অতীন্দ্রনাথ বসু ঠাকুর
অতীন্দ্রনাথ বসু ঠাকুর | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৭ অক্টোবর ১৯৬১ | (বয়স ৫১)
পেশা | অধ্যাপক ও রাজনীতিবিদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | ড.নারায়ণী বসু |
পিতা-মাতা | মনোমোহন বসু ঠাকুর (পিতা) |
পুরস্কার | প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি (১৯৩৮) |
ড. অতীন্দ্রনাথ বসু ঠাকুর (২০ নভেম্বর ১৯০৯ – ১৭ অক্টোবর ১৯৬১)[১] ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি বিপ্লবী জননেতা, অধ্যাপক, লেখক, সম্পাদক ও রাজনীতিবিদ।[২][৩]
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]অতীন্দ্রনাথ বসু ঠাকুরের জন্ম ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশের বিক্রমপুরের অর্থাৎ বর্তমান মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর গ্রামে। তার প্রকৌশলী পিতা মনমোহন বসু ঠাকুর 'মার্টিন রেলওয়েজ'-এ কাজ করতেন। তারা ছিলেন পাঁচ সহোদর এবং তিনি ছিলেন তৃতীয়। জীববিজ্ঞানী ড.শচীন্দ্রনাথ বসু ঠাকুর ছিলেন তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি যখন গ্রামের স্কুলের ছাত্র, তখন তার পিতা পরলোক গমন করেন। তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অমিয়কুমার বসু ঠাকুর পরিবারের দেখাশোনার ভার নেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে অতীন্দ্রনাথ ছয়টি বিষয় লেটার মার্কস নিয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং ইংরাজীতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকার অনিল রায়ের সংস্পর্শে এসে শ্রীসঙ্ঘ-এ যোগ দিয়ে বৈপ্লবিক কাজকর্মে দীক্ষিত হন। এরপর কলকাতা এসে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএসসি, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইতিহাসে সাম্মানিক সহ প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বি.এ পাশ করেন। কিন্ত বিপ্লবীদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তিনি পুলিশের টার্গেটে পরিণত হলে অন্তরালে যান। কিন্তু বি.এ পাশের পর তাকে বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-এর অধীনে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রেসিডেন্সি জেল, তারপর হিজলি এবং আলিপুরদুয়ারের বক্সা ডিটেনশন সেন্টার সহ বেশ কয়েকটি আটক কেন্দ্রে কারারুদ্ধ করা হয়। সমস্ত রকমের অসুবিধা সত্ত্বেও, অতীন্দ্রনাথ পড়াশোনা চালিয়ে যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি নন কলেজিয়েট ছাত্র হিসাবে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন এবং মুক্তি পান।[৪] এরপর অতীন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে "ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস" বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তার এই গবেষণাপত্রটি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্য হয়। [২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে তিনি অধুনা বাংলাদেশের শ্রীকাইল সরকারি কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হন। পরে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে তিনি দীর্ঘ পনেরো বৎসর অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপনাকালে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ মিউজিয়ম লাইব্রেরিতে গবেষণার জন্য 'ঘোষ ট্রাভেল ফেলোশিপ' লাভ করে লন্ডনে যান। 'অ্যানাকিজম'-এর উপর তার গবেষণাপত্র রচিত হয়।
বৈপ্লবিক ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ
[সম্পাদনা]কলেজে পড়ার সময় অতীন্দ্রনাথ বিপ্লবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচারপত্র বেণু পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জেল থেকে মুক্তি লাভের পর জেলে থাকার সময়ের কথা নিয়ে রচনা করেন বি-ক্লাশ নামের এক গ্রন্থ। বিপ্লবীদের শ্রীসঙ্ঘ-এর যোগসূত্রে তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্য হন। স্বাধীনতার পর ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে আসানসোল বিধানসভা কেন্দ্র হতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যসভার সদস্য হন।
তবে জীবনের শেষদিক তিনি ��াজনীতির চেয়ে শিক্ষকতা ও লেখালেখির প্রতি উৎসর্গ করেন। অধ্যাপনাকালে তিনি ইতিহাসের পাঠপুস্তক রচনা ছাড়াও, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নামের একটি পত্রিকার সম্পাদনা করতেন। তার লেখা ক্রসরোড অফ সায়েন্স অ্যান্ড ফিলোসফি শীর্ষক গ্রন্থটি সেসময়ে সমাজের বুদ্ধিজীবী ও সমালোচক মহলে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী প্রভাষক ড.নারায়ণী বসু অতীন্দ্রনাথ রচিত গবেষণাপত্র 'অ্যানাকিজম' পুস্তকাকারে ইংরাজী ও বাংলায় নৈরাজ্যবাদ নামে প্রকাশ করেন। [২]
জীবনাবসান
[সম্পাদনা]১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ১৭ অক্টোবর অধ্যাপক অতীন্দ্রনাথ বসু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনের সেন্ট প্যাং ক্রস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং লন্ডনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। [২] [৪]
- ↑ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৯, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ ক খ গ ঘ "Dr Atindranath Basu Thakur"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৮।
- ↑ সেনগুপ্ত, শ্যামল (সম্পাদনা) (১৯৯৭ দ্বিতীয় সংস্করণ))। মৃত্যুঞ্জয়ী। মহাজাতি অছি পরিষদ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৃষ্ঠা ১০৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ "অতীন্দ্রনাথ বসু ঠাকুর"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২৯।