ধৃতরাষ্ট্র
ধৃতরাষ্ট্র | |
---|---|
অন্তর্ভুক্তি | কুরু রাজবংশ |
অস্ত্র | গদা |
পরিবার | পিতামাতা দেখুন নিয়োগ
|
দাম্পত্য সঙ্গী | গান্ধারী এবং তার ছোট 10 বোন,কাশির রাজকন্যা |
সন্তান | পুত্রগণ (গান্ধারীর গর্ভজাত) ১০০ ���ুত্র উল্লেখযোগ্য কন্যা (গান্ধারী গর্ভজাত) পুত্র (সুগধা গর্ভজাত) , ধৃতরাষ্ট্র কাশ্য |
আত্মীয় | অন্য সৎ-ভাই দেখুন নিয়োগ
|
মহারাজ ধৃতরাষ্ট্র (সংস্কৃত: धृतराष्ट्र) হলেন সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারতে বর্ণিত কুরু রাজা এবং কৌরবদের তথা দুর্যোধন, দুঃশাসন দের পিতা। তিনি কুরুরাজ্য এবং এর রাজধানী হস্তিনাপুরের রাজা ছিলেন। তাঁর পিতার নাম বিচিত্রবীর্য এবং মাতার নাম বিচিত্রবীর্যে প্রথম স্ত্রী অম্বিকা। তিনি জন্ম থেকে অন্ধ বা জন্মান্ধ ছিলেন। [১] তাঁর স্ত্রী নাম গান্ধারী। তাঁর ১০০ পুত্র এবং ১ কন্যা দুঃশলা, যারা সবাই গান্ধারী গর্ভজাত। ধৃতরাষ্ট্রের, জ্যেষ্ঠ পুত্র দুর্যোধন সহ ১০০ পুত্রকে একত্রে বলা হয় কৌরব। কিন্তু, তাঁর একমাত্র কন্যা দুঃশলাকে কৌরব বলা হয় না।
বিবরণ
[সম্পাদনা]মহাভারত অনুসারে বিচিত্রবীর্যের ঔরসে অম্বিকার গর্ভে ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম হয়।
পূর্ব জন্ম
[সম্পাদনা]আবার অন্য একটি উপাখ্যানে বর্ণিত রয়েছে ধৃতরাষ্ট্র তার পূর্ব জন্মে একজন ক্ষত্রিয় রাজা ছিলেন। আর তখনকার দিনে কিছু ক্ষত্রিয়রা হরিণের মাংসসহ অন্য পশু-পাখির মাংসও ভক্ষন করতো। একদিন রাজা হরিণ শিকারে জঙ্গলে যান এবং তিনি হঠাৎ একটি হরিণ দেখতে পান। হরিণটিকে ধরার জন্য তিনি হরিণটির পেছনে ছুটতে লাগলেন একবার হরিনটি সামনে আসে আবার আড়ালে চলে যায়। এক ধরনের মায়ার দ্বারা হরিনটি তাকে আকৃষ্ট করতে লাগলেন।' এভাবে হরিনটির পেছনে ছুটতে ছুটতে তিনি গভীর জঙ্গলে পৌঁছে যান এবং তখন সূর্য ডুবে যায়। ফলে রাজা আর প্রাসাদে যেতে পারলেন না। তাই বাধ্য হয়ে তিনি জঙ্গলেই একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেন। তিনি গাছের ডালপালা ভেঙে গাছটির নিচে আগুন জ্বালালেন। রাজা খুবই ক্ষুধার্ত ছিলেন আর মনে মনে খাবাবের চিন্তা করছিলেন। তিনি যেই গাছটির নিচে বসে ছিলেন সেই গাছটির ওপরে ছিল এক পাখির বাসা। পাখির বাসাটিতে ছিল মা পাখি,বাবা পাখি আর তাদের একশো ছানা। বাবা পাখিটি মা পাখিকে বলতে লাগলো রাজা খুবই ক্ষুধার্ত আমাদের উচিত রাজাকে খাওয়ানো। বাবা পাখিটি বললো আমি আগুনে ঝাপ দিই আমার পালকগুলো পুড়ে যাবে এবং আমি ঝলসে যাবো তখন রাজা আমাকে খেতে পারবে। মা পাখিটি বললো তুমি মরে গেলে ছানাদের অনেক কষ্ট হবে তার চেয়ে বরং আমিই ঝাপ দিই। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি হতে হতে হঠাৎ মা পাখিটি গাছ থেকে পড়ে যায় এবং সে ঝলসে যায়। পরে রাজা তার তীর দিয়ে আগুন থেকে পাখিটিকে উঠিয়ে খায়। খাবার পর রাজার ক্ষিধে আরও বেড়ে যায় রাজা তখন গাছের ওপরে তাকায় এবং দেখতে পায় গাছের ওপরে আরও পাখি আছে। তিনি তখন গাছ বেয়ে ওপরে উঠে বাবা পাখি আর তার ছানাগুলো নামায়। রাজা তার তীর দিয়ে ছানাগুলোর একচোখ দিয়ে ঢোকায় আর অন্যচোখ দিয়ে বের করে তীরে গাথে। এভাবে সে সবগুলো ছানাকে ঝলসে খায়। আর তার এই কৃতকর্মের জন্যই তিনি পরের জন্মে জন্মান্ধ হয়ে জন্ম গ্রহণ করেন এবং কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তাকে শত পুত্রের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়।[২]
বংশধর
[সম্পাদনা]ধৃতরাষ্ট্র গান্ধার রাজ্য আক্রমণ করে রাজকন্যা গান্ধারী ও তার ১০ জন সৎ বোন সত্যব্রতা, সত্যসেনা,সুদেষ্ণা,সংহিতা, শম্বঠা, সুশ্রবা, তেজশ্রবা,নিকৃতি, শুভা ও দশর্ণাকে বিবাহ করেন।গান্ধারী নিজে চোখ ঢেকে রাখতেন তার স্বামীর জন্য। ধৃতরাষ্ট্রর ঔরসে গান্ধারী গর্ভবতী হন আর দুই বৎসর পর এক মাংসপিন্ড প্রসব করেন যার থেকে ১০০ পুত্র ও দুঃশলার জন্ম হয়। গান্ধারী যখন দুই বছর যাবৎ গর্ভবতী ছিলেন তখন কোনো সন্তান জন্ম না নেওয়ার ভয়ে ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীর প্রধান দাসী সুঘদা বা সৌবালির সাথে মিলিত হন।সুঘদার গর্ভে যুযুৎসু নামে একটি পুত্র জন্মে।এছাড়াও ধৃতরাষ্ট্র তার মামা কাশীরাজ সেনাবিন্দুর কন্যাকেও বিবাহ করেন।কাশির রাজকন্যা একটি মৃত পুত্রের জন্ম দিয়ে মারা যান।এই পুত্রটি ধৃতরাষ্ট্র কাশ্য অর্থাৎ কাশির ধৃতরাষ্ট্র নামে পরিচিত।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে একমাত্র যুযুৎসু ছাড়া সব পুত্র নিহত হওয়ার পর ধৃতরাষ্ট্র অনুতপ্ত হয়ে স্বীকার করেন যে, তার নিজের দোষেই কৌরবগণ দুষ্কার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন। যুধিষ্ঠির রাজা হলে কিছুদিন তাঁর আশ্রয়ে থেকে ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও কুন্তিকে নিয়ে অরণ্যযাত্রায় যান। হরিদ্বারের নিকট এক গভীর অরণ্যে প্রজ্বলিত দাবাগ্নির মধ্যে তপস্যারত অবস্থায় তিনজন প্রাণত্যাগ করেন।