হরিমোহিনী কহিলেন, “তা হলে কাল সকালে—"
বিনয় কহিল, “দরকার কী? আজ রাত্রেই গেলে হবে।”
সন্ধ্যার সময় সুচরিতা আসিয়া কহিল, “বিনয়বাবু, মা আপনাকে ডাকতে পাঠালেন। উপাসনার সময় হয়েছে।”
বিনয় কহিল, “মাসির সঙ্গে কথা আছে, আজ আমি যেতে পারব না।”
আসল কথা, আজ বিনয় বরদাসুন্দরীর উপাসনার নিমন্ত্রণ কোনোমতে স্বীকার করিতে পারিল না। তাহার মনে হইল সমস্তই বিড়ম্বনা।
হরিমোহিনী ব্যস্তসমস্ত হইয়া কহিলেন, “বাবা বিনয়, যাও তুমি। আমার সঙ্গে কথাবার্তা সে পরে হবে। তোমাদের কাজকর্ম আগে হয়ে যাক, তার পরে তুমি এসো।”
সুচরিতা কহিল, “আপনি এলে কিন্তু ভালো হয়।”
বিনয় বুঝিল সে সভাক্ষেত্রে না গেলে এই পরিবারে যে বিপ্লবের সূত্রপাত হইয়াছে তাহাকে কিছু পরিমাণে আরো অগ্রসর করিয়া দেওয়া হইবে। এইজন্য সে উপাসনাস্থলে গেল, কিন্তু তাহাতেও সম্পূর্ণ ফললাভ হইল না।
উপাসনার পর আহার ছিল— বিনয় কহিল, “আজ আমার ক্ষুধা নেই।”
বরদাসুন্দরী কহিলেন, “ক্ষুধার অপরাধ নেই। আপনি তো উপরেই খাওয়া সেরে এসেছেন।”
বিনয় হাসিয়া কহিল, “হাঁ, লোভী লোকের এইরকম দশাই ঘটে। উপস্থিতের প্রলোভনে ভবিষ্যৎ খুইয়ে বসে।” এই বলিয়া বিনয় প্রস্থানের উদ্যোগ করিল।
বরদাসুন্দরী জিজ্ঞাসা করিলেন, “উপরে যাচ্ছেন বুঝি?”
বিনয় সংক্ষেপে কেবল “হাঁ' বলিয়া বাহির হইয়া গেল। দ্বারের কাছে সুচরিতা ছিল, তাহাকে মৃদুস্বরে কহিল, “দিদি, একবার মাসির কাছে যাবেন, বিশেষ কথা আছে।”
ললিতা আতিথ্যে নিযুক্ত ছিল। এক সময় সে হারানবাবুর কাছে আসিতেই তিনি অকারণে বলিয়া উঠিলেন, “বিনয়বাবু তো এখানে নেই,