সিএমএইচে বীর প্রতীক তারামন বিবি"ArthoSuchak। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  7. "অসুস্থ তারামন বিবিকে হেলিকপ্টারে ঢাকা আনা হচ্ছে"আরটিভি অনলাইন। ২০১৭-০৮-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  8. bhorerkagoj.net (২০১৬-০২-১৬)। "তারামন বিবি হাসপাতালে"ভোরের কাগজ অনলাইন। ২০১৮-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  9. "বীর প্রতীক তারামন বিবি হাসপাতালে"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০০৯-০৫-০৫। ২০১৮-০৬-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  10. "বীরপ্রতীক তারামন বিবির চিরবিদায়"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৮-১২-০১। ২০১৮-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-০১