উম্মে আইমান
বারাকা বিনতে ছা'লাবা | |
---|---|
অন্যান্য নাম | উম্মে আয়মান |
দাম্পত্য সঙ্গী | উবাইদ ইবনে যাইদ (মৃত্যু ৬১২) যাইদ ইবনে হারিসা (৬১৪ থেকে - ৬২৯ তার মৃত্যু পর্যন্ত) |
সন্তান | আয়মান ইবনে উবাইদ (পুত্র) উসামা ইবনে যায়িদ (পুত্র) |
পিতা-মাতা | ছা'লাবা ইবনে আমর |
বারাকা বিনতে ছা'লাবা (আরবি: بَـرَكَـة بنت ثَعلَبَة), সচরাচর পরিচিত তার উপনাম উম্মে আয়মান (আরবি: أمّ أيمن) হিসাবে। তিনি ছিলেন প্রথম দিকের মুসলিম এবং ইসলামের নবী মুহাম্মদের একজন সাহাবী।
তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ এর পিতা-মাতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং আমিনা বিনতে ওয়াহাব এর একজন আবিসিনিয়ান দাসী। আমিনার মৃত্যুর পর তিনি মুহাম্মাদকে পিতামহ আবদুল মুত্তালিব এর বাড়িতে নিয়ে আসেন। তিনি তাকে মায়ের মতো দেখতেন।
পরবর্তীতে মুহাম্মদ তাকে মুক্ত করে দেন, কিন্তু তিনি মুহাম্মাদ এবং তার পরিবারের সেবা করতে থাকেন। তিনি প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং উহুদ এবং খাইবার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
তার মুক্তির পর মুহাম্মাদ প্রথমে বনু খাযরাজের উবাইদ ইবনে যাইদের সাথে তার বিবাহের ব্যবস্থা করেন। সেখানে আয়মান ইবনে উবাইদ নামে তার একটি ছেলে ছিল। পরবর্তীতে তিনি উপনাম হিসাবে উম্মে আয়মান (অর্থ- আয়মানের মা) গ্রহণ করেন।
প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি মুহাম্মাদের পালক পুত্র যাইদ ইবনে হারিসাকে বিয়ে করেন। তার পুত্র উসামা ইবনে যাইদ প্রথমদিকে মুসলিম যোদ্ধাদের সেনাপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
পটভূমি
[সম্পাদনা]বারাকা ছিলেন আবিসিনিয়ান সা'লাবা বিন আমরের কন্যা। [১] তিনি আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল-মুত্তালিব এবং আমিনা বিনতে ওয়াহবের পরিবারের দাসী হিসেবে কাজ করেছিলেন। আমিনার মৃত্যুর পর তিনি মুহাম্মাদের দাসী হন। [২]
মুহাম্মদের শৈশব
[সম্পাদনা]আল-আবওয়াতে আমিনার মৃত্যুর পর, বারাকা মুহাম্মদের দেখাশোনা করেন এবং তার সাথে মক্কায় তার দাদা আব্দুল-মুত্তালিব ইবনে হাশিমের বাড়িতে চলে যান। যেখানে তিনি তার শৈশবকালে [৩] এবং তারপ���ে [৪] যৌবনে তার সেবা করেছিলেন। [৫]
ইবনে কাসিরের মতে, মুহাম্মদের পিতামহ আবদুল-মুত্তালিব ইবনে হাশিম বারাকাকে তার নাতিকে অবহেলা না করার জন্য বলেছিলেন, বিশেষ করে আহলে কিতাবের অনেকের মতো ( আরবি: أَهـل الـكِـتـاب ), কিতাব ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, তিনি জাতির একজন নবী হবেন। [৬]
বিয়ে এবং সন্তান
[সম্পাদনা]মুহাম্মদ যখন খাদিজাকে বিয়ে করেন, তখন তিনি বারাকাকে মুক্ত করেন এবং উবাইদ ইবনে যাইদ নামে একজন খাজরাজ গোত্রের সাহাবীর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এই বিবাহের মাধ্যমে বারাকা আয়মান নামে একটি পুত্রের জন্ম দেন এবং এইভাবে তিনি "উম্মে আয়মান" ("আয়মানের মা") নামে পরিচিত হন। [৭] খায়বার যুদ্ধে উবাইদ নিহত হন। [৮] আয়মান ইবনে উবাইদ পরবর্তীতে হুনাইনের যুদ্ধে নিহত হন। [৯]
পরবর্তীতে মুহাম্মদের পালক পুত্র জাইদ ইবনে হারিসা বারাকাকে বিয়ে করেন।
বারাকাকে বিয়ে করেন।
উসামা নামে তাদের একটি পুত্র ছিল। যিনি মুহাম্মদ কর্তৃক একজন সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং উসামা বিন যাইদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত সফল অভিযানের নেতৃত্ব দেন। [১০]
হিজরত
[সম্পাদনা]মুহাম্মদ তার নবুওয়াত ঘোষণা করার পর, উম্মে আয়মান তার প্রথম অনুসারীদের একজন হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মদিনায় হিজরত করেন। [১১]
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
[সম্পাদনা]উহুদ যুদ্ধে উম্মে আয়মান উপস্থিত ছিলেন। তিনি সৈন্যদের জন্য পানি আনেন এবং আহতদের চিকিৎসায় সাহায্য করেন। তিনি খায়বার যুদ্ধে মুহাম্মদের সাথে ছিলেন। [১২]
উহুদের যুদ্ধে মুহাম্মদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে অনেক লোক মদিনার দিকে পালিয়ে যায়। উম্মে আয়মান কিছু পলাতক ব্যক্তির মুখে ধুলো ছিটিয়ে দেন এবং তাদেরকে বলছিলেন: "আমাকে তোমাদের তরবারি দিয়ে দাও।" অতঃপর তিনি বেশ কয়েকজন নারীর সাথে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে গেলেন। [১৩] পরবর্তীতে তিনি একটি তীর দ্বারা আহত হন, যা হেব্বান বিন আরাকা নামে একজন শত্রু সৈন্য তাকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেছে। [১৪]
অন্যান্য প্রাথমিক মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]মুহাম্মদ উম্মে আয়মানকে খুবই পছন্দ করতেন, এমনকি তাকে মায়ের মতো ভাবতেন। [১৫] মুহাম্মদের বেশ কিছু হাদিসে তার জন্য সম্মান সূচক কথা উল্লেখ আছে। [১৬] তিনি উম্মে আয়মানের বাড়িতে যাতায়াত করতেন এবং তার পরে খলিফা আবু বকর এবং উমরও একই কাজ করেছিলেন। [১৭] জান্নাতে উম্মে আয়মানের মর্যাদা সম্পর্কে কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। [১৮] শিয়া সূত্রেও তার প্রশংসা করা হয়। [১৯]
তার থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [২০] আনাস ইবনে মালিক, আবু ইয়াজিদ মাদানী এবং হানাশ ইবনে আবদুল্লাহ সান'আনি তার থেকে বর্ণনা করেছেন। [২১]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]উম্মে আয়মানের মৃত্যুর সঠিক তারিখ স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ বলেছেন যে তিনি মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় পাঁচ মাস পরে ম��রা গিয়েছিলেন। [২২] কিন্তু ইবনে সা'দের মতে, [২৩] তিনি উসমানের খেলাফতের প্রথম দিকে জীবিত ছিলেন। [২৪]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Zuhri, p 177; al-Tabarani, vol. 25, p. 86
- ↑ Ibn Sa`d, vol. 8, p. 223; Baladhuri, vol.1, p. 96
- ↑ Ibn Qutaybah, p. 150
- ↑ Baladhuri, vol.1, p.472
- ↑ Ibn Hajar, al-Ithaba, vol.8, p. 380
- ↑ ibn Kathir, al-Bidayah wa al-Nihayah, vol. 2, p. 343
- ↑ Ibn Sa`d, vol. 8, p. 223; Ibn Sa`d, vol. 4, p. 61
- ↑ Sadeqi Ardestani, Ahmad (১৯৯৮)। Zanane daneshmand wa ravi hadith=the learned and narratar women। পৃষ্ঠা 3।
- ↑ mahallati, vol.2, p. 26
- ↑ Baladhuri, vol.1, p.96
- ↑ Baladhuri, vol. 1, p. 269
- ↑ Al-Waqidi, vol.1, p. 241, 250, vol.2, p. 685; Ibn Sa`d, vol. 8, p. 225; Baladhuri, vol. 1, p.
- ↑ Bahr al-Ulum, MuhammadAli, translate by Muhammad Ali Amini,(1979), Woman of early Islam, Hekmat
- ↑ Ibn Athir, Ali (২০০৯)। al-Kamil fi al-Tarikh. vol. 2। Dar Ihya al-Turath al-Arabi। পৃষ্ঠা 160।
- ↑ Ibn Sa`d, vol. 8, p. 223
- ↑ Ibn Sa`d, vol. 8, p. 223-226; Al-Dhahabi, vol. 2, p. 224
- ↑ Muslim ibn al-Hajjaj, vol. 2, p. 1907; Ibn Majah, vol. 2, p. 523-524; ibn Abd al-Birr, vol. 4, p. 1794
- ↑ Muslim ibn al-Hajjaj, vol. 2, p. 1907-1908
- ↑ Al-Kulayni, vol. 2, p. 405; Ibn Babawayh, p. 76
- ↑ Ahmad ibn Hanbal, vol. 2, p. 421; al-Tabarani, vol. 25, p. 87-91; Ibn Majah, vol. 2, p. 1107
- ↑ Ibn Hajar, vol. 12, p. 459
- ↑ al-Tabarani, vol. 25, p. 86; quoted from Zuhri
- ↑ Ibn Sa`d, vol. 8, p. 226
- ↑ al-Tabarani, vol. 25, p. 86; Al-Dhahabi, vol.2, p. 227