বিশ্বভারতী
শান্তিনিকেতন-বিদ্যালয়ের পঞ্চাশবর্ষপূর্তি উপলক্ষে
প্রথম প্রকাশ: ৭ পৌষ ১৩৫৮
পুনমুদ্রণ: জ্যৈষ্ঠ ১৩৭০
আষাঢ় ১৩৯৬
পুলিনবিহারী সেন-কর্তৃক সংকলিত
© বিশ্বভারতী
প্রকাশক শ্রীজগদিন্দ্র ভৌমিক
বিশ্বভারতী। ৬ আচার্য জগদীশ বসু রোড। কলিকাতা ১৭
মুদ্রক স্বপ্না প্রিণ্টিং ওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড
৫২ রাজা রামমোহন রায় সরণী। কলিকাতা ৯
বিশ্বভারতী
বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাকাল হইতে ১৩৪৭ সাল পর্যন্ত কুড়ি বৎসরের অধিককাল শান্তিনিকেতন-আশ্রমবিদ্যালয় ও বিশ্বভারতীর আদর্শ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ যেসকল বক্তৃতা দিয়াছিলেন, বিভিন্ন সাময়িক পত্র হইতে এই গ্রন্থে তাহার অধিকাংশই সংকলিত হইল। এগুলি ইতিপূর্বে কোনো পুস্তকে প্রকাশিত হয় নাই।
এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য বাংলা রচনা নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলিতে পাওয়া যাইবে— শিক্ষা; আশ্রমের রূপ ও বিকাশ; প্রাক্তনী; প্রতিষ্ঠাদিবসের উপদেশ ও প্রথম কার্যপ্রণালী।
এতদ্ব্যতীত, শান্তিনিকেতনে অধ্যাপক ও ছাত্রদিগকে আশ্রমের আদর্শ সম্বন্ধে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল হইতে আশ্রমগুরু জীবনের বিভিন্ন পর্বে যে অসংখ্য চিঠিপত্র লিখিয়াছেন তাহার কতক অংশ বিভিন্ন সাময়িক পত্রে বা গ্রন্থে প্রকাশিত হইয়াছে, অবশিষ্ট অং��� মুদ্রণ-অপেক্ষায় আছে।
॥ যত্র বিশ্বং ভবত্যেকনীড়ম্॥
গ্রন্থপরিচয়
১৩০৮ সালের ৭ পৌষ শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয় স্থাপিত হয়; ১৩২৮ সালের ৮ পৌষ বিশ্বভারতী পরিষদ সভার প্রতিষ্ঠা।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হইবার বহু পূর্ব হইতেই শান্তিনিকেতনে ‘সর্বমানবের যোগসাধনের সেতু’-রচনার কল্পনা রবীন্দ্রনাথের মনকে ক্রমশ অধিকার করিতে থাকে; শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক ও ছাত্রদিগকে লিখিত কোনো কোনো পত্রে তাহার আভাস পাওয়া যায়।
‘সিকাগো। ৩ মার্চ [১৯১৩]।••• এখানে মানুষের শক্তির মূর্তি যে পরিমাণে দেখি পূর্ণতার মূর্তি সে পরিমাণে দেখতে পাই নে।••• মানুষের শক্তির যতদূর বাড় হবার তা হয়েছে, এখন সময় হয়েছে যখন যোগের জন্যে সাধনা করতে হবে। আমাদের বিদ্যালয়ে আমরা কি সেই যুগসাধনার প্রবর্তন করতে পারব না? মনুষ্যত্বকে বিশ্বের সঙ্গে যোগযুক্ত করে তার আদর্শ কি আমরা ��ৃথিবীর সামনে ধরব না?••• মানুষকে তার সফলতার সুরটি ধরিয়ে দেবার সময় এসেছে। আমাদের শান্তিনিকেতনের পাখিদের কণ্ঠে সেই সুরটি কি ভোরের আলোয় ফুটে উঠবে না?’••• —তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, বৈশাখ ১৩২০। প্রবাসী, জ্যৈষ্ঠ
‘লস এঞ্জেল্স্। ১১ অক্টোবর ১৯১৬। ••• তার পরে এও আমার মনে আছে যে, শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়কে বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগের সূত্র করে তুলতে হবে— ঐখানে সার্বজাতিক মনুষ্যত্বচর্চার কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে— স্বাজাতিক সংকীর্ণতার যুগ শেষ হয়ে আসছে— ভবিষ্যতের জন্য যে বিশ্বজাতিক মহামিলনযজ্ঞের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে তার প্রথম আয়োজন ঐ বোলপুরের প্রান্তরেই হবে। ঐ জায়গাটিকে সমস্ত জাতিগত ভূগোলবৃত্তান্তের অতীত করে তুলব এই আমার মনে আছে— সর্বমানবের প্রথম জয়ধ্বজা ঐখানে রোপণ হবে।’
‘•••বিশ্বভারতীর উদ্যোগ। গত [১৩২৫] ৮ই পৌষে তাহার সূচনা হয় এবং গত বৎসরই চিত্র, সংগীত প্রভৃতি কলা এবং সংস্কৃত, পালি, ইংরেজি প্রভৃতি সাহিত্যের অধ্যাপনার কাজ আরম্ভ হয়।’ ‘গত বৎসর [১৩২৫] ৮ই পৌষে আশ্রমের বার্ষিক উৎসবের দিনে বিশ্বভারতী স্থাপিত হয়, এবং বর্তমান বৎসরে [১৩২৬] ১৮ই আষাঢ় ইহার নিয়মানুযায়ী কার্যের আরম্ভ হয়।’ বিগত ২৩ ডিসেম্বর [১৯২১] ৮ পৌষ [১৩২৮]••• বিশ্বভারতীর সাংবৎসরিক••• সভায় বিশ্বভারতী পরিষদ্ গঠিত হয় এবং বিশ্বভারতীর জন্য যে সংস্থিতি (constitution) প্রণীত হইয়াছে তাহা গৃহীত হয়’ —এই তারিখই বর্তমানে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাদিবস বলিয়া স্বীকৃত; এই দিন ‘সর্বসাধারণের হাতে তাকে সমর্পণ’ করা হয়।
বিশ্বভারতীর সূচনা হইবার পর, ১৯১৯ খৃস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে নিমন্ত্রিত হইয়া The Centre of Indian Culture প্রভৃতি প্রবন্ধে শিক্ষার সম্বন্ধে তাহার আদর্শ ব্যাখ্যা করেন। ‘আমাদের দেশে শিক্ষার আদর্শ কী হওয়া উচিত সে সম্বন্ধে আমার প্রবন্ধ আমি কলিকাতায় এবং অন্য অনেক শহরে পাঠ করিয়াছি। বিষয়টি এত বড়ো যে আমাদের এই ছোটো পত্রপুটে তাহা ধরিবে না। সংক্ষেপে তাহার মর্মটুকু এখানে বলি।’ এই ‘মর্ম’ শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩২৬ বৈশাখ সংখ্যায় ‘বিশ্বভারতী' নামে প্রকাশিত হয়; উহাই বর্তমান গ্রন্থের প্রথম প্রবন্ধ।
‘শিক্ষাকে কেমন করিয়া সত্য এবং প্রাণের জিনিস করা যায়’ এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নানা চিন্তা এই সময় শান্তিনিকেতন পত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইতে থাকে— বিশ্বভারতী প্রসঙ্গে ইহার কোনো কোনো রচনা অংশতঃ উদ্ধৃত হইল—
‘আমাদের দেশে বর্তমানে দুই রকমের ভীরুতা দেখা যায়। কাহারও ভীরুতা দেশী প্রকৃতিকে রক্ষা করিতে; কাহারও ভীরুতা য়ুরোপীয় শিক্ষা গ্রহণ করিতে। যাঁহারা এই দুই ভীরুতাকেই অতিক্রম করিয়াছেন তাঁহারাই ভারতবর্ষকে বাঁচাইবেন। মৈসুরের রাজাসন এই দুই ভয়কেই ছাড়াইয়া উঠিয়াছে।
‘এইজন্যই যখন মৈসুরের নৃতন বিশ্ববিদ্যালয় দেখিলাম সেটা এতই বেসুরা বোধ হইল। ইহার মধ্যে আমাদের আপন কিছুই নাই, ইহা একেবারেই নকল। ইহাতেই বুঝিলাম, বিদ্যা সম্বন্ধে ভারতবর্ষ আপন সাহস একেবারেই হারাইয়া ফেলিয়াছে। যে বিদ্যালয়কে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বলিয়া থাকি তাহার মধ্যে ভারতবর্ষকে বড়ো জায়গা দিতে আমরা কুষ্ঠিত। যেন বিদ্যাশিক্ষা সম্বন্ধে য়ুরোপের বাহিরে বিশ্বই নাই। যেন বিশ্বের মধ্যে ভারতবর্ষ বলিয়া পদার্থের অস্তিত্বই মেলে না, অথবা অণুবীক্ষণের সাহায্যে ধূলিকণার মধ্যে তাহাকে খুঁটিয়া পাওয়া যায়; সেইজন্য মৈসুরের মতো স্থানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইটকাঠ, তাহার চৌকিটেবিল, তাহার পুঁথিপত্র, তাহার বিষয় ও আশয়ের মধ্যে ভারতবর্ষ নিতান্তই সংকুচিত ও প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে। বিদ্যাসারের মধ্যে ভারতবর্ষের প্রতি এই আস্থার অভাব, এই সম্মানের অভাব যে কিরূপ গভীরভাবে আমাদের মনকে আত্ম-অবিশ্বাসের মধ্যে চিরদিনের মতো মজ্জিত করিয়া দিতেছে সে কথা ভালো করিয়া বুঝিয়া দেখিবার পর্যন্ত শক্তি আমরা হারাইয়াছি। মৈসুরে আমাদের ভরসার বিষয় অনেক দেখিয়াছি তাই এখনও এই আশা মনে রাখিলাম যে••• একদিন মৈসুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিমের বাণীর সঙ্গে আমাদের ভারতীর একাসনে মিলন ঘটিবে— কিন্তু সেই আসনটি হইবে ভারতীরই আসন।’
‘ভারতবর্ষের নানা স্থানেই নৃতন নূতন বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপনের চেষ্টা চলিতেছে। ইহাতেই বুঝা যায় শিক্ষা সম্বন্ধে আমাদের মনে একটা অসন্তোষ জন্মিয়াছে।•••
‘বর্তমান শিক্ষাপ্রণালীটাই যে আমাদের ব্যর্থতার কারণ, অভ্যাসগত অন্ধ মমতার মোহে সেটা আমরা কিছুতেই মনে ভাবিতে পারি না। ঘুরিয়া ফিরিয়া নৃতন বিশ্ববিদ্যালয় গড়িবার বেলাতেও প্রণালী ��দল করিবার কথা মনেই আসে না, তাই নূতনের ঢালাই করিতেছি সেই পুরাতনের ছাঁচে। নূতনের জন্য ইচ্ছা খুবই হইতেছে, অথচ ভরসা কিছুই হইতেছে না। কেননা ঐটেই যে রোগ, এতদিনের শিক্ষা-বোঝার চাপে সেই ভরসাটাই যে সমূলে মরিয়াছে।’
‘আমাদের দেশে বিদ্যাসমবায়ের একটি বড় ক্ষেত্র চাই, যেখানে বিদ্যার আদান প্রদান ও তুলনা হইবে, যেখানে ভারতীয় বিদ্যাকে মানবের সকল বিদ্যার ক্রমবিকাশের মধ্যে রাখিয়া বিচার করিতে হইবে।
‘তাহা করিতে গেলে ভারতীয় বিদ্যাকে তাহার সমস্ত শাখা-উপশাখার যোগে সমগ্র করিয়া জানা চাই। ভারতীয় বিদ্যার সমগ্রতার জ্ঞানটিকে মনের মধ্যে পাইলে তাহার সঙ্গে বিশ্বের সমস্ত বিদ্যার সম্বন্ধনির্ণয় স্বাভাবিক প্রণালীতে হইতে পারে। কাছের জিনিসের বোধ দূরের জিনিসের বোধের সহজ ভিত্তি।
‘বিদ্যার নদী আমাদের দেশে বৈদিক, পৌরাণিক, বৌদ্ধ, জৈন, প্রধানত এই চারি শাখায় প্রবাহিত। ভারতচিত্তগঙ্গোত্রীতে ইহার উদ্ভব। কিন্তু, দেশে যে নদী চলিতেছে, কেবল সেই দেশের জলেই সেই নদী পুষ্ট না হইতেও পারে। ভারতের গঙ্গার সঙ্গে তিব্বতের ব্রহ্মপুত্র মিলিয়াছে। ভারতের বিদ্যার স্রোতেও সেইরূপ মিলন ঘটিয়াছে। বাহির হইতে মুসলমান যে জ্ঞান ও ভাবের ধারা এখানে বহন করিয়া আনিয়াছে সেই ধারা ভারতের চিত্তকে স্তরে স্তরে অভিষিক্ত করিয়াছে, তাহা আমাদের ভাষায় আচারে শিল্পে সাহিত্যে সংগীতে নানা আকারে প্রকাশমান। অবশেষে সম্প্রতি য়ুরোপীয় বিদ্যার বন্যা সকল বাঁধ ভাঙিয়া দেশকে প্লাবিত করিয়াছে; তাহাকে হাসিয়া উড়াইতেও পারি না, কাঁদিয়া ঠেকানোও সম্ভবপর নহে।
‘অতএব,আমাদের বিদ্যায়তনে বৈদিক,পৌরাণিক, বৌদ্ধ, জৈন, মুসলমান ও পার্সি বিদ্যার সমবেত চর্চায় আনুষঙ্গিকভাবে য়ুরোপীয় বিদ্যাকে স্থান দিতে হইবে।
‘সমস্ত পৃথিবীকে বাদ দিয়া যাহারা ভারতকে একান্ত করিয়া দেখে তাহারা ভারতকে সত্য করিয়া দেখে না। তেমনি যাহারা ভারতের কেবল এক অংশকেই ভারতের সমগ্রতা হইতে খণ্ডিত করিয়া দেখে তাহারাও ভারতচিত্তকে নিজের চিত্তের মধ্যে উপলব্ধি করিতে পারে না।•••
‘ভারতে সেই চিত্তের ঐক্যকে পোলিটিকাল ঐক্যের চেয়ে বড়ো বলিয়া জানিতে হইবে; কারণ, এই ঐক্যে সমস্ত পৃথিবীকে ভারতবর্ষ আপন অঙ্গনে আহ্বান করিতে পারে। অথচ, দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের বর্তমান শিক্ষা এমন যে, সেই শিক্ষার গুণেই ভারতীয় চিত্তকে আমরা তাহার স্বরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিতেছি না।
‘ভারতের হিন্দু বৌদ্ধ জৈন মুসলমান শিখ পার্সি খৃস্টানকে এক বিরাট চিত্তক্ষেত্রে সত্যসাধনার যজ্ঞে সমবেত করাই ভারতীয় বিদ্যায়তনের প্রধান কাজ— ছাত্রদিগকে কেবল ইংরেজি মুখস্থ করানো, অঙ্ক কষানো, সায়ন্স্ শেখানো নহে।’•••
‘গত [১৩২৬] ১৮ই আষাঢ় আশ্রমের অধিপতি শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের সভাপতিত্বে প্রারম্ভোৎসব সমাধা করিয়া বিশ্বভারতীর কার্য আরম্ভ করা হইয়াছে।’ এই কার্যারম্ভের দিনে রবীন্দ্রনাথ যে বক্তৃতা দেন তাহার সারসংকলন বর্তমান গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রবন্ধরূপে মুদ্রিত হইল; প্রথমে ইহা শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩২৬ শ্রাবণ সংখ্যায় ‘বিশ্বভারতী’ নামে প্রকাশিত হইয়াছিল।
‘বিগত ২৩ ডিসেম্বর [১৯২১] ৮ পৌষ [১৩২৮] বোলপুরে শান্তিনিকেতন-আশ্রমের আম্রকুঞ্জে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের নূতন শিক্ষার কেন্দ্র বিশ্বভারতীর সাংবৎসরিক সভার অধিবেশন হয়। সেই সভায় বিশ্বভারতী পরিষদ গঠিত হয় এবং বিশ্বভারতীর জন্য যে সংস্থিতি (constitution) প্রণীত হইয়াছে তাহা গৃহীত হয়। ডাক্তার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাশয় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। সভায় যুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আচার্য সিল্ভ্য লেভি, ম্যাডাম লেভি, রাজগুরু ধর্মাধার মহাস্থবির, ডাক্তার মিস্ ক্রামরিশ, শ্রীযুক্ত উইলিয়াম পিয়ার্সন, শ্রীযুক্তা স্নেহলতা সেন, শ্রীযুক্তা হেমলতা দেবী, শ্রীমতী প্রতিমা দেবী, শ্রীযুক্ত নেপালচন্দ্র রায়, স্যার নীলরতন সরকার, দিল্লির সেণ্ট স্টিফেন কলেজের প্রিন্সিপ্যাল শ্রীযুক্ত এস্ কে রুদ্র, শ্রীযুক্ত মহিমচন্দ্র ঠাকুর, শ্রীযুক্ত প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, ডাক্তার শিশিরকুমার মৈত্র -প্রমুখ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।••• সর্বপ্রথমে শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় ডাক্তার ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাশয়কে সভাপতিত্বে বরণ করিবার প্রস্তাব করেন•••।’—
‘আমি ইচ্ছা করি আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল মহাশয় কিছু বলুন। আমাদের কী কর্তব্য, এই বিশ্বভারতীর সঙ্গে তাঁর চিত্তের যোগ কোথায়, তা আমরা শুনতে চাই। আমি এই সুযোগ গ্রহণ করে আপনাদের অনুমতিক্রমে তাঁকে সভাপতির পদে বরণ করলুম।’
এই উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ যে বক্তৃতা করেন তাহা এই গ্রন্থের তৃতীয় প্রবন্ধ রূপে মুদ্রিত হইল— পূর্বে তাহা শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩২৮ মাঘ সংখ্যায় ‘বিশ্বভারতী পরিষদ্ সভার প্রতিষ্ঠা' নামে প্রকাশিত হইয়াছিল।
সভাপতিরূপে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের অভিভাষণের সংক্ষিপ্ত ও অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন, শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩২৮ মাঘ সংখ্যায় প্রকাশিত পূর্বোক্ত বিবরণ হইতে পরিশিষ্টে মুদ্রিত হইল।
৪-সংখ্যক রচনাটি ‘আলোচনা: বিশ্বভারতীর কথা’ নামে ১৩২৯ ভাদ্র ও আশ্বিন সংখ্যা শান্তিনিকেতন পত্রে প্রকাশিত হয়— গত ২০শে ফাল্গুন বিশ্বভারতীর কয়েকটি নবাগত ছাত্র আচার্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের নিকট বিশ্বভারতীর আদর্শ সম্বন্ধে কিছু শুনিতে চাহিলে তিনি যাহা বলিয়াছেন তাহার মর্ম।’ আলোচনার শেষে রবীন্দ্রনাথ বলেন—
‘আমি চাই, তোমরা বিশ্বভারতীর নৃতন ছাত্রের। খুব উৎসাহ ও আনন্দের সঙ্গে এখানকার আদর্শকে সমর্থন করে কাজ করে যাবে, যাতে আমি তোমাদের সহযোগিতা লাভ করি। আমার অনুরোধ যে, তোমরা এখানকার তপস্যাকে শ্রদ্ধা করে চলবে, যাতে এই প্রাণ-দিয়ে-গ’ড়ে-তোলা প্রতিষ্ঠানটি অশ্রদ্ধার আঘাতে ভেঙে না পড়ে।’
‘বিশ্বভারতীর আদর্শ-প্রচার-কল্পে কলিকাতায় বিশ্বভারতী সম্মিলনী নামে যে-একটি সভা স্থাপিত হয়’, ১৩২৯ সালে তাহার একটি অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর আদর্শ ব্যাখ্যা করেন, ৫-সংখ্যক রচনা সেই বক্তৃতার অনুলিপি; ‘বিশ্বভারতী সম্মিলনী: লেভি-সাহেবের বিদায়-সম্বর্ধনার পরে আলোচনাসভা’ এই নামে ইহা শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩২৯ পৌষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
১৯২২ সালের ২১ অগস্ট্ রবীন্দ্রনাথ কলিকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্রসভায় বিশ্বভারতী সম্বন্ধে যে বক্তৃতা দেন, ৬-সংখ্যক রচনা তাহার অনুলিপি। Presidency College Magazine-4 (Vol IX, No I, September 1922) তাহা ‘বিশ্বভারতী নামে প্রকাশিত হয়। ঐ সংখ্যায় Welcome, Rabindranath শীর্ষক রচনায় এই বক্তৃতার আনুষঙ্গিক বিবরণ মুদ্রিত আছে।
৭-সংখ্যক রচনা, ১৩৩০ সালের নববর্ষে শান্তিনিকেতন মন্দিরে নববর্ষের উৎসবে আচার্যের উপদেশ; ১৩৩০ ভাদ্র সংখ্যা শান্তিনিকেতন পত্রে ‘নববর্ষে মন্দিরের উপদেশ’ আখ্যায় প্রকাশিত হয়।
৮-সংখ্যক প্রবন্ধ শান্তিনিকেতন মন্দিরে ৫ বৈশাখ ১৩৩০ তারিখে কথিত আচার্যের উপদেশের অনুলিপি— শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩৩০ অগ্রহায়ণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এই রচনাটি প্রবাসীর ১৩৩০ মাঘ সংখ্যায় কষ্টিপাথর-বিভাগে ‘তীর্থ’ নামে অংশতঃ মুদ্রিত হয়।
৯-সংখ্যক রচনা ‘বিশ্বভারতী’ নামে ১৩৩০ পৌষ সংখ্যা শান্তিনিকেতন পত্রে প্রকাশিত হয়।
১৩৩০ সালে শান্তিনিকেতনে ৭ পৌষের উৎসবে রবীন্দ্রনাথ যে উপদেশ দেন তাহা এই গ্রন্থের ১০সংখ্যক প্রবন্ধরূপে প্রকাশিত হইল। প্রথমে উহা শান্তিনিকেতন পত্রের ১৩৩০ মাঘ সংখ্যায় ‘৭ই পৌষ: দ্বিতীয় ব্যাখ্যান’ আখ্যায় মুদ্রিত হয়।
১১-সংখ্যক রচনা ‘দক্ষিণ আমেরিকা যাইবার জন্য কলিকাতায় আসিবার পূর্ব-রাত্রে (১৭ ভাদ্র ১৩৩১) শান্তিনিকেতন আশ্রমে কথিত’ ‘যাত্রার পূর্বকথা’ নামে ১৩৩১ কার্তিক সংখ্যা প্রবাসীতে মুদ্রিত হয়।
১৩৩২ সালের ৯ পৌষ শান্তিনিকেতনে বিশভারতী পরিষদের বার্ষিক সভায় রবীন্দ্রনাথ যে বক্তৃতা দিয়াছিলেন ১২-সংখ্যক রচনা তাহার অনুলিপি। ১৩৩২ ফাল্গুন সংখ্যা শান্তিনিকেতন পত্রের ক্রোড়পত্ররূপে, পরে স্বতন্ত্র পুস্তিকাকারে ইহা প্রচারিত হয়।
১৩-সংখ্যক রচনা ১৩৩৩ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা ভারতীপত্রে প্রকাশিত ও ১৩৩৩ শ্রাবণ সংখ্যা প্রবাসীতে কষ্টিপাথর-বিভাগে (‘ভিক্ষা’) উদ্ধৃত।
১৪-সংখ্যক রচনা একটি আলোচনার অনুলিপি; প্রথমে ১৩৩৭ জ্যৈষ্ঠ সংখ্যা বিচিত্রায় ‘কর্মের স্থায়িত্ব’ নামে প্রকাশিত।
১৩৩৯ সালের ৯ পৌষ শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর বার্ষিক পরিষদ্ সভায় রবীন্দ্রনাথের অভিভাষণ ১৫-সংখ্যক প্রবন্ধরূপে মুদ্রিত হইল। ইহা প্রথমে visva-Bharati News -এর January 1933 Paush_Utsav Number-এ ‘আচার্যদেবের অভিভাষণ’ আখ্যায় প্রকাশিত হয়।
১৩৪১ সালের ৮ পৌষ শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর বার্ষিক পরিষদ্ সভায় আচার্যের অভিভাষণ বর্তমান গ্রন্থের ষোড়শ প্রবন্ধ। ইহা পূর্বে ১৩৪১ ফাল্গুন সংখ্যা প্রবাসী পত্রে ‘ধারাবাহী’ প্রবন্ধের দ্বিতীয় অংশ রূপে প্রকাশিত।
বিশ্বভারতীর বার্ষিক পরিষদে ১৩৪২ সালের ৮ পৌষ তারিখে রবীন্দ্রনাথ যে বক্তৃতা দেন তাহা এই গ্রন্থের সপ্তদশ রচনা। এই বক্তৃতার অন্য একটি অনুলিপি ‘বিশ্বভারতী বিদ্যায়তন’ নামে বিশ্বভারতী পত্রিকার ১৩৪৯ ভাদ্র সংখ্যায় প্রকাশিত হইয়াছে।
১৮-সংখ্যক রচনা, ১৩৪৫ সালের ৮ পৌষ তারিখে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর বার্ষিক পরিষদে প্রতিষ্ঠাতা-আচার্যের অভিভাষণ— পূর্বে ১৩৪৫ মাঘ সংখ্যা প্রবাসীতে ‘বিশ্বভারতী’ নামে মুদ্রিত হইয়াছিল।
১৩৪৭ সালের ৮ শ্রাবণ তারিখে শান্তিনিকেতন মন্দিরে সাপ্তাহিক উপাসনায় রবীন্দ্রনাথ যে উপদেশ দেন, এই গ্রন্থের ঊনবিংশ রচনা তাহার অনুলিপি; ইহা ১৩৪৭ ভাদ্র সংখ্যা প্রবাসীতে ‘আশ্রমের আদর্শ’ নামে প্রকাশিত।
- ↑ ‘অসন্তোষের কারণ’ ও ‘বিদ্যাসমবায়’ প্রবন্ধ দুইটি শিক্ষা গ্রন্থের প্রচলিত সংস্করণে সম্পূর্ণ মুদ্রিত আছে। উক্ত গ্রন্থে ‘বিদ্যার যাচাই’ (শান্তিনিকেতন, আষাঢ় ১৩২৬) প্রবন্ধটিও দ্রষ্টব্য।
বিজ্ঞপ্তি
এই গ্রন্থে সংকলিত অভিভাষণগুলি বক্তৃতার তারিখ অনুযায়ী নিবিষ্ট হইয়াছে। যে ক্ষেত্রে সে তারিখ পাওয়া যায় নাই সে ক্ষেত্রে প্রকাশের তারিখ অনুযায়ী সাজানো হইয়াছে, রচনা-শেষে তারিখটি ‘প্র’ চিহ্নিত। ৫ সংখ্যক বক্তৃতার তারিখ, ভাদ্র-আশ্বিন ১৩২৯ সংখ্যা শান্তিনিকেতন পত্রে ‘আশ্রম-সংবাদে’ প্রকাশিত সিলভ্যাঁ লেভি -সম্পর্কিত বিবরণ হইতে অনুমিত।
গ্রন্থপরিচয়ে বিশ্বভারতীর সূচনা কার্যারম্ভ প্রভৃতি সংক্রান্ত যে-সকল তারিখ ও বিবরণ উদ্ধৃত হইয়াছে সেগুলি শান্তিনিকেতন পত্রে প্রকাশিত বিশ্বভারতী বার্ষিক প্রতিবেদন, ও অন্যান্য বিবরণী হইতে গৃহীত।
গ্রন্থপরিচয়ে উল্লিখিত হইয়াছে যে, এই গ্রন্থের অধিকাংশ রচনাই রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতার অনুলিপি। তন্মধ্যে ৬, ১০, ১৫, ১৮ শ্রীপ্রদ্যোতকুমার সেনগুপ্ত -কর্তৃক; ১৬, ১৭ শ্রীপুলিনবিহারী সেন -কর্তৃক; ১২ শ্রীইন্দ্রকুমার চৌধুরী কর্তৃক; ১৪ শ্রীঅমিয় চক্রবর্তী -কর্তৃক; ১৯ নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় -কর্তৃক অনুলিখিত। সাময়িক পত্রে বা অন্যত্র এই-সকল উল্লেখ দেখা যায়। এই অনুলিপিসমূহের অনেকগুলি, বক্তা-কর্তৃক সংশোধিত ও অনুমোদিত, সাময়িক পত্রে এইরূপ উল্লেখ আছে।
এই গ্রন্থে প্রকাশিত সিলভ্যাঁ লেভি ও রবীন্দ্রনাথের চিত্র শ্রীশান্তিদেব ঘোষের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
১৩৫৮
১. বিশ্বভারতী পরিষদ্-সভার প্রতিষ্ঠা-উৎসব
২. সিল্ভ্যাঁ লেভির ক্লাস
৩. সিল্ভ্যাঁ লেভি রবীন্দ্রনাথের নিকট বাংলা শিখিতেছেন
সূচীপত্র
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর���ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।