নবাব আবদুল লতীফ
উইকিপিডিয়ার ভূমিকাংশ নীতিমালা অনুসারে, এই নিবন্ধের ভূমিকাংশটি পুনরায় পরিষ্কার করে লেখা প্রয়োজন। (নভেম্বর ২০২১) |
নবাব আবদুল লতিফ | |
---|---|
জন্ম | মার্চ, ১৮২৮ |
মৃত্যু | ১০ জুলাই, ১৮৯৩ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা মাদ্রাসা |
পেশা | সরকারি কর্মকর্তা |
পুরস্কার | নবাব, খানবাহাদুর, সি.আই.ই., নবাববাহাদুর, অর্ডার অব দি মাজিদি |
নবাব আবদুল লতিফ (১৮২৮ - ১৮৯৩) ১৯শ শতকের বাঙালি মুসলিম শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী। তাকে ‘মুসলিম রেনেসাঁর অগ্রদূত’ বলা হয়। তিনি মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা। সমাজের নানান ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তাকে খানবাহাদুর, নবাব প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
জন্ম ও পরিবার
[সম্পাদনা]নবাব আবদুল লতিফ ফরিদপুর জেলার ভূষণা থানার (বর্তমান বোয়ালমারী উপজেলার) অন্তর্গত রাজাপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী—পরিবারে ১২৪৩ হিজরি মুতাবেক ১৮২৮ সালের মার্চ মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কাজী ফকির মুহাম্মাদ ছিলেন কলকাতা সদর দেওয়ানি আদালতের আইনজীবী। কবি আব্দুল গফুর নাস্সাখ তার ছোটভাই।
শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অণুধাবন করে তার পিতা তাকে আরবির সাথে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে কলকাতা মাদ্রাসায় ভর্তি করান। সেখানেই তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ইংরেজি, আরবি, ফার্সি ও উর্দু ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করেন।
কর্মজীবন ও লেখালেখি
[সম্পাদনা]আবদুল লতিফের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। পরবর্তীতে তিনি ইংরেজি ও আরবির অধ্যাপক হিসেবে কলকাতা মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৮৭৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্সী ��্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হন।
নওয়াব আব্দুল লতিফ আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের মেহরাব পাবলিকেশন আত্মজীবনীটি প্রকাশ করে। আত্মজীবনীটির সম্পাদনা করেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মোহাম্মদ মোহর আলী। তবে উপরি পাওনা হল, আত্মজীবনীর পাশাপাশি তার অন্য কিছু লেখাও বইটিতে সংযোজিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিনি মধুসূদন দত্ত ও ভূদেব মুখোপাধ্যায় এর সহপাঠী ছিলেন। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নবাব আরো পরে নবাব বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন।
অবদান
[সম্পাদনা]ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে সাতক্ষীরায় থাকাকালীন সময়ে তিনি সেখানকার দরিদ্র নীল চাষীদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশা দূরীকরণে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠনেও তার অবদান ছিল। ১৮৬৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো মনোনীত হন। শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রেও তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম উপলব্ধি করেন যে, বাংলার মুসলিম যুবক শ্রেণীর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আধুনিক শিক্ষা সম্পর্কে মুসলমানদের অনীহার দরুন তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে আছে। মুসলমানদের এই আত্মঘাতী কুসংস্কার দূর করার জন্য তিনি সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষাগ্রহণের জন্য তিনি দুই ধরনের নীতি গ্রহণ করেছিলেন। প্রথমত ব্রিটিশের নতুন শাসন পদ্ধতির সুফল ভোগ করার জন্য মুসলমানদের প্রস্তুত করার এবং দ্বিতীয়ত, ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতি তাদের আনুগত্যের ভাব সৃষ্টি করা এবং এভাবে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের সন্দেহ ও অনীহা দূর করা। তিনি শাসক শ্রেণীর সঙ্গে যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ পরিহারের জন্য মুসলমানদের আহ্বান জানান। তিনি জৌনপুরের মাওলানা কেরামত আলীর মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বর্ষ ‘দারুণ হারব’ নয় বরং ‘দারুল ইসলাম। এভাবে উনিশ শতকে মুসলমানদের প্রধান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
বাংলার মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি ১৮৬৩ সালে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই সালে তিনি কলকাতায় মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১] এ সোসাইটির লক্ষ্য ছিল আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলা এবং শিক্ষিত মুসলমান, হিন্দু ও ইংরেজদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে পারস্পরিক কল্যাণ নিশ্চিত কথা। তাঁর প্রচেষ্ঠায় কলকাতা মাদ্রাসায় ইস্ট-ফার্সি বিভাগ খোলা হয় এবং সেখানে উর্দু ও বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাঁরই চেষ্টার ফলে মহসীন ফান্ডের টাকা মুসলমানদের শিক্ষার কাজে সংরক্ষিত করা হয়। রাজশাহী সরকারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি স্যার সৈয়দ আহমদ খান প্রতিষ্ঠিত আলিগড়ের বৈজ্ঞানিক সোসাইটির সক্রিয় সদস্যও ছিলেন।[২]
সম্মাননা
[সম্পাদনা]তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৮৭৭ সালে তাকে ‘খান বাহাদুর’ ও ১৮৮০ সালে ‘নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৮৮৩ সালে তিনি 'সি.আই.' এবং ১৮৮৭ সালে উচ্চতর সম্মানের প্রতীক ‘নওয়াব বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত হন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]আবদুল লতিফ ১৮৯৩ সালের ১০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ahmad, Syed Nesar (১৯৯১)। Origins of Muslim Consciousness in India: A World-system Perspective (ইংরেজি ভাষায়)। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা ৭৯। আইএসবিএন 978-0-313-27331-5।
- ↑ Azmi, Arshad Ali (১৯৬৯)। "THE ALIGARH SCIENTIFIC SOCIETY 1864-1867"। Proceedings of the Indian History Congress। 31: 414–420। আইএসএসএন 2249-1937।
- ↑ "নওয়াব আবদুল লতিফ - bdbiography.com"। bdbiography.com। ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৬।
- উইকিপ্রকল্পের উইকিফাই অনুযায়ী নিবন্ধসমূহ রক্ষা
- উইকিপ্রকল্পের উইকিফাই অনুযায়ী সমস্ত নিবন্ধসমূহ রক্ষা
- ১৮২৮-এ জন্ম
- ১৮৯৩-এ মৃত্যু
- বাঙালি মুসলিম
- ফরিদপুর জেলার ব্যক্তি
- মাদ্রাসা-ই আলিয়া, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- মাদ্রাসা-ই আলিয়া, কলকাতার শিক্ষক
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো
- ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি
- বাঙালি রাজনীতিবিদ
- সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাঙালি শিক্ষাবিদ
- পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাবিদ
- বাংলার খেতাবি নবাব