এ আর আজম চৌধুরী
এ আর আজম চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৬ |
মৃত্যু | ২০০২ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
কর্নেল এ আর আজম চৌধুরী (জন্ম:১৯৪৬ - মৃত্যু: ২০০২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]এ আর আজম চৌধুরীর জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাজিতপুর (চৌধুরীপাড়া) গ্রামে। তার বাবার নাম আফতাবউদ্দিন চৌধুরী এবং মায়ের নাম হালিমা চৌধুরী। তার স্ত্রীর নাম জেসমিন চৌধুরী। তাদের তিন ছেলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং কুমিল্লা ইস্পাহানী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ.এস.সি পাশ করে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি।[২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]এ আর আজম চৌধুরী পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১৯৬৫ সালে যোগদান করেন এবং ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেলুচ রেজিমেন্টে কমিশন লাভ করেন। ১৯৭১ সালে প্রেষণে যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীন ৪ নম্বর উইংয়ে সহকারী অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কুষ্টিয়ার যুদ্ধে তিনি সার্বিক নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ মার্চ ভোর পাঁচটার সময় কুষ্টিয়ায় আক্রমণ করেন। ৩১ মার্চ পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে তিনি ভারতে যান। পরে ৪ নম্বর সেক্টরের লালবাজার সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। বেশির ভাগ যুদ্ধেই তিনি অগ্রভাগে থাকতেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে কর্নেল হিসেবে অবসর গ্রহন করেন
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]সাতক্ষীরা জেলা সদর থেকে উত্তরে কলারোয়া উপজেলার অন্তর্গত সোনাবাড়িয়ায় ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮-২০ তারিখে এখানে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন এ আর আজম চৌধুরী। এ সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধকৌশল ও সক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। এটা যাচাইয়ের জন্য যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে নির্বাচন করা হয় বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও ভারতের হাকিমপুর এলাকাকে। এ আর আজম চৌধুরী তখন যুদ্ধরত ছিলেন কুষ্টিয়া অঞ্চলে। এই যুদ্ধের জন্য তাকে সেখান থেকে হাকিমপুরে আনা হয়। তার দলে ছিলেন ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে সোনাবাড়িয়া পৌঁছেন। যুদ্ধের ছক অনুসারে সোনাবাড়িয়ায় যে স্থানে তাদের অবস্থান নেওয়ার কথা, সেখানে বাস্তবে ১০০ গজের বেশি উন্মুক্ত স্থান ছিল না। এ জন্য তিনি আরও ৫০০ গজ সামনে এগিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। সেখানে ছিল একটি নালা। ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে হাজির হয় একদল পাকিস্তানি সেনা। তারা ছিল একটি জিপ, একটি পিকআপ এবং তিনটি তিন টনি লরিতে। সেগুলো আওতায় আসামাত্র এ আর আজম চৌধুরীর সংকেতে গর্জে উঠে সব মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গোলাগুলি চলে বিকেল পর্যন্ত। এরপর পাকিস্তানি সেনারা আর্টিলারির সহায়তায় পশ্চাদ্পসরণ করে। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২০-২২ জন হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন শহীদ হন। পরের দিনও সেখানে যুদ্ধ হয়। সেদিন পাকিস্তানিরা দুই দিক থেকে আক্রমণ করে। এ আর আজম চৌধুরী সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে ওই আক্রমণ প্রতিহত করেন। ২১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানিরা তিন দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ দিনও তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে তাকে পশ্চাদ্পসরণ করতে বলা হয়। তখন তিনি পশ্চাদ্পসরণ করে হাকিমপুরে ফিরে যান।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৩-০৭-২০১২"। ২০১৭-০২-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।