সংসদ সদস্য
এ সূচীপত্রটি রাজনৈতিক বিষয়াবলীর অংশবিশেষ |
প্রবেশদ্বার:রাজনীতি · edit |
সংসদ সদস্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে পার্লামেন্ট বা জাতীয় সংসদে সরকার কিংবা বিরোধীদলীয় সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এর ইংরেজি প্রতিরূপ হচ্ছে 'মেম্বার অব পার্লামেন্ট' বা 'এমপি' এবং বাংলায় 'সংসদ সদস্য' কিংবা 'সাংসদ'। এছাড়া, ফরাসি ভাষায় সংসদ সদস্যকে দেপ্যুতে (député) নামে অভিহিত করা হয়।
পরিচিতি
[সম্পাদনা]সংসদীয় গণতন্ত্রে একজন সংসদ সদস্য আইন-প্রণয়ন বিশেষতঃ রাষ্ট্রীয় আইন ও নাগরিক অধিকার প্রণয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সাধারণ অর্থে নির্দিষ্ট সংসদ কিংবা জাতীয় সংসদের সদস্যই এমপি বা সংসদ সদস্য হিসেবে আখ্যায়িত হন।
বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বি-স্তরবিশিষ্ট সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে - উচ্চ কক্ষ এবং নিম্ন কক্ষ। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি হিসেবে 'সংসদ সদস্য' পদটি নিম্নকক্ষের জন্য প্রযোজ্য। সচরাচর জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্য পদটি উচ্চ কক্ষে ভিন্ন পদে উপস্থাপন ও চিহ্নিত করা হয়। উচ্চ কক্ষ হিসেবে সিনেটে সংসদ সদস্য তখন তিনি 'সিনেটর' পদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
অবস্থান
[সম্পাদনা]সংসদ সদস্য হিসেবে ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে দলের সদস্যরূপে তাঁর অবস্থানকে নিশ্চিত করতে হয়। পরবর্তীতে দলীয় সভায় মনোনয়নের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জনমতের যথার্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিফলনে তিনি এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন। কখনোবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অভাবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে থাকেন। সাধারণতঃ সংসদ সদস্য কোন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়ে থাকেন। দলীয়ভাবে মনোনয়নলাভে ব্যর্থ হলে কিংবা দলীয় সম্পৃক্ততা না থাকলেও 'স্বতন্ত্র প্রার্থী' হিসেবে অনেকে নির্বাচিত কিংবা মনোনীত সংসদ সদস্য হন।
সংসদ সদস্যকে অনেকে 'সাংসদ' নামেও ডেকে থাকেন। তবে, নিত্য-নৈমিত্তিক বা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে 'মেম্বার অব পার্লামেন্ট' হিসেবে সংসদ সদস্যকে 'এমপি' শব্দের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানকালে প্রচারমাধ্যমে সাধারণ অর্থেই এমপি শব্দের প্রয়োগ লক্ষ্যণীয়।
ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি
[সম্পাদনা]গণতান্ত্রিক সংসদীয় ব্যবস্থায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত প্রতিফলন বা ভোটে একজন প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে মনোনীত হন, যা ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট 'প্যালেস অব ওয়েস্টমিনিস্টারে' বা হাউজেস অব পার্লামেন্ট বা ওয়েস্টমিনিস্টার প্যালেসে রক্ষিত জনপ্রতিনিধির আসনকে কেন্দ্র করে ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া
[সম্পাদনা]অস্ট্রেলিয়ায় সংসদ সদস্য বলতে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হিসেবে পরিচিত 'হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের' সদস্যকে বুঝায়। সদস্যরা কখনো কখনো তাদের নামের শেষে এমপি লিখে থাকেন। 'কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট' হিসেবে সিনেটের সদস্যগণ সিনেটর নামে পরিচিতি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রদেশ হিসেবে নিউ সাউথ ওয়েলস্ এবং ভিক্টোরিয়ায় নিম্ন কক্ষ লেজিসলেটিভ এসেম্বলিতে সংসদ সদস্যগণ তাদের নামের শেষে 'এমপি' লিখেন। পক্ষান্তরে উচ্চ কক্ষ হিসেবে লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্যরা নামের শেষে ব্যবহার করেন'এমএলসি'।
বাংলাদেশ
[সম্পাদনা]বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্যগণ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। তাঁরা প্রতি পাঁচ বৎসর অন্তর সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তাদেরকেও 'এমপি' বা 'মেম্বার অব পার্লামেন্ট' বা 'সংসদ সদস্য' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সংসদে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন। তন্মধ্যে ৫০ জন ���ংরক্ষিত আসন থেকে মহিলা সদস্য। সাংসদদের নামের শেষে এমপি লেখা হয়। যেমনঃ বর্তমান বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন চট্টগ্রাম - ১ (মীরসরাই) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এমপি
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই 'সংসদ সদস্য' হিসেবে নির্বাচিত হতে হয়।
কানাডা
[সম্পাদনা]কানাডায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা বিরাজমান। কানাডীয় সংসদে উচ্চ কক্ষকে 'সিনেট অব কানাডা' এবং নিম্ন কক্ষকে 'কানাডিয়ান হাউজ অব কমন্স' ডাকা হয়। তাসত্ত্বেও, উভয় কক্ষের সদস্যগণই মেম্বার অব পার্লামেন্ট বা সংসদ সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। কিন্তু কথা বলার ধরন অনুযায়ী নিম্ন কক্ষের সদস্যগণকে 'সংসদ সদস্য' এবং উচ্চ কক্ষের সদস্যগণকে সিনেটরের মর্যাদা দেয়া হয়।[১] ১০৫ আসনের সিনেট এবং ৩০৮ আসনের হাউজ অব কমন্স নিয়ে কানাডায় দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠিত।[২]
প্রত্যেকটি প্রদেশের সংসদীয় ব্যবস্থাপনায় নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে। সাধারণতঃ প্রত্যেক সদস্যই এমএলএ বা মেম্বার অব দ্য লেজিসলেটিভ এসেম্বলী হিসেবে পরিচিতি পেয়ে থাকেন। ব্যতিক্রম হিসেবে রয়েছে দেশটির কয়েকটি প্রদেশ। তন্মধ্যে ওন্টারিও প্রদেশে সংসদ সদস্যরা 'মেম্বার অব প্রভিনশিয়াল পার্লামেন্ট' বা এমপিপি; কুইবেক প্রদেশে 'মেম্বার অব দ্য ন্যাশনাল এসেম্বলী' বা এমএনএ নামে পরিচিত। ফরাসী ভাষায় একজন এমএনএ-কে ডেপুটি বলা হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডর প্রদেশে তাদেরকে 'মেম্বার অব দ্য হাউজ অব এসেম্বলী' বা এমএইচএ পদবী গ্রহণ করতে দেখা যায়।
ভারত
[সম্পাদনা]পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের বেশ সুনাম রয়েছে। দেশটির সংসদীয় ব্যবস্থাপনা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট। সেগুলো হচ্ছে লোকসভা এবং রাজ্যসভা। সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সকল সদস্যই "সাংসদ" হিসেবে পরিচিতি।
সদস্যরা ভারতের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে লোকসভায় সদস্যরূপে নির্বাচিত হন। কিন্তু রাজ্যসভার সদস্যরা পরোক্ষভাবে প্রদেশের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংসদ সদস্য হন। প্রত্যেক প্রদেশেই নির্দিষ্টসংখ্যক সংসদ সদস্যের পদ বরাদ্দ আছে। উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য পদ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটভূক্ত দলের সংমিশ্রণে গঠিত হয় যেখানে লোকসভায় সর্ববৃহৎ দল বৃহৎসংখ্যক আসন লাভ করতে সক্ষম হয়।
আয়ারল্যান্ড
[সম্পাদনা]মেম্বার অব পার্লামেন্ট শব্দটি ১৮০১ সালের পূর্বেকার আয়ারল্যান্ডের সংসদ 'আইরিশ হাউজ অব কমন্সের' সদস্যকে বুঝায়। এছাড়াও এটি যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ডের হাউজ অব কমন্সে ১৮০১ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত নির্বাচিত আইরিশ সদস্যদেরকে বুঝানো হয়ে থাকে।
উত্তর আয়ারল্যান্ডে নির্বাচিত এমপিরা বর্তমানকালেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে অংশ নিয়ে থাকেন।
১৯২২ সালের পর 'আইরিশ ফ্রি স্টেটের' গঠনতন্ত্র অনুযায়ী 'ডেইল আইরিয়ান' বা (দ্য ডেইল)-এর সদস্যরা নিম্নকক্ষে 'অয়েরেচটাসে' (সংসদ) 'ডেইল আয়ারিন' (ডেইল) বা টিচটা ডালা বা টিডি নামে পরিচিত। উচ্চ কক্ষকে 'সীনাড আইরিয়ান' বলে। এর সদস্যরা 'সিনেটর' নামে পরিচিত।
কেনিয়া
[সম্পাদনা]জাতীয় সংসদের ২১০টি আসনের সাধারণ নির্বাচনে কেনিয়ার অধিবাসীরা সদস্যরূপে নির্বাচিত হয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে আরো ১২ জন সদস্যকে মনোনীত করা হয়। সদস্যরা প্রত্যেকেই 'সংসদ সদস্য' নামে অভিহিত হন।[৩]
মালয়েশিয়া
[সম্পাদনা]যুক্তরাজ্যের সংসদের অনুরূপ ধাঁচে মালয়েশিয়ার সংসদ গড়ে উঠেছে। এটি দু'টি কক্ষবিশিষ্ট। হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে রয়েছে 'দিওয়ান রাকিয়াত' এবং সিনেট হিসেবে 'দিওয়ান নাগারা'।
দিওয়ান রাকিয়াতের জন্য একজন ব্যক্তিকে সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত হতে গেলে তাকে সাধারণ নির্বাচন কিংবা উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে হয়। এছাড়াও, যারা দেশের সেবায় অসামান্য অবদান রাখেন তাদেরকে দিওয়ান নাগারা'র সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য রাজা কর্তৃক মনোনীত হন। তারা প্রদেশ প্রধান কর্তৃক মনোনীত হয়ে রাজার অনুমোদনের উপর নির্ভর করেন। তন্মধ্যে, প্রত্যেকটি প্রদেশের আয়তনের উপর সিনেটরের সংখ্যা নির্ভরশীল।
সংসদ সদস্যরা তাদের নামের পূর্বে 'ইয়াং বারহোরমাত' বা 'সম্মানীয়' পদবী ব্যবহার করেন যা সংক্ষেপে ওয়াই.বি নামে পরিচিত।
নাউরু
[সম্পাদনা]১৮টি আসন নিয়ে নাউরুর সংসদ গঠিত। এখানকার সংসদ সদস্যদের নামের সামনে 'সম্মানীয়' শব্দ প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
পাকিস্তান
[সম্পাদনা]পাকিস্তানে সংসদ সদস্য বলতে 'ন্যাশনাল এসেম্বলী অব পাকিস্তান' বা 'কউমি এসেম্বলী'র সদস্যকে বুঝানো হয়ে থাকে। এই ন্যাশনাল এসেম্বলী বা জাতীয় সংসদ ইসলামাবাদ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়।
শ্রীলঙ্কা
[সম্পাদনা]সার্কভূক্ত দেশের অন্যতম দেশ শ্রীলঙ্কায় সংসদ সদস্যগণ ১৯৭৮ সাল থেকে 'পার্লামেন্ট অব শ্রীলঙ্কা'র সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এছাড়াও, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত 'ন্যাশনাল স্টেট এসেম্বলী', ১৯৪৭ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত 'পার্লামেন্ট অব সিলোন' নিম্নকক্ষের 'হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস্ অব সিলোনে'র সদস্যকে বুঝানো হয়ে থাকে।
জিম্বাবুয়ে
[সম্পাদনা]'হাউজ অব এসেম্বলী অব জিম্বাবুয়ে' আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ের প্রধান আইন সভা। আইন সভার সদস্যগণ সংসদ সদস্য নামে পরিচিত। সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্যবৃন্দ সিনেটর নামে পরিচিত।
অন্যান্য পদ্ধতি
[সম্পাদনা]সংসদ সদস্য শব্দটি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে বিভিন্ন সংসদীয় গণতন্ত্রে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যা ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতি অবলম্বন করে না।
প্রতিনিধিত্বকারী দেশসমূহ
[সম্পাদনা]নিম্নবর্ণিত দেশসমূহে সংসদীয় ব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে। ওয়েস্টমিনিস্টার পদ্ধতিতে একজন সংসদ সদস্য নির্দিষ্ট কিংবা নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের সংসদ কার্যালয়ে স্বীয় মতামত ব্যক্ত ও প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ লাভের অধিকারী।
|
|
|
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১১।
- ↑ Glossary of Parliamentary Terms for intermediate students ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে Parliament of Canada
- ↑ The National Assembly ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ মে ২০১০ তারিখে Parliament of the Republic of Kenya