নিপীড়ন (দুর্বলের উপর সবলের)
দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন (ইংরেজি oppression) বলতে সাধারণত ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি বা দলের দ্বারা বারংবার প্রণালীবদ্ধভাবে ও ব্যাপকভাবে কর্তৃত্বের অন্যায়, মাত্রাতিরিক্ত, বিদ্বেষপরায়ণ বা নিষ্ঠুর ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্বল ব্যক্তি বা দলকে দমন বা তাদের উপর দুর্বহ বোঝা চাপানোর ঘটনাটিকে নির্দেশ করা হয়।[১][২][৩] ক্ষমতায় বা কর্তৃত্বে না থেকেও সমাজের সংখ্যাগুরু দল সংখ্যালঘু দলের উপরে সমাজনির্ধারিত মান স্থাপনের মাধ্যমে এইরূপ নিপীড়ন চাপিয়ে দিতে পারে। দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, প্রাতিষ্ঠানিক বা সামাজিক রূপ ধারণ করতে পারে। এই জাতীয় নিপীড়নে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা দলের উপরে অত্যধিক কঠোর বাধানিষেধ প্রয়োগ করা হয় কিংবা সমাজের অন্য সবার তুলনায় তারা অসমঞ্জস অনুপাতে অধিকতর বৈষম্য ও অবিচারের শিকার হয়। সাধারণত কোনও ক্ষমতাসীন পদে অধিষ্ঠিত কোনও সরকার বা রাজনৈতিক সংগঠন লিখিত বিধির মাধ্যমে কিংবা গোপনে নিপীড়িত দলগুলির উপরে এই ধরনের বাধানিষেধ প্রয়োগ করে থাকে, যার উদ্দেশ্য সমাজের অন্যান্য দলের সাথে যেন তারা প্রতিযোগিতায় পেরে না ওঠে ও এভাবে যেন তাদেরকে শোষণ করা যায়। সমাজে নিপীড়িত ব্যক্তি বা দলটির মূল্য হ্রাস পায়, তারা শোষণের শিকার হয় এবং প্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা দলের তুলনায় তারা সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।[৪]
নিপীড়নকে নিগ্রহ, নির্যাতন, উৎপীড়ন, জুলুম, ইত্যাদি সমার্থক শব্দ দ্বারাও নির্দেশ করা হতে পারে।
দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন ইতিহাসের সব পর্বে সব ধরনের মানবসমাজে বিদ্যমান ছিল ও আছে। সমাজ থেকে দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন নির্মূল করার প্রচেষ্টা তুলনামূলকভাবে নতুন এবং একটি দলের উপর জোর দিলেও অন্য আরেকটি দলের উপর জোর নাও দেয়া হতে পারে।[৫][২] যেমন ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নরগোষ্ঠীগত পরিচয় (কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠী) কিংবা উত্তর আয়ারল্যান্ডে ধর্মীয় পরিচয়ভিত্তিক বৈষম্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন সংঘটিত হলেও নারীর অধিকার লঙ্ঘন উপেক্ষা করা হয়। তবে পরবর্তীতে ১৯৭০-এর দশকে দেশটিতে নারীবাদী আন্দোলন ও সংশ্লিষ্ট সামাজিক পরিবর্তন ঘটে।[৫] দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়নের ঘটনাটি আধিপত্য ও পরাধীনতার সামাজিক কাঠামোগুলির ফলাফল। এর পেছনে গর��মাবোধ ও হীনমন্যতাবোধের মতো ব্যাপারগুলি কাজ করে।[৬] দুর্বলের উপর সবলের নিপীড়ন চরম পর্যায়ে কোনও দেশের আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারে (যেমন দাসপ্রথা, আপার্টহাইট তথা পৃথক আবাসন, বা ভোটাধিকারের অনুপস্থিতি) বা এরকম চরম না-ও হতে পারে। এটি স্বৈরতান্ত্রিক সমাজগুলির মতো সহিংস হতে পারে বা না-ও হতে পারে।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Oppression"। Merriam Webster.com Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ ক খ Johnson, A. G., 2000a,. Privilege, Power and Difference. Boston: McGraw-Hill. page39
- ↑ ক খ Deutsch, M., 2006, 'A framework for thinking about oppression and its change', Social Justice Research, 19(1), 7–41.
- ↑ Barker, Robert L. (২০০৩), The Social Work Dictionary (৫ম সংস্করণ), Washington DC: NASW (National Association of Social Workers) Press, পৃষ্ঠা 307
- ↑ ক খ Katherine van Wormer (২০১৫), International Encyclopedia of the Social & Behavioral Sciences (২য় সংস্করণ)
- ↑ Charlton, J. I., 1998, Nothing about us without us disability oppression and empowerment. Berkeley: University of California Press.page:8)