বিষয়বস্তুতে চলুন

রেচনতন্ত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মানব রেচনতন্ত্র

রেচনতন্ত্র (ইংরেজি-Excretory system) যে অঙ্গগুলির মাধ্যমে মানুষের দেহে বিপাকক্রিয়ায় উৎপন্ন অপ্রয়োজনীয় রেচন পদার্থ দেহ থেকে দূর হয় তাকে রেচন তন্ত্র বলে। এইটি মানুষের দেহ থেকে অতিরিক্ত ও অকেজো জিনিস বের করে। দেহকে সুস্থতা দান করা এবং দেহের বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর উপজাত হিসেবে যেসব পদার্থ তৈরি হয় যেমন- ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড,ক্রিয়েটিনিন তা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তাই দেহকে একটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য রেচন প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের মুখ্য রেচন অঙ্গ হল দুটি বৃক্ক বা কিডনি। তাছাড়া মানুষের দেহের চর্ম এবং ফুসফুস রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।[]

মানুষের বৃক্ক বা কিডনি

[সম্পাদনা]

মানবদেহে উদর-গহ্বরের পিছনদিকে দুপাশে অবস্থিত দুটি বড় শীম-বীজের মতো আকৃতিবিশিষ্ট অঙ্গই হচ্ছে বৃক্ক বা কিডনি। প্রতি কিডনিতে একটি করে রেনাল ধমনী তার শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ করে ও রেনাল শিরা দিয়ে রক্ত ফিরে আসে। লম্বচ্ছেদ কেটে পরীক্ষা করলে কিডনি- প্রাচীরের বাইরের দিকে গ্রন্থিময় কর্টেক্স (Cortex) ও ভিতরের দিকে মেডালা (Medulla) দেখা যায়। মেডালা অংশের পরবর্তী কিডনি গহ্বরকে বলা হয় পেলভিস (Pelvis)। পেলভিস থেকেই ইউরেটার বা মূত্রনালীর উদ্ভব হয়। প্রধানত কর্টেক্স অঞ্চলে ধমনী রেচন- পদার্থ দূরীকরণের উদ্দেশ্যে প্রচুর রক্ত সরবরাহ করে। এই অঞ্চলে সূক্ষ্ম রক্তবাহী জালকাকারে বিন্যস্ত হয়ে ক্যাপিলারি প্লেক্সাস (Capillary Plexus) গঠন করে। কিডনিতে রেচন-পদার্থ দূরীকরণের উপযোগী প্রচুর সংখ্যক বিশিষ্ট রকমের সূক্ষ্ম নালিকা আছে। এদের ইউরিনিফেরাস টিউব্যুল বা নেফ্রন' (Uriniferous Tubules or Nephron) বলে। প্রত্যেক কিডনিতে প্রায় ১২-১৩ লক্ষ এই ধরনের নেফ্রন দেখা যায়। প্রধানত এই নেফ্রনের অবস্থান কিডনির কর্টেক্স অঞ্চলে। নেফ্রনকে কিডনির গঠনগত ও কার্যগত একক বলা হয়। নেফ্রনের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পদার্থগুলি পুনঃশোষিত হয়। অপ্রয়োজনীয় রেচন পদার্থ গুলি জলের সাথে মিশে মূত্র তৈরি করে। মূত্র মূত্রনালী দিয়ে মূত্রথলিতে এসে সাময়িকভাবে জমা হয়। রোধ হলিতে প্রায় ৪০০ মিলিমিটার মূত্র জমা হওয়ার পর মানুষের মূত্র ত্যাগের ইচ্ছা প্রবল হয়। এই মূত্র ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন ক্রিয়েটিনিন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি রেচন পদার্থ দেহ থেকে বেরিয়ে আসে। ফলে মানুষ সুস্থ থাকে।[]

চর্ম এবং ফুসফুস

[সম্পাদনা]
চর্ম (Skin)
আমাদের চামড়ার মধ্যে আণুবীক্ষণিক, কুণ্ডলী পাকানো,সরু নলের মতো একপ্রকার গ্রন্থি দেখা যায়। এদের ঘর্মগ্রন্থি (Sweat glands) বলে। দেহচর্মের রক্তবাহিকা থেকে উদ্ভূত কৈশিকনালীসমূহ ঘর্ম গ্রন্থির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকে। রক্ত হতে বিভিন্ন রেচন পদার্থ ঘর্মগ্রন্থিতে শোষিত হয় ও নালীর মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়। এই তরল বস্তুই ঘর্ম বা ঘাম। সাধারণত ঘামের সাথে জল, সোডিয়াম ক্লোরাইড বা সাধারণ লবণ ও নাইট্রোজেন-ঘটিত রেচন পদার্থ যেমন ইউরিয়া ইত্যাদি নির্গত হয়। এই কারণে চর্মকে মেলে-রাখা কিডনি (Unrolled Kidney) বলা হয়ে থাকে।
ফুসফুস (Lungs)
দেহ থেকে কার্বনডাই অক্সাইড দূরীভূত করে ফুসফুস রেচন ক্রিয়ায় অংশ নেয়। কোষ-শ্বসনের ফলে কার্বনডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয় যা দেহের পক্ষে ক্ষতিকারক। কার্বনডাইঅক্সাইড যুক্ত রক্ত ফুসফুসের অ্যালভিওলাই (Alveoli)-এ আসে এবং ব্যাপন ক্রিয়ায় রক্তের কার্বনডাইঅক্সাইড ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুসে গৃহীত কার্বনডাইঅক্সাইড নিশ্বাসের সাথে দেহের বাইরে আসে। ফুসফুসের মাধ্যমে দেহ থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড পরিত্যাগের ব্যাপারকে গ্যাসীয় রেচন (Gaseous excretion) বলা হয়। কার্বনডাই অক্সাইড ছাড়া অতিরিক্ত জলও বাষ্পাকারে নিশ্বাসের সঙ্গে দেহ থেকে পরিত্যক্ত হয়। প্রতিদিন আমরা প্রায় ৪০০ গ্রাম জল এইভাবে দেহ থেকে ত্যাগ করি।[]

তথ্য সূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বই উদ্ধৃতি:শারীর বিদ্যা, লেখক:তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শিরোনাম:মানুষের রেচন, প্রকাশক=শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, বছর ১৯৭৬, পাতা ৮৬-৯১
  2. বই উদ্ধৃতি: শারীর বিদ্যা, লেখক:তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শিরোনাম:মানুষের রেচন, প্রকাশক:শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, বছর:১৯৭৬ পৃঃ ৮৮-৯১
  3. বই উদ্ধৃতি:শারীর বিদ্যা,লেখক: তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী, শিরোনাম:মানুষের রেচন, প্রকাশক:শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, বছর:১৯৭৬ | পৃ.৮৮-৯১