হরিদ্বার (হিন্দি: हरिद्वार হরিদ্ওয়ার্) ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গঙ্গাপারে অবস্থিত একটি হিন্দু তীর্থস্থান।
জানুন
[সম্পাদনা]হরিদ্বার, যার আক্ষরিক অর্থ "ঈশ্বরের দ্বার", হচ্ছে ভারতে হিন্দুদের, বিশেষত শৈবদের অন্যতম পবিত্র স্থান, এবং এখানে বিভিন্ন শৈব মন্দির বর্তমান। এখানে গঙ্গা নদী হিমালয় থেকে উত্তর ভারতের সমভূমিতে পৌঁছয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দুরা এখানে মিলিত হয়।
প্রবেশ
[সম্পাদনা]হরিদ্বার দিল্লি থেকে ২০০ কিমি দূরে অবস্থিত, এবং সড়ক ও রেল ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। এই শহরটি ট্রেন ও বাস দ্বারা ভালভাবে সংযুক্ত হলেও বিশেষ করে তীর্থের সময় আগে থেকে টিকিট কেটে নেওয়া উচিত।
শ্রাবণ মাসের সময় হরিদ্বার না যাওয়াই ভাল, কারণ এই সময় প্রচুর ভিড় হয় এবং সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। এছাড়া মৌসুমীর সময়ও (মে মাসের শেষ থেকে আগস্ট) এখানে যাওয়া উচিত নয়, কারণ বৃষ্টির ফলে সেখানে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
দিল্লি থেকে গাড়ি ভাড়া করে হরিদ্বার যাওয়া যায়, তবে সেখানে ট্রেনে করে যাওয়াই ভাল কারণ সেখানে প্রচুর ট্রেন আছে এবং ��াড়ির তুলনায় ট্রেনের ভাড়া কম।
রেলপথে
[সম্পাদনা]- 1 হরিদ্বার জংশন (HW)। দিল্লি ও দেরাদুন থেকে একাধিক ট্রেন পাওয়া যায়। দিনে কিছু ট্রেন ঋষিকেশও যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে বাস পরিষেবা আরও দ্রুত এবং ঘন ঘন। স্টেশনটি শহরের দক্ষিণে অবস্থিত এবং এর থেকে বেশিরভাগ হোটেল হাঁটার দূরত্বে, তবে হর কি পৌরি ২ কিমি দূরে।
হরিদ্বারগামী কিছু গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন:
- অমৃতসর থেকে: জন শতাব্দী এক্সপ্রেস, দেরাদুন এক্সপ্রেস
- আনন্দ বিহার টার্মিনাল (দিল্লি) থেকে: দেরাদুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
- আহমেদাবাদ থেকে: হরিদ্বার মেল
- জম্মু তাওয়াই থেকে: হেমকুন্ত এক্সপ্রেস
- নতুন দিল্লি থেকে: জন শতাব্দী এক্সপ্রেস, মুসৌরি এক্সপ্রেস, শতাব্দী এক্সপ্রেস
- মুম্বই থেকে: বান্দ্রা–দেরাদুন এক্সপ্রেস
- হাওড়া থেকে: উপাসনা এক্সপ্রেস, কুম্ভ এক্সপ্রেস, দুন এক্সপ্রেস
বাসে
[সম্পাদনা]হরিদ্বারের বাস স্টেশন রেলওয়ে স্টেশনের কাছেই অবস্থিত, তবে এটি কোলাহলপূর্ণ এবং এখনকার প্রায় সমস্ত নির্দেশিকা কেবল হিন্দি ভাষায়। দিল্লি (তাত্ত্বিকভাবে ৪ ঘণ্টা), ঋষিকেশ (১ ঘণ্টা) ও উত্তর ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হরিদ্বারে বাস পরিষেবা বর্তমান। বাসের টিকিট কাটার আগে বাসের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা ভাল। সর্বদা গদিওয়ালা ও পুশব্যাক আসনে বসবেন।
ঘুরে দেখুন
[সম্পাদনা]মধ্য হরিদ্বার পায়ে হেঁটেই ঘোরা যায়, তবে রেলওয়ে ও বাস স্টেশনে ট্যাক্সি ও অটোরিকশা পাওয়া যায়।
কাছের গন্তব্যের জন্য সাইকেল রিকশার ভাড়া সাধারণত ₹১০, এবং দূরের গন্তব্যের জন্য ₹২৫। আশ্রম ও স্থানীয় মন্দির ঘোরার জন্য তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের ট্যাক্সি ভাড়া করলে এর খরচ ₹৪০০ হবে। একইরকম দূরত্বের জন্য অটোরিকশার খরচ ₹২০০।
দেখুন
[সম্পাদনা]- 1 চণ্ডী দেবী মন্দির (चण्डी देवी मंदिर চণ্ডী দেওয়ী মন্দির্)। নীল পর্বতে অবস্থিত চণ্ডী দেবীর মন্দির। ১৯২৯ সালে কাশ্মীরের মহারাজা সুচত সিং এটি তৈরি করেছিলেন। অষ্টম শতাব্দীতে আদি শঙ্কর এর দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ যাত্রার জন্য রোপওয়ে বর্তমান।
- 2 ভারত মাতা মন্দির (भारत माता मंदिर ভারৎ মাতা মন্দির্) (শহরের কেন্দ্র থেকে ৫ কিমি উত্তর)। ভারত মাতাকে উৎসর্গ করে নির্মিত এই আধা-মন্দিরের সাত তলা জুড়ে সমস্ত ভারতীয় ধর্মের দেবদেবী, সাধু ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বের মূর্তি বর্তমান।
- 3 মনসা দেবী মন্দির (मनसा देवी मंदिर মন্সা দেওয়ী মন্দির্)। শহরের কাছের একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। রোপওয়ে (ফেরার টিকিট ₹৪৮) বা ২কিমি চড়াই রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায়। এই মন্দির সৌন্দর্য্যের জন্য তেমন পরিচিত নয়, কিন্তু এর দৃশ্য অত্যন্ত ভাল। রোপওয়েতে চড়া ও মন্দিরে প্রবেশে প্রচুর ভিড় থাকে। ভিড় নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন চেষ্টার সত্ত্বেও ভক্তের ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত তীব্র।
- 4 মায়া দেবী মন্দির (माया देवी मंदिर মাইয়া দেওয়ী মন্দির্)। ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম এবং হরিদ্বারের প্রধান দেবী। এই মন্দির থেকে হরিদ্বারের অপর নাম "মায়াপুর" উদ্ভূত হয়েছে।
- 5 হর কি পৌরি (हर की पौड़ी হর্ কী পৌড়ী)। এটি হরিদ্বারের প্রধান দর্শনীয় স্থান। এখানে ভক্তগণ গঙ্গাস্নান করে পূজা সম্পন্ন করেন। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, বিশ্ব সৃষ্টির সময় সমুদ্রমন্থন থেকে উদ্ভূত অমৃতের এক ফোঁটা হরিদ্বারের উপর পতিত হয়, এবং একটি পাথরের দেওয়ালে বিষ্ণুর পদচিহ্ন বর্তমান। প্রতিদিন অপরাহ্ন ৭টায় (শীতকালে অপরাহ্ন ৫:৪৫-এ) হাজার হাজার ভক্ত গঙ্গার ধারে জড়ো হয়ে নদীতে প্রদীপ ভাসিয়ে পূজা সম্পন্ন করেন। ঘাটের কাছাকাছি ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনার কাছ থেকে চাঁদা চাওয়া হতে পারে। আধিকারিকের ছদ্মবেশে প্রতারকদের হইতে সাবধান। আপনি যদি কোথাও দান করতে চান তাহলে ঘাটের মাঝে আলোর পোলের আশেপাশে প্রণামী বাক্স থাকবে।
করুন
[সম্পাদনা]ঘটনা
[সম্পাদনা]হরিদ্বারে একাধিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রতি ১২ বছর অন্তর সংঘটিত কুম্ভ মেলা উল্লেখযোগ্য, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উৎসব এবং ২০০৩ সালে সর্বোচ্চ ৭ কোটি লোক এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই মেলার সংঘটনস্থল হরিদ্বার, প্রয়াগরাজ, উজ্জয়িনী ও নাশিকের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। এছাড়া ৬ বছর অন্তর অর্ধ মেলা সংঘটিত হয়। ২০২২ সালে হরিদ্বারে শেষ মহা কুম্ভ মেলা হয়েছিল, এবং ২০১৬ সালে সেখানে শেষ অর্ধ মেলা হয়েছিল।
অন্যান্য বার্ষিক উৎসব হচ্ছে:
- বৈশাখী — এটি এপ্রিল মাসে পালিত হয় এবং এই সময় উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও হরিয়ানা থেকে ভক্তগণ এখানে মিলিত হন।
- কাঁওড় মেলা — এটি জুলাই মাসে পালিত হয়, যা সবচেয়ে বড় বার্ষিক উদ্যাপন। এতে ৩ লক্ষ পর্যন্ত ভক্তগণ মিলিত হন।
- কার্তিক পুর্ণিমা — দীপাবলির ১৫ দিন পর নভেম্বরের পুর্ণিমার রাতে পালিত হয়।
যদিও এই উৎসবগুলি রঙিন ও আনন্দদায়ক, এই উৎসবগুলির শহরের সীমিত পরিকাঠামোকে তাদের সীমার দিকে ঠেলে দেয়। ঘর ভাড়া ও টিকিট কাটা আগে থেকে সম্পন্ন করুন, এবং রাস্তায় ভ্রমণ বন্ধ করুন কারণ যানজট ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে।
সাবধানে থাকুন
[সম্পাদনা]উৎসবের সময়, বিশেষ করে কুম্ভ মেলার সময়, হরিদ্বারের ভিড় চরমে উঠে যায়। এখানে পদপিষ্টে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, ১৯৮৬ সালে ৫০ জন, ২০০৩ সালে ২১ জন এবং ২০১০ সালে ৫ জন। এক্ষেত্রে গঙ্গার উপর সেতু অত্যন্ত বিপজ্জনক জায়গা।
হরিদ্বারে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, সুতরাং কোনোরকম মদ্যপানে অভিযুক্ত হলে আপনার ভ্রমণ কারাগারে শেষ হয়ে যাবে।
অন্যান্য তীর্থস্থানের মতো হরিদ্বার ভিখারি ও ভণ্ড লোকে পরিপূর্ণ। লোভী বাঁদরদের হইতে সাবধান, কারণ তারা আপনার হাত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিতে পারে। হাঁটার সময় চোখ কান খোলা রাখবেন, কারণ রাস্তায় প্রচুর গোরু ঘুরে বেড়ায়।