বানৌজা ঈসা খান
বানৌজা ঈসা খান | |
---|---|
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অংশ | |
চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিভাগ | |
ধরন | নৌ ঘাঁটি |
ভবন/স্থাপনা/ক্ষেত্রের তথ্য | |
মালিক | বাংলাদেশ নৌবাহিনী |
নিয়ন্ত্রক | বাংলাদেশ নৌ বাহিনী |
ভবন/স্থাপনা/ক্ষেত্রের ইতিহাস | |
নির্মিত | ১০ ডিসেম্বর ১৯৭৪ |
ব্যবহারকাল | ১৯৭৪ - বর্তমান |
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি বানৌজা ঈসা খান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত। এ ঘাঁটি ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর কমিশন লাভ করে । বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য অপারেশনাল প্রশিক্ষণ পরিচালনাসহ নৌ বহরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করাই এ ঘাঁটির প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া এ ঘাঁটি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে কক্সবাজার, চানুয়া এবং সেন্ট মার্টিসের ন্যায় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ FORWARD BASE এর কার্যক্রমও পরিচালনা করে। ৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বানৌজা ঈসা খানকে জাতীয় মানদণ্ড পুরস্কার প্রদান করেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি
[সম্পাদনা]বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে এ ঘাঁটির নাম ছিল পিএনএস বখতিয়ার। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে এটি “চট্টগ্রাম নৌ ঘাঁটি” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীকালে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর এ ঘাঁটি পুনঃকমিশন করে নামকরণ করেন বানৌজা ঈসা খান । ৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বানৌজা ঈসা খানকে জাতীয় মানদণ্ড পুরস্কার প্রদান করে।
ঈসা খান ছিলেন আমাদের জাতীয় বীর যিনি পরাক্রমশালী মুঘলদের বিরুদ্ধে বীরোচিতভাবে যুদ্ধ করেন । নৌ বাহিনী ছিল তার সামরিক বাহিনীর মূল চালিকা শক্তি। স্বাধীনতা রক্ষায় বীরত্বের স্বীকৃতি হিসাবে ঈসা খানের নামানুসারে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটির নামকরণ যথার্থ। ভাটির (পূর্ব বাংলা) শাসক এবং ভূঁইয়াদের নেতা ঈসা খান ১৫২৯ সালে জন্ম লাভ করেন। পিতা সোলায়মান খান ছিলেন আফগানিস্তানের সোলায়মান পার্বত্য অঞ্চলের এক আফগান দলপতির বংশধর, যিনি বাংলায় বসতি স্থাপন করে বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার উত্তর পূর্ব অংশ নিয়ে এক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । ইসলাম শাহ শূরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সোলায়মান ১৫৪৮ সালে নিহত হন ।
জীবদ্দশায় ঈসা খান বিভিন্ন সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করেন। ১৫৭৮ সালে মুঘল সুবাহদার খান জাহান পূর্ববাংলা আক্রমণ করেন । ঈসা খান মুঘল-বিরোধীতায় অটল থাকলে শাহ বরদী ও মুহম্মদ কুলীর নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে এক বিশাল মুঘল নৌ বাহিনী পাঠানো হয়। বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কস্তুল নামক স্থানে প্রচন্ড যুদ্ধে মুঘল বাহিনী পরাজয় বরণ করে এবং ভাটি অঞ্চল ত্যাগ করতে বাধ্য হয় । কিন্তু ১৫৯৭ সালে মানসিংহের পুত্র দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে মুঘল বাহিনী স্থল ও জল পথে ঈসা খানের রাজধানী কাত্রাবোও আক্রমণ কৰে । ঐ বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুর থেকে ১২ মাইল দূরে দুপক্ষের মধ্যে এক নৌ যুদ্ধে দুর্জন সিংহ নিহত হন এবং মুঘল বাহিনী বিধ্বস্ত হয় । ঈসা খান ১৫৯৯ সালে প্রায় ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ।
ঈসা খান দক্ষতার সঙ্গে মুঘল ত/গ্রাসন প্রতিহত করে সিকি শতাব্দী ধরে প্রচন্ড আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজের স্বাধীনতা বজায় রাখেন। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ পাদে, মুঘল সাম্রাজ্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় ঈসা খানের সফল সংগ্রাম তাঁকে বাংলার অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। তাঁর অসামান্য কর্মজীবন বাঙ্গালীদের মনকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল, যা পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে রচিত গাথা, নাটক, উপন্যাস ও দেশাত্ববোধক গানে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়েছে ।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]বানৌজা ঈসা খান বর্তমানে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ এলাকা (কমচিট)এর অধীনে রয়েছে। ঈসা খানে ১৮০০ জন কর্মী কাজ করে। ঈশা খান অফিসার ও নাবিকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নৌবাহিনী ঘাঁটি হিসাবে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় এখানে অবস্থিত।