আনন্দ-তুফান/দশমী তিথি
অকালে গ্রাসিলে রাহু পূর্ণ শশধরে
কাঁদে যথা চকোরীর প্রাণ,
যামিনী বিগতা গণি’ মনে;—
তেমতি না জানি কেন ভকতের প্রাণ,
কাঁদিল দশমী-তিথি-দিনে;—
কি যেন হেরিয়া বিভীষিকা—তমোময়ী!
দুর্ব্বল-চেতনা, ভয়ে গেল পলাইয়া।
এই��ূপে যায় ক্ষণকাল,
পরে যেন আতঙ্কে কাঁপিয়া
ভক্তগণ ক’ন এ বারতা;—
“কেন মা আনন্দময়ি! নিরানন্দমুখী
নিরখি তোমারে আজ?
প্রফুল্ল নলিনী-সম তিনটী নয়ন,
কেন মা ভাসিছে তব অশ্রু-সরোবরে?
কেন মা! বিষাদ-মেঘে ঢাকা
মনোরম ও বদনশশী—মহামায়া!
পেয়েছ কি ক্লেশ কিছু
আসিয়া সংসারে—শঙ্করি?
অসম্ভব নহে কিছু তাহা।
অভাগা সংসার-বাসী ভুলেছে তোমায়, অভয়ে!
ভক্তিহীন নিরখি সবারে।
অজ্ঞ যথা, লম্ফ দিয়া উঠি’ তরুশিরে,
চাহে ভুঞ্জিতে অমিয় ফল,—
তেমতি এ মর্ত্ত্যবাসী মাগে, নিরাকার-ব্রহ্মকৃপা,
ত্যজিয়া তোমারে,ব্রহ্মময়ী!
তা’ই কি মা, বেজেছে বেদনা?
কহ দাসে, রাখ মা বিনতি,
প্রাণ কেন কাঁদিছে আমার!
কাটি’ বার মাস—বার বর্ষরূপে,
সহি’ কত যে যাতনা, হেরেছে ভকতে
তোর ও রাঙ্গা চরণ—ক্ষণকাল[১];
কেন মা, কাঁদা’স সে সবারে—
বরষিয়া অশ্রজল?
হেরিলে মায়ের কান্না,
সন্তান পারে কি কভু থাকিতে নীরবে?
আহা! লক্ষী সরস্বতী সঙ্গিনী-রূপিণী,
গণপতি, কার্ত্তিক সুমতি, সন্তানের রূপে,
স্বামিরূপে মহেশে মস্তকে,
দেখালি মা, কত লীলা,—
এক পটে- অদ্বৈতরূপিণি!
কিন্তু একি সর্ব্বনাশ! কেন কাঁদছে পরানী?
জ্ঞান হয় হারাই মা তোরে, ভব-তারা!
যে দিকে ফিরাই আঁখি,
হেরি সেই দিকে, দুঃখের কালিমা-মাখা সব।
জয়ঢাক, শুনিলে যাহার ধ্বনি
উথলিত প্রাণ-ভক্তিভরে;
শিশুদল, সাজি’ নব বাসে,
নাচিত, নমিত যাহা শুনি’
ও রাঙ্গা চরণে নরন্তর;—
বিষ আজি বাজে সে বাজনা।
জবা, বিল্বদল, পদ্ম, শুষ্ক
পাদপদ্মে তোর, কেন তারা!
শুকা’তে কি সন্তানের প্রাণপদ্ম বিষাদ সন্তাপে?
ডুবি’ বিষাদ-সাগরে দ্বিজবর,
পট্টবাস, রুদ্রাক্ষ ত্যাজিয়া,
বিরত মা, পূজিতে তোমারে, কি কারণে?
বল শিবে, বল প্রাণেশ্বরি, রাখ প্রাণ।
- ↑ ভক্তের বিবেচনায় সপ্তমী অষ্টমী নবমী তিন দিনকে ‘ক্ষণকাল’ বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে।