শব্দের তীব্রতা
শব্দ পরিমাপ | |
---|---|
বৈশিষ্ট্য | প্রতীক |
শব্দের চাপ | p, SPL,LPA |
কণার বেগ | v, SVL |
কণার সরণ | δ |
শব্দের তীব্রতা | I, SIL |
শব্দের ক্ষমতা | P, SWL, LWA |
শব্দের শক্তি | W |
শব্দের শক্তি ঘনত্ব | w |
শব্দ এক্সপোজার | E, SEL |
শব্দের প্রতিরোধ | Z |
শব্দের কম্পাঙ্ক | AF |
ট্রান্সমিশন ক্ষয় | TL |
বিশ্বকোষীয় পর্যায়ে যেতে এই নিবন্ধে আরো বেশি অন্য নিবন্ধের সাথে সংযোগ করা প্রয়োজন। |
শব্দের তীব্রতা বা ধ্বনি তীব্রতা বলতে শব্দতরঙ্গ যে দিকে সঞ্চারিত হচ্ছে, তার সাথে লম্বভাবে প্রতি একক সময়ে প্রতি একক ক্ষেত্রফল এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শক্তির পরিমাণকে বোঝায়। শব্দের তীব্রতার মান ও দিক উভয়ই বিদ্যমান, তাই এটি একটি সদিক বা ভেক্টর রাশি। শব্দের তীব্রতার মানকে শক্তির এককে পরিমাপ করা হতে পারে, যেমন মাইক্রোজুল/সেকেন্ড/বর্গসেন্টিমিটার। এটিকে ক্ষমতার এককেও পরিমাপ করা হতে পারে, যেমন আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে (এসআই) এর একক ওয়াট/বর্গমিটার (W/m2)। এছাড়া ওয়াট/বর্গসেন্টিমিটার, মাইক্রোওয়াট/বর্গসেন্টিমিটার এককগুলিও প্রচলিত। সাধারণত কোনও শ্রোতার অবস্থানে বাতাসে শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করা হয়। এটি একটি বস্তুনিষ্ঠ ভৌত পরিমাপ, তাই শ্রোতার শ্রবণক্ষমতা নির্বিশেষে এটির পরিমাপ সম্ভব।
শব্দের তীব্রতাকে একই কম্পাংকের অপর একটি প্রসঙ্গ শব্দের তীব্রতার সাথে তুলনা করা যায়। মানুষের কানে শোনা কোনও শব্দের তীব্রতাকে প্রায় ১০০০ হার্জ কম্পাংকের একটি প্রসঙ্গ শব্দের তীব্রতার সাপেক্ষে নির্দেশ করা হয়, যাকে শ্রবণসীমা (threshold of hearing) বলে। শ্রবণসীমার শব্দের তীব্রতার মান হল ১০−১২ ওয়াট/বর্গমিটার। এটি হল একটি স্বাভাবিক কানে শুনতে পাওয়া সবচেয়ে কম তীব্র শব্দ। কানে শোনা প্রদত্ত কোনও শব্দের তীব্রতা I-কে শ্রবণসীমার তীব্রতা Iref দ্বারা ভাগ করে সেটির লগারিদম নিলে বেল এককে (মার্কিন উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের সম্মানে) শব্দের তীব্রতার স্তর (Sound intensity level) প্রকাশ পায়, অর্থাৎ বেল এককে শব্দের তীব্রতার স্তরের সূত্রটি হল log10(I/Iref) B। অন্য ভাষায় I-এর তীব্রতা যদি Iref-এর দশগুণ হয়, তাহলে সেটির শব্দের তীব্রতার স্তর হবে log10(10) বেল = ১ বেল। ডেসিবেল হল বেলের দশভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ শব্দের তীব্রতার স্তরের বেল এককের মানটিকে দশ দিয়ে গুণ দিলে ডেসিবেল এককের মানটি পাওয়া যাবে, যার সূত্র হল 10xlog10(I/Iref) dB। স্বাভাবিক মানুষের কান সর্বনিম্ন মোটামুটি ১ ডেসিবেল (অর্থাৎ ০.১ বেল) সমান শব্দের তীব্রতার হেরফের শনাক্ত করে[১][২] (কোনও রকমে লক্ষণীয় পার্থক্য Just noticeable difference), তাই বেলের পরিবর্তে ডেসিবেল এককটি ব্যবহার করা হয়। উপরের সমীকরণ থেকে বের করা যায় যে ১ ডেসিবেল পরিবর্তনে শব্দের তীব্রতার ২৬% পরিবর্তন হয়।
সংজ্ঞানুযায়ী শ্রবণসীমাতে শব্দের তীব্রতার স্তরের ডেসিবেল এককে মান হল 10xlog10(Iref/Iref) = 10xlog101 = 10x0 = 0 dB অর্থাৎ শূন্য ডেসিবেল। মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনের শব্দের তীব্রতা হল ১০−৮ ওয়াট/বর্গমিটার। সুতরাং এটির শব্দের তীব্রতার স্তর হল 10xlog10(10−8/10−12) = 40 dB (চল্লিশ ডেসিবেল)।
শব্দবিজ্ঞানের অন্যান্য ধারণার সাথে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]শব্দের আলোচনায় শব্দের শক্তি, শব্দের ক্ষমতা, শব্দের তীব্রতা, শব্দের চাপ ও শব্দের উচ্চতা কিছু ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কিন্তু স্বতন্ত্র ধারণা। শব্দের শক্তি হল কোনও শব্দ সৃষ্টিকারী উৎস কম্পিত হয়ে চারপাশের বায়ু (বা অন্য মাধ্যমের) অণুগুলিকে নড়ানোর জন্য যে কাজ করে বা শক্তি ব্যয় করে, সেই শক্তি। এটিকে জুলে পরিমাপ করা হয়। শব্দের ক্ষমতা হল সময়ের সাপেক্ষে শক্তি ব্যয়ের হার। অর্থাৎ শব্দের কম্পমান উৎসটি প্রতি একক সময়ে (সাধারণত এক সেকেন্ডে) আশেপাশের মাধ্যমে অণুগুলিতে যতটুকু শব্দশক্তি সঞ্চারিত করছে, তাই হল শব্দের ক্ষমতা। শব্দের ক্ষমতাকে জুল/সেকেন্ড তথা ওয়াট এককে পরিমাপ করা হয়। যখন শব্দের উৎসটি কম্পিত হয় না, তখন এর আশেপাশের বায়ুর চাপ হবে স্থির বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান, কিন্তু শব্দের উৎসটি যখন কাঁপাতে শুরু করে ও শব্দ উৎপন্ন করে, তখন উৎসটি একটি মুহূর্তে বাতাসের অণুগুলিকে একবার ঠেলা দেয় ও এগুলি একে অপরের সাথে ঠেসে যায় অর্থাৎ একটি সংকুচিত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়, কিন্তু ঠিক তার পরের মুহূর্তে উৎসটি পিছিয়ে যায়, ফলে বাতাসের অণুগুলির ঘনত্ব বা ঠাসাঠাসি কমে যায় অর্থাৎ একটি প্রসারিত অঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এভাবে একসারি অণু তাদের সামনের সারির অণুগুলিতে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই সংকোচন-প্রসারণ অঞ্চল দুইটিকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গরূপে সামনের দিকে অগ্রসর করাতে থাকে। এখন প্রতি একক ক্ষেত্রফল এলাকাতে চলমান অণুগুলি যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করে, তাই হল ঐ শব্দের উৎসের শব্দের চাপ। একে নিউটন/বর্গমিটার তথা পাস্কাল এককে পরিমাপ করা হয়।
শব্দের ক্ষমতা ও শব্দের তীব্রতার সম্পর্ক
[সম্পাদনা]শব্দের কোনও উৎস থেকে একক সময়ে কতটুকু শব্দশক্তি নিঃসৃত হচ্ছে, তাই হল শব্দের ক্ষমতা। শব্দ উৎস থেকে কোথায় বা কত দূরত্বে শোনা হচ্ছে বা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, কিংবা উৎস থেকে বিভিন্ন দূরত্বে শব্দতরঙ্গের চাপ কত, এই ব্যাপারগুলির উপরে শব্দক্ষমতা নির্ভর করে না, এটি সম্পূর্ণরূপে শব্দ সৃষ্টিকারী উৎসের একটি বৈশিষ্ট্য। এটিকে ওয়াট এককে পরিমাপ করা হয়। বিভিন্ন যন্ত্র, যেমন নির্মাণ যন্ত্রপাতি, মুদ্রণযন্ত্র, ইত্যাদির দ্বারা কোলাহল বা অপশব্দের সর্বোচ্চ শব্দ ক্ষমতার সীমা প্রবিধানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে।
ধরা যাক, একটি শব্দের উৎস প্রতি সেকেন্ডে ১ জুল শব্দশক্তি উৎপন্ন করে। তাহলে এটির শব্দের ক্ষমতা হল ১ জুল/সেকেন্ড বা ১ ওয়াট। এখন ধরা যাক ঐ উৎসটি থেকে ২ মিটার দূরত্বের কোনও বিন্দুতে শব্দের তীব্রতার মান পরিমাপ করতে হবে। এজন্য প্রথমে শব্দের উৎসটির চারপাশে একটি অর্ধগোলক কল্পনা করা হয়, যার ব্যাসার্ধ r=২ মিটার। ঐ অর্ধগোলকটির বক্রপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল 2πr2 = ২৫ বর্গমিটার। সুতরাং শব্দের উৎস থেকে ২ মিটার দূরত্বে প্রতি একক ক্ষেত্রফলে শব্দের ক্ষমতা হবে ১ ওয়াট/২৫ বর্গমিটার = ০.০৪ ওয়াট/বর্গমিটার। এটিই হল শব্দের উৎস থেকে ২ মিটার দূরে শব্দের তীব্রতার মান। অর্থাৎ শব্দের তীব্রতার মান শব্দের ক্ষমতার সমানুপাতিক ও শব্দের উৎস থেকে দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
শব্দের চাপ ও শব্দের তীব্রতার সম্পর্ক
[সম্পাদনা]শব্দের তীব্রতার সাথে শব্দের চাপের পার্থক্য আছে। মানুষের কানের পর্দা শব্দের চাপের প্রতি সংবেদনশীল। যখন কোনও উৎস থেকে শব্দের সৃষ্টি হয়, তখন সেটি থেকে শব্দতরঙ্গ কোনও মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সমস্ত দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে পড়া শব্দতরঙ্গটি মাধ্যমের মধ্যে মাধ্যমের স্বাভাবিক চাপের মধ্যে বিচ্যুতির সৃষ্টি করে, এই চাপীয় বিচ্যুতিই হল শব্দের চাপ। উৎসের কাছে শব্দের চাপের পরিমাণ বেশি হয় এবং উৎস থেকে দূরে শব্দের চাপের পরিমাণ কম হয়। শব্দের এই চাপকে প্যাসকাল এককে মাপা হয়। বাতাসের শব্দের চাপ মাইক্রোফোন দিয়ে এবং জলের মধ্যে এটিকে হাইড্রোফোন নামক যন্ত্র দ্বারা মাপা যায়। শব্দের চাপ একটি নির্দিক বা স্কেলার রাশি।
একটি শাব্দিক মুক্ত ক্ষেত্রে শব্দের তীব্রতা শব্দের চাপের সাথে নিচের সমীকরণটি দ্বারা সরাসরি সম্পর্কিত:
শব্দের তীব্রতা = (শব্দের চাপ) x (কণার বেগ)
কণার বেগ হল শব্দতরঙ্গটি ছড়িয়ে পড়ার সময় বাতাসের বা মাধ্যমের কণাগু��ি কত বেগে সামনে-পেছনে কম্পমান থাকে, সেই বেগ। কণার বেগ একটি সদিক বা ভেক্টর রাশি, অন্যদিকে শব্দের চাপ হল একটি নির্দিক রাশি। ফলে শব্দের তীব্রতা হল একটি সদিক রাশি। শব্দের তীব্রতাকে একটিমাত্র মাইক্রোফোন দ্বারা পরিমাপ করা যায় না, বরং নির্দিষ্ট বিন্যাসে সজ্জিত দুই বা ততোধিক মাইক্রোফোনের মাধ্যম এটি পরিমাপ করা হয়, যাতে এর দিকটি নির্ণয় করা যায়।
শব্দের উচ্চতা ও শব্দের তীব্রতার সম্পর্ক
[সম্পাদনা]শব্দের তীব্রতার সাথে শব্দের উচ্চতার বা জোরালোতার (Loudness) পার্থক্য আছে। তীব্রতা একটি বস্তুনিষ্ঠ ভৌত পরিমাপ। অন্যদিকে শব্দের উচ্চতা একটি ব্যক্তিনিষ্ঠ উপলব্ধি। একই তীব্রতার কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন কম্পাংকের শব্দের প্রতি মানুষের কানের সংবেদনশীলতা একই হয় না। তাই শব্দের তীব্রতার বা শব্দের চাপের সাথে শব্দের উচ্চতার সরাসরি সম্পর্ক নেই। মানুষের কানের শ্রবণ পরিসীমা ২০ হার্জ থেকে ২০ কিলোহার্জ পর্যন্ত, যার মধ্যে ৩ থেকে ৪ কিলোহার্জ কম্পাংকের শব্দগুলির প্রতি মানুষের কান সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল, এর চেয়ে কম বা অনেক বেশি কম্পাংকের প্রতি কানের সংবেদনশীলতা কমে যায়। তাই স্বরোচ্চতা পরিমাপের সময় কানের সংবেদনশীলতাকেও গণনায় ধরতে হয়।
গাণিতিক সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]শব্দের তীব্রতাকে যদি I দিয়ে নির্দেশ করা হয়, তবে এটিকে নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করা যায়
যেখানে
I ও v উভয়েই সদিক রাশি, অর্থাৎ উভয়েরই মানের পাশাপাশি একটি দিক আছে। শব্দের তীব্রতার দিক হল শক্তির প্রবাহের গড় দিক।
কোনও সময় T-এর মধ্যে গড় শব্দের তীব্রতাটি নিম্নরূপ
অধিকন্তু,
যেখানে
- হল শব্দের কম্পাংক,
- হল শব্দতরঙ্গের কণার সরণের বিস্তার,
- শব্দ যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত হচ্ছে, তার ঘনত্ব, এবং
- হল শব্দের দ্রুতি।
বিপরীত-বর্গীয় সূত্র
[সম্পাদনা]একটি গোলকাকার শব্দতরঙ্গের জন্য ব্যাসার্ধ বরাবর উৎস থেকে বাইরের দিকে গোলকের কেন্দ্র থেকে r দূরত্বে শব্দের তীব্রতা হল
যেখানে
- P হল শব্দ ক্ষমতা;
- A(r) হল r ব্যাসার্ধের গোলকের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল
গোলকের কেন্দ্র থেকে 1/r2 অনুপাতে শব্দের তীব্রতা হ্রাস পায়:
এই সম্পর্কটি বিপরীত-বর্গীয় সূত্র হিসেবে পরিচিত।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]উৎসপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Middlebrooks, John C.; Green, David M. (১৯৯১)। "Sound Localization by Human Listeners"। Annual Review of Psychology। 42 (1): 135–159। আইএসএসএন 0066-4308। ডিওআই:10.1146/annurev.ps.42.020191.001031। পিএমআইডি 2018391।
- Mills, A. W. (১৯৬০)। "Lateralization of High‐Frequency Tones"। The Journal of the Acoustical Society of America। 32 (1): 132–134। আইএসএসএন 0001-4966। ডিওআই:10.1121/1.1907864।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- How Many Decibels Is Twice as Loud? Sound Level Change and the Respective Factor of Sound Pressure or Sound Intensity
- Acoustic Intensity
- Conversion: Sound Intensity Level to Sound Intensity and Vice Versa
- Ohm's Law as Acoustic Equivalent. Calculations
- Relationships of Acoustic Quantities Associated with a Plane Progressive Acoustic Sound Wave
- Table of Sound Levels. Corresponding Sound Intensity and Sound Pressure
- What Is Sound Intensity Measurement and Analysis?