আবদুল আউয়াল জৌনপুরী
মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | আনু. ১৮৬৭ |
মৃত্যু | ১৮ জুন ১৯২১ | (বয়স ৫৩–৫৪)
ধর্ম | ইসলাম |
দাম্পত্য সঙ্গী | ফখিরা বিবি |
সন্তান | আব্দুল বাতেন জৌনপুরী |
পিতামাতা |
|
আন্দোলন | তাইয়ূনী |
উল্লেখযোগ্য কাজ | আরবি, উর্দু ও ফারসি ভাষায় মোট ১২১টি গ্রন্থ |
শিক্ষা | মাদ্রাসা আস-সাওলাতিয়া |
আত্মীয় | হাফেজ আহমদ জৌনপুরী (ভাই) আব্দুর রব জৌনপুরী (ভাতিজা) |
মুসলিম নেতা | |
শিক্ষক | মোহম্মদ হামেদ ভবানীগঞ্জী আব্দুল হাই লখনবী রহমতুল্লাহ কৈরানবী |
পুরস্কার | ব্রিটিশ রাজ ও মুসলিম নবাবদের নিকট থেকে প্রশংসাপত্র |
মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী একজন ইসলামী পণ্ডিত (আলেম) লেখক ও ধর্মপ্রচারক ছিলেন। তিনি ওয়াজ নসীহত করে মানুষকে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতি আহবান করতেন। তিনি মূলত বাংলা ও আসাম অঞ্চলে ধর্মপ্রচার করেন। তিনি আরবি, উর্দু ও ফারসি ভাষায় ১২১টি বই রচনা করেন।[১]
জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী ১৮৬৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী এবং মাতা বাতুল বিবি।[১]
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব ছয় বছর বয়সে কুরআন তেলাওয়াত শিখেন। আট বছর বয়সে তাঁর বাবা-মা মারা যান এবং চাচাতো ভাই মাওলানা সালাহুদ্দীন আহমদ সাহেবের জৌনপুরে ফিরে যান।[২] তেরো বছর বয়সে পুরো কুরআন মুখস্ত করেন এবং একই বছরে রমজান মাসে তারাবীর নামাজ পড়ানো শুরু করেন এবং প্রথম দশ দিনের মধ্যে কুরআন খতম করেন।[১] তার প্রতিভা মুসলিম সমাজের নজরে পড়ে এবং তিনি জৌনপুরসহ লখনউ, ঢাকা এবং নোয়াখালীর বিভিন্ন মসজিদে এমামতি করার সুযোগ পান।
হেফজ সমাপ্তি করলেও তিনি ইসলামী তালীম গ্রহণ করতে থাকেন। নোয়াখালীতে তিনি মৌলবী মোহম্মদ হামেদ ভবানীগঞ্জীর কদমে আরবী ব্যাকরণ এবং কুরআনী তালীম অর্জন করেন। ১৮৮২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি লখনউর ঐতিহ্যবাহী ফিরিঙ্গি মহল মাদ্রাসায় চলে যান যেখানে তিনি আরবী, ফার্সী, উর্দু ও উচ্চ তালীম গ্রহণ করেন। লখনউস্থ উনার ওস্তাদরা ছিলেন আল্লামা আব্দুল হাই লখনবী, মাওলানা মোহম্মদ নঈম নেজামী (যার তরে পড়লেন তলবীহ আলা তৌজীহ), হাফেজ আবুল হাসনাত, মাওলানা নেজামুদ্দীন লখনবী, মাওলানা মোহম্মদ মোহসেন, মাওলানা মোহম্মদ ওছমান এবং শাহ জামান বেলায়েতী। জৌনপুরস্থ উনার ওস্তাদরা ছিলেন মোল্লা হাসন (যার তরে পড়লেন শরহে আকায়েদ ও শরহে সিলিম), মোল্লা জলাল (যার তরে পড়লেন শরহে তহজীব) এবং সৈয়দ শের আলী বুলন্দশহরী (যার তরে পড়লেন রেসালায়ে কুতুবিয়া)। লখনউতে পাঁচ বছর কেটে তিনি শায়খুল বাঙ্গাল লুৎফর রহমান বর্ধমানীর নসিহতে বাংলার তৎকালীন রাজধানী কলকাতা শহরে প্রবেশ করেন। যাইহোক, বর্ধমানী সাহেব পরে উচ্চ-স্তরের আরবী ব্যাকরণ শেখানোর জন্য সময় পেলেন না তাই জৌনপুরী সাহেব নিজ বোনের সাথে ময়মনসিংহ যান।[২]
১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর বাবা কারামত আলী জৌনপুরীর অন্যতম শাগরেদ কারী হাফেজুদ্দীন সাহেবের আর্থিক মদদে আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব হেজাজ যাওয়ার তৌফিক পান। তিনি দুই বছর মক্কা শরীফের সওলাতিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। মক্কা শরীফে উনার ওস্তাদরা ছিলেন শায়খুল হাদীছ আল্লামা রহমতুল্লাহ কৈরানবী, মাওলানা মহম্মদ নূর এবং শায়খ আব্দুল্লাহ বিন সৈয়দ হোসেন মক্কী। তাঁর বাবা কারামত আলী জৌনপুরীর অন্যতম শাগরেদ মাওলানা আব্দুল হক এলাহাবাদী মুহাজিরে মক্কী সাহেবের তরে তিনি ফেকাহ, হাদীছ ও তফসীর পড়েন। অবশেষে তিনি এলাহাবাদী সাহেবের দস্ত হতে এজাজত পান।[২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]যদিও মিশর-শামসহ অন্য দেশে পড়ালেখার ইচ্ছা ছিল, আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব ১৮৮৯ সালে নিজ ভাগিনা পাবনার মুসলেহ উদ্দিন পাবনবী সাহেবের ইন্তেকালের কারণে ব্রিটিশ রাজে ফিরে আসেন। আরবে থাকতে তিনি দুই বার হজ্জ করার তৌফীক পান। জৌনপুরে ফিরে ইসলাম প্রচার সমাজ সংস্কারের উদ্দেশে ওয়াজ নসীহত করেন। ১৮৯০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ গমন করেন এবং মাদ্রাসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঢাকা শহরের চকবাজার শাহী মসজিদে ওয়াজ-মাহফিল করতেন। ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে উনার দ্বিতীয় ছেলে মুহম্মদ হাম্মাদ আব্দুজ জাহের জৌনপুরীর অকাল ওফাতে ঢাকার আরমানিটোলায় মাদ্রাসা-ই-হাম্মাদিয়া স্থাপন করেন (মাদ্রাসাটি ১৯৪০ সালে হাম্মাদিয়া হাই স্কুলে রূপান্তরিত হয়ে যায়)।[৩]
তাইয়ুনী আন্দোলনের নেতা হিসাবে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকার নবাব ও ব্রিটিশ সরকারের নিকট থেকে প্রশংসাপত্র পান।[১][৪] নবাব খাজা সলিমুল্লাহ উনার এমামতিতে লালবাগ কেল্লায় ঈদের নামাজ কায়েম করতেন।[৫] তিনি পূর্ব বাংলার বিভিন্ন স্থানে সফর করেন যেমন ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, লাকসাম ও ফরিদপুর। ফরিদপুর তখন মাওলানা আব্দুল গফূর নয়া মিঞা সাহেবের নেতৃত্ত্বে ফরায়েজীদের কেন্দ্র ছিল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি মৈত্রী হয়েছিল যখন নয়া মিঞা সাহেব মাওলানা আব্দুল আউয়াল জৌনপুরীর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন।[৬]
রচনাকর্ম
[সম্পাদনা]মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী ছিলেন প্রতিভাবান লেখক। তিনি ইসলামের মৌলিক ইতিহাস, চরিত্র গঠন, সুফিবাদ ও সাধারণ ইসলামি শক্ষা বিষয়ে উর্দু, আরবি ও ফারসি ভাষায় একশ একুশটি বই রচনা করেন। এর মধ্যে ৮৯টি প্রকাশ হয়েছে।[১]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]আবদুল আউয়াল জৌনপুরী ছিলেন প্রতিভাবান লেখক। তিনি ইসলামের মৌলিক ইতিহাস, চরিত্র গঠন, সুফিবাদ ও সাধারণ ইসলামি শক্ষা বিষয়ে উর্দু, আরবি ও ফারসি ভাষায় একশ একুশটি বই রচনা করে১৮ জুন ১৯২১ সালে তিনি কলকাতার মানিকতলায় মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।[১]
পারিবারিক জীবন
[সম্পাদনা]মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী ছিলেন প্রতিভাবান লেখক। তিনি ইসলামের মৌলিক ইতিহাস, চরিত্র গঠন, সুফিবাদ ও সাধারণ ইসলামি শক্ষা বিষয়ে উর্দু, আরবি ও ফারসি ভাষায় একশ একুশটি বই রচনা করের স্ত্রী ফাখিরা বিবি। তাদের সন্তান মাওলানা আবদুল বাতিন জৌনপুরী। তার (আবদুল আউয়াল জৌনপুরী) ১৪ ভাইয়ের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য মাওলানা হাফিজ আহমদ জৌনপুরী।[১]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "জৌনপুরী, আবদুল আউয়াল - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯।
- ↑ ক খ গ মুহাম্মদ মজলুম খান (২০১৩)। The Muslim Heritage of Bengal: The Lives, Thoughts and Achievements of Great Muslim Scholars, Writers and Reformers of Bangladesh and West Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। Kube Publishing। পৃষ্ঠা 264–271। আইএসবিএন 978-1-84774-059-5।
- ↑ মুঈনুদ্দীন আহমদ খান (২০১০)। Islamic Revivalism During 18th, 19th and 20th Centuries in North Africa, Saudi Arabia, Pakistan, India and Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। ঢাকা: বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট।
- ↑ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ (১৯৮৬)। "আবদুল আউওয়াল জৌনপুরী"। বাংলাদেশের খ্যাতনামা আরবীবিদ, ১৮০১-১৯৭১ [Renowned Arabists of Bangladesh, 1801-1971]। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা 132।
- ↑ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। মওলানা আবদুল আউওয়াল জৌনপুরী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা 159।
- ↑ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। রাজনীতিতে বঙ্গীয় উলামার ভূমিকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।