ইসলামি পারিবারিক আইনশাস্ত্র
ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র) |
---|
এর একটি ধারাবাহিক অংশ |
ইসলামিক স্টাডিজ |
ইসলামী পারিবারিক আইনশাস্ত্র (আরবি: فقه الأسرة الإسلامية, ফিকাহ আল-উসরাত আল-ইসলামিয়া) বা ইসলামী পারিবারিক আইন বা মুসলিম পারিবারিক আইন হল মুসলিম পরিবারকে রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত আইন ও বিধিবিধানের ফিকহ, যা কুরআন, হাদিস, মুসলিম ফকীহগণের ফতোয়া ও মুসলমানদের ইজমা হতে গৃহীত।[১][২][৩] এতে বয়ঃপ্রাপ্তি, বৈবাহিক, যৌন, শিশু লালন-পালন, দত্তক ও দুগ্ধদান, উত্তরাধিকার, ফৌজদারি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয় রয়েছে।[৪] এছাড়াও এতে মূলত পালিত সম্পর্ক, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, ইলা, লিয়ান, রাজাহ, খুল', জিহার, ইদ্দত, শিশুদের মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।[১][৫] রাজনৈতিক দিক থেকে, মুসলিম পারিবারিক আইন হল বিশ্বের প্রায় প্রতিটি জাতীয় সংবিধানের, বিশেষত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির সংবিধানের ধর্মীয় (মুসলিম) আইনের একটি অংশ।
বয়ঃপ্রাপ্তি
[সম্পাদনা]ইসলামী আইনগত পরিভাষায়, বালিগ বা বুলুগ (আরবি: بالغ অথবা بُلوغ,অর্থঃ পরিপক্কতা) বা মুকাল্লাফ (আরবি তাকলিফ হতে, অর্থ দ্বায়িত্ববান) বা মুরাহিক (আরবি রাহাক হতে, অর্থঃ ভুল করা, মন্দকাজে তাড়াহুড়া করা) বা মুহতালিম (আরবি ইহতিলাম হতে, অর্থঃ বয়প্রাপ্তি) বলতে সে ব্যক্তিকে বোঝায় যে বয়ঃপ্রাপ্তি বা বয়ঃসন্ধিতে পৌছেছে, এবং ইসলামী আইনের অধীনে সে পূর্ণ দ্বায়িত্ববান।[৬][৭][৮]
ইসলামে মানবজীবনকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়, প্রথমটি হল বয়ঃসন্ধি বা বুলুগিয়াতের আগে বা শিশুকাল, যখন মানুষ নিষ্পাপ গণ্য হয় এবং পরবর্তীটি বুলুগিয়াতের পরে বা প্রাপ্তবয়স্ক, যখন থেকে মানুষের উপর ইসলামী বিধান পূর্ণরূপে কার্যকর হয় ও ইহকালীন পরকালীন বিচারযোগ্য হয়। কোন মানুষ বালিগ হবার পূর্বে মারা গেলে স্বর্গবাসী বলে গণ্য হয়, এবং বালিগ দশা শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ শিশুকালে কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি ও অপরাধ হাদীস অনুযায়ী অধর্তব্য হিসেবে নেওয়া হয়।।[৮][৯]
আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তিন ধরনের লোকের উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না জাগ্রত হয়, (২) নাবালেগ, যতক্ষণ না সে বালেগ হয়, (৩) পাগল, যতক্ষণ না জ্ঞানসম্পন্ন হয়।
— আবু দাউদ, ৪৪০৩, তিরমিযী ১৪২৩, সুনানে নাসায়ী ৩৪৬২,ইবনে মাজাহ ২০৪১[৮]
ইসলামী ফিকহশাস্ত্রবিদগণের মতে, বালিগ অবস্থার প্রাক্কালে অর্থাৎ সাত বছর থেকে (তামঈজ) এবং বালিগ দশার মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের ইরাদা বা নিয়ত বা ক্বাসদ বা স্বাধীন ইচ্ছা, আকল বা ভুলসঠিক বিচারের ক্ষমতা এবং হিম্মত বা সাহসিকতা তৈরি হয়, এবং বালিগ দশা শেষ হবার পর (তাক্বলিব) তার আকল অর্থাৎ প্রজ্ঞা ও বিচারবুদ্ধি পরিপূর্ণতা লাভ করে। তাই শিশুকাল অর্থাৎ সাত বছর বয়সের আগে থেকে শিশুকে কিতাব বা জ্ঞান, আদব বা শিষ্টাচার, ইবাদত বা উপাসনা ও তাহারাত বা পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা দেওয়া হয়, কারণ এসময় শিশু সহজে শিক্ষা গ্রহণের উপযুক্ত থাকে।[৮][৯][১০][১১]
বিবাহ
[সম্পাদনা]বিবাহের আরবী শব্দ হলো নিকাহ। নিকাহ এর শাব্দিক অর্থ হলো, একত্রিত হওয়া, নারী পুরুষ মিলিত হওয়া। পারিভাষিক অর্থে নিকাহ বা বিবাহ বলা হয়। ইসলামী শরীয়াহ আইন অনুযায়ী, বিবাহ হল একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে নিষ্পন্ন বৈধ বন্ধন ও সামাজিক চুক্তি । ইসলামে বিবাহ হল একটি সুন্নাহ বা মুহাম্মাদ এর আদর্শ এবং ইসলামে বিবাহ করার জন্য অত্যন্ত জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।[১২][১৩] পাশাপাশি, ইসলামে সন্ন্যাসজীবন এবং কৌমার্যেরও কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে।[১৩] একজন ব্যক্তি তখনই বিবাহের বয়সী হবে, যখন সে মানসিক, দৈহিক ও আর্থিকভাবে বৈবাহিক জীবন নির্বাহ করতে সমর্থ হবে। বিশেষ শর্তসাপেক্ষে পুরুষের বহুবিবাহের জন্য ইসলামে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে নারীর বহুবিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইসলামে, বিবাহ (আরবি: نِكَاح, প্রতিবর্ণীকৃত: নিকাহ) হল বিবাহযোগ্য দুইজন নারী ও পুরুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রনয়নের বৈধ আইনি চুক্তি ও তার স্বীকারোক্তি।[১৪][১৫] ইসলামে কনে তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী বিয়েতে মত বা অমত দিতে পারে| একটি আনুষ্ঠানিক এবং দৃঢ় বৈবাহিক চুক্তিকে ইসলামে বিবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা বর ও কনের পারষ্পারিক অধিকার ও কর্তব্যের সীমারেখা নির্ধারণ করে| বিয়েতে অবশ্যই দুজন মুসলিম স্বাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে| ইসলামে বিয়ে হল একটি সুন্নাহ বা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ এবং ইসলামে বিয়ে করার জন্য অত্যন্ত জোরালোভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।[১২][১৩]বিয়ে ইসলামী বিবাহের মৌলিক বিধিবিধান অনুযায়ী সম্পন্ন করতে হয়। পাশাপাশি, ইসলামে সন্ন্যাসজীবন এবং কৌমার্যেরও কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে।[১৩] ইসলামে তালাক অপছন্দনীয় হলেও এর অনুমতি আছে এবং তা যে কোন পক্ষ হতে দেওয়া যেতে পারে অর্থাৎ ইসলামে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তালাক দেওয়ার অধিকার রাখে।
যৌন
[সম্পাদনা]ইসলামী যৌন আইনশাস্ত্র বা যৌনতা বিষয়ক ফিকহ হল ইসলামী পারিবারিক আইনশাস্ত্র[১৬][১৭], ইসলামী পরিচ্ছন্নতা বিধিমালা[১৮] ও ইসলামী ফৌজদারি বিধিমালার[১৯][২০] একটি অংশ, এর মাধ্যমে সেসব ইসলামী অনুশাসন বোঝায় যার দ্বারা মুসলিমদের যৌনতা ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রিত হবে।[২১][২২][২৩] এইসব অনুশাসন বহির্ভূত সকল প্রকার যৌনকর্ম ইসলামী মতে নিষিদ্ধ বা হারাম। মানব জীবনের যৌন চাহিদা ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত কিন্তু যৌনাচারের পন্থা সম্পর্কে রয়েছে অনুশাসন।[২৪][২৫]
মানুষের বিবিধ যৌনাচার অনুমোদনযোগ্য কিনা তা দুটি প্রপঞ্চের ওপর নির্ভর করে। প্রথমত: যৌনাচারের মূল উদ্দেশ্য বংশবৃদ্ধি এবং দ্বিতীয়ত: নারী ও পুরুষ কেবল রীতিসিদ্ধ উপায়ে বিয়ের মাধ্যমে যৌনাচারের প্রাধিকার অর্জন করে। ইসলামে যৌনতা বিষয়ক নিয়মাবলি ইসলামী প্রধান ধর্মগ্রন্থ কুরআন, ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সঃ)-এর বাণী ও কর্ম যা হাদীস নামে পরিচিত, ইসলামিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক প্রদত্ত ফতোয়া প্রভৃতিতে ব্যাপক ও বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, যা নারী ও পুরুষের মাঝে নিয়মতান্ত্রিক যৌন সম্পর্কের মধ্যে সীমিত।[২৪]। যদিও অধিকাংশ ঐতিহ্য সন্ন্যাসদশা ও কৌমার্যকে নিরুৎসাহিত করে থাকে[১৩], তবু সকল ঐতিহ্যেই লিঙ্গসমূহের মধ্যে যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর সতীত্ব ও শালীনতাকে উৎসাহিত করে, যা এই বিষয়টিকে তুলে ধরে যে, তাদের ইসলাম স্বীকৃত জৈবিক সম্পর্ক জীবনের জন্য একটি পরিবেষ্টনীস্বরূপ এবং যৌন কর্মকাণ্ড থেকেও অনেক বিস্তৃত, যা বিবাহের জন্য ব্যাপকভাবে সংরক্ষিত। বিবাহের বাইরে লিঙ্গ পার্থক্যকরণ ও শালীনতার এই চেতনা ইসলামের বর্তমান পরিচিত বৈশিষ্ট্যের মাঝে দেখতে পাওয়া যায়, যেমন ইসলামী পোশাকের ব্যাখ্যা এবং লিঙ্গ বিভাজনের মূল্যবোধসমুহ।
ইসলামে বিবাহবহির্ভূত যৌনতার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রবল এবং বৈবাহিক যৌনতা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। [২৪][২৫] ভালোবাসা ও নৈকট্যের মহৎ উপকারিতা হিসেবে কুরআন ও হাদিসে বিবাহ ও উপপত্নীত্ব নামক অনুমোদিত যৌন সম্পর্কসমূহ বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে। এমনকি বিয়ের পরেও কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছেঃ কোন পুরুষ তার স্ত্রীর রজঃস্রাবকালীন সময়ে এবং সন্তানপ্রসবের পর একটি নির্ধারিত সময়কালে তার সাথে সঙ্গম করতে পারবে না। স্ত্রীর পায়ূতে লিঙ্গ প্রবেশকরণ তার জন্য কঠিন পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রজননশীল ধর্ম হওয়ার খাতিরে, ইসলাম বৈবাহিক যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে বর্ধনশীল বংশবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। গর্ভপাত (গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ব্যতিরেকে) এবং সমকামিতার মত কর্মকাণ্ড ও আচরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অস্থায়ী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি গ্রহণ অনুমোদিত।
ফৌজদারি
[সম্পাদনা]ইসলামি অপরাধ আইনশাস্ত্র বা ইসলামী ফৌজদারি বিধিমালা (আরবি: فقه العقوبات) হলো শরিয়া অনুসারে ফৌজদারি আইন। কঠোর ভাবে বলতে গেলে, ইসলামী আইনের "ফৌজদারি আইন" এর আলাদা স্বতন্ত্র সংস্থা নেই। এটি অপরাধের উপর নির্ভর করে অপরাধকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করে - হুদুদ ("ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধ",[২৬] যার শাস্তি কুরআন এবং হাদিস এর মধ্যে স্থির রয়েছে; কিসাস (এমন ব্যক্তি বা পরিবারের বিরুদ্ধে অপরাধ যার শাস্তি কুরআন ও হাদিসগুলিতে সমান প্রতিশোধ গ্রহণ); এবং তাজির (অপরাধ যাদের কুরআন ও হাদীসগুলিতে নির্দিষ্ট করা হয়নি, এবং এটি শাসক বা কাদি, অর্থাৎ বিচারকের বিবেচনার ভিত্তিতে ছেড়ে যায়।[২৭][২৮][২৯] কেউ কেউ 'সিয়াশাহ' (চতুর্থ বিভাগ) (সরকারের বিরুদ্ধে অপরাধ) যুক্ত করে,[৩০] অন্যরা এটিকে হ্যাড বা তাজির অপরাধের অংশ হিসাবে বিবেচনা করে।[৩১][৩২]
যিনা (زِنَاء) বা জিনা (زِنًى বা زِنًا) হল অবিবাহিত দুইজন মানুষের মধ্যে যৌনক্রিয়া। ব্যুৎপত্তিগতভাবে: যিনা হল ইসলামী বৈবাহিক নিয়ম অনুযায়ী পরস্পর অবিবাহিত একাধিক মুসলিমের মাঝে অবৈধ যৌন সম্পর্ক বিষয়ক একটি ইসলামী নিষেধাজ্ঞা।[৩৩] বিবাহোত্তর যৌনতা এবং বিবাহপূর্ব যৌনতা,[৩৪][৩৫] যেমনঃ পরকীয়া (পারস্পারিক সম্মতিতে বিবাহিতের অবৈবাহিক যৌন সম্পর্ক),[৩৬][৩৭] ব্যভিচার (দুজন অবিবাহিতের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌনসঙ্গম)[৩৮][৩৯], পতিতাবৃত্তি (অর্থের বিনিময়ে যৌনসঙ্গম), সমকামিতা (সমলিঙ্গীয় ব্যক্তিদ্বয়ের পারস্পারিক সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক)[৪০], সডোমি (পায়ুসঙ্গম ও মুখমৈথুন), অজাচার (পরিবারের সদস্য বা অবিবাহযোগ্য রক্তসম্পর্কের ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম), পশুকামিতা (অমানব পশুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম) এবং ধর্ষণ (জোরপূর্বক অবৈবাহিক যৌনসঙ্গম)[৪১] এর অন্তর্ভুক্ত। যিনা কবিরা গুনাহ যা তাওবাহ ব্যাতিরেকে মাফ হয় না। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, ”লা তাকরাবাল যিনা” যার অর্থ “তোমরা যিনার ধারে-কাছেও যেও না।”
শিশু
[সম্পাদনা]দত্তক ও দুগ্ধদান
[সম্পাদনা]তালাক
[সম্পাদনা]তালাক শব্দের অর্থ 'বিচ্ছিন্ন', ত্যাগ করা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। স্বামী সর্বাবস্থায় তালাক দিতে পারেন। স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের সময় এর লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়।পরিভাষায় তালাক অর্থ "বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া "স্বামী তার স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।
জীবনে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমণ্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়েপড়ে তিক্ত,বিষক্ত,একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা; ঠিক তখনই এই চূড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ��টাও যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন বিবাহ নামকছে, সেখানে তালাক ঘোষণার কোন পদ্ধতি বলা হয়নি। মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- "কোন পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাহিলে তাহাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোন পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দিবেন" অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। তাই শরীয়ত প্রবর্তিত তালাক সংক্রান্ত বিধানাবলি ভালভাবে জানা ও বুঝা খুবই জরুরী। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী।
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]ইসলামী মালিকানা আইনশাস্ত্র হল ইসলামী আইনশাস্ত্র বা ফিকহের একটি অংশ যা উত্তরাধিকার সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[৪২]
উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে সূরা নিসায় বলা হয়েছে,
“ | "তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদেরকে এই বিধান দিচ্ছেন: পুরুষের অংশ দুই নারীর সমান হবে। যদি দুই জনের বেশি নারী হয়, তাহলে সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দেয়া হবে। আর একজন নারী হলে মোট সম্পদের অর্ধেক পাবে। মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে, তাঁর পিতা-মাতা প্রত্যেকে ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে। আর সে যদি নিঃসন্তান হয়, পিতা-মাতাই হয় উত্তরাধিকারী, তাহলে মাকে দেয়া হবে তিন ভাগের একভাগ। মৃতের ভাই বোন থাকলে মা সেই ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। এসব বণ্টন মৃতের কোনো অসীয়ত থাকলে, তা এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করার পরে। তোমাদের পিতা-মাতা এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততী, তোমাদের জানা নাই এঁদের মধ্যে তোমাদের কল্যাণের দিক দিয়ে কারা ঘনিষ্টতর। এই বণ্টন ব্যবস্থা ফরজ করে দেয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ তো সব কিছুর ব্যপারেই পূর্ণ অবহিত এবং তিনিই হচ্ছেন বিজ্ঞ, পরম কুশলী। আর তোমাদের স্ত্রীরা যা কিছু রেখে গেছে, তার অর্ধেক তোমরা পাবে যদি তাঁরা নিঃসন্তান হয়। সন্তান থাকলে তোমরা পাবে ত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের একভাগ। তাঁদের করে যাওয়া অসীয়ত এবং দেনা থাকলে, তা সব আদায়ের পর। আর তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের তাঁরা পাবে চারভাগের একভাগ, যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। সন্তান থাকলে তাঁরা পাবে আট ভাগের একভাগ। তাও কার্যকর হবে তোমাদের কোনো অসীয়ত এবং দেনা থাকলে তা আদায়ের পর। আর যদি এমন কোনো পুরুষ অথবা স্ত্রীলোক, যাঁর না আছে কোনো সন্তান, আর না আছে পিতা-মাতা। আছে এক ভাই অথবা এক বোন তাহলে তাঁদের প্রত্যেকে পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ। আর ভাই বোন যদি দুই এর বেশি হয়, তাহলে তাঁরা সবাই মিলে মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ পাবে। তাও কোনো অসীয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায়ের পর। কোনোভাবেই কারো কোনো ক্ষতি করা বা হতে দেয়া যাবে না। (এসব কিছু) আল্লাহর দেয়া উপদেশ মালা। আর আল্লাহ সব কিছুর ব্যাপারেই পূর্ণ অবহিত এবং পরম ধৈর্য্যশীল।"৪:১১-১২[৪৩] | ” |
এবং
“ | "তাঁরা আপনার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন, নিঃসন্তান ও পিতৃ-মাতৃহীন মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে। যদি এমন ব্যক্তি মারা যায়, যাঁর কোনো সন্তান নেই, আছে এক বোন। তাহলে সে পাবে সম্পদের অর্ধেক আর যদি বোন মারা যায় তাহলে ভাই পুরো সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। মৃতের উত্তরাধিকারী যদি দুই বোন হয়, তাহলে ত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ তাঁরা পাবে। আর যদি কয়েকজন ভাই-বোন হয়, তাহলে পুরুষেরা পাবে দুই ভাগ, আর নারীরা পাবে এক ভাগ। আল্লাহ স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তোমাদের জন্য যেন তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে না যাও। প্রত্যেকটি জিনিস সম্পর্কেই আল্লাহ পূর্ণ অবহিত।"৪:১৭৬[৪৩] | ” |
আয়াতত্রয়ীর বর্ণনা মতে, ত্যক্ত সম্পত্তির বণ্টনের বেলায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দুজনেই সমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে। তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ এগিয়ে।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Fiqh of the Muslim family (ইংরেজি ভাষায়)। Islamic Books। ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ Mallat, Chibli; Connors, Jane Frances (১৯৯০)। Islamic Family Law (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 978-1-85333-301-9। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ العمراني, محمد الكدي (২০০১)। فقه الأسرة المسلمة في المهاجر 1-2 ج1 (আরবি ভাষায়)। Dar Al Kotob Al Ilmiyah دار الكتب العلمية। আইএসবিএন 978-2-7451-3374-8। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ Zarabozo, Jamaal (১৯৯৭)। The Fiqh of the Family: Marriage and Divorce (ইংরেজি ভাষায়)। American Open University। আইএসবিএন 9781931961011। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ Welchman, Lynn (২০০৪)। Women's Rights and Islamic Family Law: Perspectives on Reform (ইংরেজি ভাষায়)। Zed Books। আইএসবিএন 978-1-84277-095-5। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ Amanat, Abbas; Griffel, Frank (২০০৭)। Shari’a: Islamic Law in the Contemporary Context (ইংরেজি ভাষায়)। Stanford University Press। পৃষ্ঠা 100। আইএসবিএন 978-0-8047-7953-1। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ Netton, Ian Richard (২০১৩)। Encyclopaedia of Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 110। আইএসবিএন 978-1-135-17960-1। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ Elementary Education and Motivation in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Cambria Press। ২০১০। পৃষ্ঠা 21,25। আইএসবিএন 978-1-62196-932-7। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ ক খ Meri, Josef W. (২০০৬)। Medieval Islamic Civilization: An Encyclopedia (ইংরেজি ভাষায়)। Psychology Press। পৃষ্ঠা 150। আইএসবিএন 978-0-415-96690-0। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ Tarazi, Norma (১৯৯৫)। The Child in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। American Trust Publications। পৃষ্ঠা ১২৯। আইএসবিএন 978-0-89259-158-9। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ Rassool, G. Hussein; Khan, Muhammad Aftab (২০২০)। Sexuality Education from an Islamic Perspective (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge Scholars Publishing। পৃষ্ঠা ১৮৯। আইএসবিএন 978-1-5275-4697-4। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০।
- ↑ ক খ http://www.onislam.net/english/ask-about-islam/ethics-and-values/muslim-character/166329-marriage-is-the-prophets-sunnah.html
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Importance of Marriage in Islam"। al-islam.org। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৫।
- ↑ "Hadith - The Book of Marriage - Sahih Muslim - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩১।
- ↑ "Hadith - Book of Wedlock, Marriage (Nikaah) - Sahih al-Bukhari - Sunnah.com - Sayings and Teachings of Prophet Muhammad (صلى الله عليه و سلم)"। sunnah.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-৩১।
- ↑ Mallat, Chibli; Connors, Jane Frances (১৯৯০)। Islamic Family Law (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা 55, 58, 60, 62, 63, 64। আইএসবিএন 978-1-85333-301-9। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Khan, Muhammad Aftab (২০০৬)। Sex & Sexuality in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Nashriyat। পৃষ্ঠা 296। আইএসবিএন 978-969-8983-04-8। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Khan, Muhammad Aftab (২০০৬)। Sex & Sexuality in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Nashriyat। পৃষ্ঠা 103, 144, 146। আইএসবিএন 978-969-8983-04-8। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Warren, Christie S. (২০১০)। Islamic Criminal Law: Oxford Bibliographies Online Research Guide (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press, USA। পৃষ্ঠা 10, 11, 12। আইএসবিএন 978-0-19-980604-1। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Zia, Afiya Shehrbano (১৯৯৪)। Sex Crime in the Islamic Context: Rape, Class and Gender in Pakistan (ইংরেজি ভাষায়)। ASR। পৃষ্ঠা 7, 9, 32। আইএসবিএন 978-969-8217-23-5। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Rassool, G. Hussein (২০১৫)। Islamic Counselling: An Introduction to theory and practice (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 978-1-317-44125-0। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Ali, Kecia (২০১৬)। Sexual Ethics and Islam: Feminist Reflections on Qur'an, Hadith, and Jurisprudence (ইংরেজি ভাষায়)। Simon and Schuster। আইএসবিএন 978-1-78074-853-5। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ Muhametov, Abdullah R.; But, Laila-Olga (২০১৩)। Love and Sex in Islam (ইংরেজি ভাষায়)। Booktango। আইএসবিএন 978-1-4689-2811-2। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২০।
- ↑ ক খ গ Dr. Shahid Athar। "Sex education, teenage pregnancy, sex in Islam and marriage" (ইংরেজি ভাষায়)। /www.islam-usa.com। ১৫ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৫।
- ↑ ক খ "Sunnah of the wedding night"। ১৭ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০।
- ↑ Dammer, Harry; Albanese, Jay (২০১১)। Comparative Criminal Justice Systems (5th সংস্করণ)। Cengage Learning.। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 9781285067865। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৫।
- ↑ Criminal Law ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে Oxford Islamic Studies, Oxford University Press (2013)
- ↑ Mohamed S. El-Awa (১৯৯৩)। Punishment In Islamic Law। American Trust Publications। পৃষ্ঠা 1–68। আইএসবিএন 978-0892591428।
- ↑ Silvia Tellenbach (২০১৫)। The Oxford Handbook of Criminal Law (Ed: Markus D. Dubber and Tatjana Hornle)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 251–253। আইএসবিএন 978-0199673599।
- ↑ Tabassum, Sadia (২০ এপ্রিল ২০১১)। "Combatants, not bandits: the status of rebels in Islamic law"। International Review of the Red Cross। 93 (881): 121–139। ডিওআই:10.1017/S1816383111000117।
- ↑ Omar A. Farrukh (১৯৬৯)। Ibn Taimiyya on Public and Private Law in Islam or Public Policy in Islamic Jurisprudence। ওসিএলসি 55624054।
- ↑ M. Cherif Bassiouni (1997), Crimes and the Criminal Process, Arab Law Quarterly, Vol. 12, No. 3 (1997), pp. 269-286
- ↑ R. Peters, Encyclopaedia of Islam, 2nd Edition, Edited by: P. Bearman et al., Brill, আইএসবিএন ৯৭৮-৯০০৪১৬১২১৪, see article on Zinā
- ↑ Muḥammad Salīm ʻAwwā (1982), Punishment in Islamic Law: A Comparative Study, American Trust Publications, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৯২৫৯০১৫৫
- ↑ Sakah Saidu Mahmud (2013), Sharia or Shura: Contending Approaches to Muslim Politics in Nigeria and Senegal, Lexington, আইএসবিএন ৯৭৮-০৭৩৯১৭৫৬৪৪, Chapter 3
- ↑ Ursula Smartt, Honour Killings ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ নভেম্বর ২০২০ তারিখে Justice of the Peace, Vol. 170, January 2006, pp. 4-6
- ↑ Ursula Sillings] Justice of the Peace, Vol. 170, January 2006, pp. 4-6
- ↑ Z. Mir-Hosseini (2011), Criminalizing sexuality: zina laws as violence against women in Muslim contexts, Int'l Journal on Human Rights, 15, 7-16
- ↑ Ziba Mir-Hosseini (2001), Marriage on Trial: A Study of Islamic Family Law, আইএসবিএন ৯৭৮-১৮৬০৬৪৬০৮৯, pp. 140-223
- ↑ Camilla Adang (2003), Ibn Hazam on Homosexuality, Al Qantara, Vol. 25, No. 1, pp. 5-31
- ↑ "Ruling on the crime of rape."। IslamQA.info। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৫।
- ↑ Schacht, Joseph (১৯৯১)। "Mīrāth"। Encyclopaedia of Islam। 7 (2nd সংস্করণ)। Brill Academic Publishers। পৃষ্ঠা 106–113। আইএসবিএন 90-04-09419-9।
- ↑ ক খ পবিত্র কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর)। খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প। ১৯৯২। পৃষ্ঠা ১৪৮০।