ঢোপখেল
ঢোপখেল, এছাড়াও প্রতিবর্ণীকরণ করে ঢপ খেল এবং ঢুপ খেল (অসমীয়া: ঢোপখেল), হল একটি ঐতিহ্যবাহী বল খেলা যেটি ভারতের আসাম রাজ্যে খেলা হয়। দুটি দলের মধ্যে এই খেলা হয় এবং উভয় দলে এগারোজন খেলোয়াড় থাকে। এটি চারটি পতাকা দ্বারা আবদ্ধ একটি মাঠে খেলা হয়, মাঠটির মাপ ১২৫ মিটার × ৮০ মিটার। খেলোয়াড়রা পালাক্রমে প্রতিপক্ষের দিকে বল ছোঁড়ে। কৌশল করে বিপক্ষের খেলোয়াড়কে এড়িয়ে বলটিকে ধরতে হবে। এই খেলাটি গতি, অদম্য মানসিক শক্তি এবং অ্যাক্রোবেটিক দক্ষতার একটি পরীক্ষা।[১]
ঐতিহ্যগতভাবে বসন্ত ও বিহু নববর্ষের উৎসব পালনের জন্য এই খেলাগুলি তৈরি করা হয়েছিল।[২] খেলাটি একবার দর্শকদের জন্য খেলা হিসেবে আহোম রাজ সদস্যদের আনন্দ দেওয়ার জন্য খেলা হয়েছিল। আসামে এখন এটি আর ব্যাপকভাবে খেলা হয় না, যদিও এটিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।[৩]
ঢোপখেলের খেলার মাঠ
[সম্পাদনা]খেলার মাঠটির দৈর্ঘ্য ১২৫ মিটার এবং প্রস্থ ৮০ মিটার, কেন্দ্রীয় বিন্দুটি খেলার ক্ষেত্রের একেবারে মাঝখানে। কেন্দ্রীয় বিন্দুর দুই পাশে ১২৫ ফুট দূরত্বে দুটি সরল রেখা (কাই) আঁকা হয়। যেখানে কাই রেখাদুটি ১২৫ মিটার রেখার সাথে মিলিত হয়, সেই চারটি বিন্দুতে চারটি পতাকা চার কোণায় লাগানো হয়। এগুলি চুকর নিশান নামে পরিচিত। দুটি অর্ধাংশ থেকে সমান দূরত্বে অবস্থিত কেন্দ্রীয় বিন্দুটি একটি বৃত্ত দ্বারা বেষ্টিত থাকে। সেটি ঘের নামে পরিচিত।[৪][৫]
কীভাবে ঢোপখেল খেলতে হয়
[সম্পাদনা]এই খেলাটি খেলতে একটি রাবার বল ব্যবহার করা হয় যাকে বলা হয় 'ঢোপ'। মাঠে দুটি দল মুখোমুখি হয়, প্রতি দলে ১১ জন খেলোয়াড় থাকে। শুরুতে তাদের বলা হয় ঘাই। একজন খেলোয়াড় খেলা শুরু করে বাতাসে ঢোপ ছুঁড়ে, প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে নিক্ষেপ করার অভিপ্রায়ে। যদি বল প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে নামানো না যায়, তবে তা আবার নিক্ষেপ করতে হয়। যদি এটি প্রতিপক্ষের ক্ষেত্রে পৌঁছোয় তবে এটিকে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে হাতে ধরতে হবে নাহলে তারা নিক্ষেপ করার সুযোগ হারাবে। সেইক্ষেত্রে খেলোয়াড়কে, যেভাবে খেলা শুরু হয়েছিল, তার অনুরূপ একটি সহজ উচ্চ নিক্ষেপ দিতে হবে বিপক্ষ দলকে। মাঠের বিপরীত প্রান্তের ঘেরে দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়কে বলা হয় 'কাটোনি'। খেলোয়াড় যদি বলটি ধরে ফেলে তবে সে ক্ষেত্রের ঘেরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের কাটোনির দিকে ধোপ নিক্ষেপ করার সুযোগ পায়। কাটোনি খেলোয়াড় বল ধরতে ব্যর্থ হলে দল নিক্ষেপের সুযোগ হারায় এবং অন্য দল বল নিক্ষেপের সুযোগ পায়। যদি কাটোনির কোমরের নিচে বল লাগে তাকে বলা হয় কোটা এবং কাটোনি পরিণত হয় 'হোইয়া' বা 'বন্ধা' তে। সে তখন আর ঘাই থাকেনা (যা খেলার শুরুতে সমস্ত খেলোয়াড় থাকে)।[৪][৫]
বন্ধার কাজ তখন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাকে প্রতিপক্ষ দলের কাছে চলে যেতে হবে, তাদের ঢোপ ধরা থেকে বিরত রাখতে হবে এবং নিজেই ঢোপ ধরার চেষ্টা করতে হবে। যাইহোক, যদি সে সফলভাবে ঢোপটি ধরতে পারে, তার পরবর্তী কাজটি হবে প্রতিপক্ষের কারো দ্বারা স্পর্শ লাগার আগে নিজের দলের দিকে চলে যাওয়া। এই কৌশলকে আউলিয়া বলা হয়। এই কাজটি সফল ভাবে সম্পন্ন করতে পারলে সে আবার ঘাই হয়ে যায়। এই প্রয়োগকে হোরা বলা হয়। তার নিজের দলে পুনরায় ফিরে যাবার চেষ্টা করার সময় সে যাতে খেলার মাঠের বাইরে বেরিয়ে না যায় সে বিষয়টিও তাকে নিশ্চিত করতে হয়।[৪]
যদি একটি দল দশজন ঘাইকেই হারায় অর্থাৎ তারা বন্ধা হয়ে যায়, তবে দলের একমাত্র অবশিষ্ট খেলোয়াড়কে বলা হয় ঘাই কাটোনি। যদি বিরোধীরা তাকে কোটা অবস্থায় ফেলে দিতে পারে, তখন হয় পিরিউঠা। এর অর্থ দলটি খেলায় জিতেছে। অন্যদিকে, উভয় দলের সমান সংখ্যক ঘাই থাকলে, খেলাটি অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Traditional Sports in India"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "Rare dhop khel organized at Jamugurihat"। Assam Tribune। ২৫ এপ্রিল ২০০৮।
- ↑ Das, Gaurav (২০ এপ্রিল ২০১২)। "Kids, adults now game for traditional Assamese sports"। The Times of India। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ক খ গ ঘ "Dhopkhel, Traditional Games"। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২২।
- ↑ ক খ "Dhopkhel- The Indigenous Game of Assam"। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০২২।