উলিল-আমর
উলিল-আমর (আরবি: أُولِي الْأَمْرِ) ইসলামী আইনের পরিভাষা। এটি একটি আরবি শব্দগুচ্ছ যার অর্থ আদেশদাতা। আভিধানিক অর্থে উলিল-আমর বলতে সে সমস্ত লোককে বোঝায় যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিনিধি অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়। এটি মুসলমানদের ধর্মীয়গ্রন্থ কোরআনে ব্যবহৃত একটি প্রতিশব্দ।
শব্দতত্ত্ব
[সম্পাদনা]সূরা নিসার ৫৯ আয়াতে উলিল আমরের কথা বলা হয়েছে। উলী অর্থ প্রথম বা অধিকারী আর আমর অর্থ আদেশ, নির্দেশ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব। সে অনুযায়ী উলিল আমরের অর্থ হয় ক্ষমতায়, নেতৃত্বে, কর্তৃত্বে বা আদেশ নির্দেশে প্রথম বা উপরের স্থানে অধিকারী অথবা অভিভাবক, এর দ্বারা নেতৃস্থানীয় শাসক, নেতা, ক্ষমতাসীন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, পিতামাতা, স্ত্রীদের ক্ষেত্রে স্বামী, রাষ্ট্রপ্রধান, কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ইত্যাদি অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে কর্তৃত্বের অধিকারী সকলকেই বোঝানো হয়। প্রচলিত আরবি ভাষায় এর দ্বারা বৈধ অভিভাবক (legal guardian) কেও বোঝানো হয়।
কুরআন
[সম্পাদনা]ইসলামে রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের আনুগত্যের প্রসঙ্গে সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতকে উল্লেখ করা হয় যাকে আনুগত্যের আয়াত বলা হয়েছে, এতে আল্লাহ ও ইসলামী নবী মুহাম্মদের পাশাপাশি উলিল-আমর বা দায়িত্বে নিয়োজিত ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষের (শাসক ও ওলামা) আনুগত্য করতে বলা হয়েছে, যে আনুগত্য হল বৈধ ইসলামী নির্দেশসমূহের ব্যাপারে আনুগত্য, অনৈসলামিক নির্দেশের ব্যাপারে নয়।[১]
হে ঈমাদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর, আরও আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের (উলীল আমরি মিনকুম), অতঃপর কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান এনে থাক। এ পন্থাই উত্তম এবং পরিণামে প্রকৃষ্টতর।
— সূরা নিসা, আয়াতঃ ৫৯
এছাড়াও সূরা নিসার ৮৩ নং আয়াতেও উলিল আমরের বা কর্তৃত্বের অধিকারীর কথা বলা হয়েছে।
আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের কর্তৃত্বের অধিকারী (উলিল আমরি মিনহুম) পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেত সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মত। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত!
— সূরা নিসা, আয়াতঃ ৮৩
হাদীস
[সম্পাদনা]হাদীসে বর্ণিত, সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতটি, যা উলিল আমরের আয়াত নামে প্রসিদ্ধ, তা সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে হুযাফার একটি ঘটনার প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়।
হাসান ইন মুহাম্মদ (রহঃ) ... ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ) অর্থঃ হে মু'মিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী (সূরা নিসাঃ ৫৯)। আয়াতটি আবদুল্লাহ ইবন হুযায়ফা ইবন কায়স ইবন আদীর সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। যাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন যুদ্ধের অধিনায়ক করে পাঠিয়েছিলেন।
— সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৪১৯৫ (ইঃফাঃবাঃ), তিরমিযী ১৭৩৯
বিশুদ্ধ বলে বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী প্রেক্ষাপটটি নিম্নরূপ,
মুসাদ্দাদ (রহঃ) ... আলী (ইবনু আবূ তালিব) (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক অভিযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সৈন্যবাহিনী পাঠিয়েছিলেন এবং আনসারদের এক ব্যাক্তিকে তার সেনাপতি নিযুক্ত করে তিনি তাদেরকে তাঁর (সেনাপতির) আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (পরে কোন কারণে) আমীর ক্রুদ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করতে নির্দেশ দেননি? তাঁরা বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা আমার জন্য কিছু কাঠ সংগ্রহ করো। তাঁরা কাঠ সংগ্রহ করলেন। তিনি বললেন, এগুলোতে আগুন লাগিয়ে দাও। তাঁরা আগুন লাগালেন। তখন তিনি বললেন, এবার তোমরা সকলে এ আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ো। (আদেশ মতো) তাঁরা ঝাঁপ দেয়ার সংকল্পও করে ফেললেন। কিন্তু তাদের কয়েকজন বাধা দিয়ে বলতে লাগলেন, আগুন থেকেই তো আমরা পালিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম। (অথচ এখানে সেই আগুনেই ঝাঁপ দেয়ারই আদেশ)। এভাবে জ্বলতে জ্বলতে অবশেষে আগুন নিভে গেলো এবং তার ক্রোধও থেমে গেলো। এরপর এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেন, যদি তারা আগুনে ঝাঁপ দিত তা হলে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আর এ আগুন থেকে বের হতে পারতো না। কেননা আনুগত্য কেবল সৎ কাজের।
— বুখারী, ৪৩৪০
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলকামা ইবনে মুজাযযিয (রাঃ) কে একটি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেন। আমিও তাতে শরীক ছিলাম। তিনি যখন গন্তব্যে পৌঁছেন অথবা পথিমধ্যে ছিলেন, তখন একদল সৈন্য তার নিকট (কোন বিষয়ে) অনুমতি চাইলে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা ইবনে কায়েস আস-সাহমী (রাঃ)-কে তাদের অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। যেসব লোক আবদুল্লাহ (রাঃ) -র সঙ্গী হয়ে জিহাদ করেছে, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। লোকেরা পথিমধ্যে ছিল। এ অবস্থায় একদল লোক ��ত্তাপ গ্রহণের জন্য অথবা অন্য কোন কাজে আগুন প্রজ্জ্বলিত করলো। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের বলেন (তিনি কিছুটা রসিক প্রকৃতির ছিলেন), আমার নির্দেশ শোনা ও আনুগত্য করা কি তোমাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়? তারা বললো হ্যাঁ। তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে যা করার নির্দেশই দিবো তোমরা কি তাই করবে? তারা বললো হ্যাঁ। তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে চূড়ান্ত নির্দেশ দিচ্ছি যে, তোমরা এই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ো। কতক লোক (আগুনে ঝাঁপ দেয়ার জন্য) দাঁড়িয়ে গেলো এবং কোমর বাঁধলো। তিনি যখন দেখলেন, লোকেরা সত্যিই আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হয়েছে, তখন বললেন, থামো। আমি তোমাদের সাথে ঠাট্টা করেছি। (রাবী বলেন) আমরা ফিরে এলে লোকেরা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ ঘটনা উল্লেখ করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কেউ তোমাদেরকে আল্লাহর নাফরমানি করার নির্দেশ দিলে তোমরা তার আনুগত্য করবে না।
— গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ১৮/ জিহাদ (كتاب الجهاد), হাদিস নম্বরঃ ২৮৬৩, আহমাদ ১১২৪৫, সহীহাহ ২৩২৪, তাহকীক আলবানীঃ হাসান।
আতা ইবনে আবি রাবা উলিল আমরের ব্যাখ্যায় বলেন,
আব্দুল মালেক হতে বর্ণিত, আল্লাহর কথা
(أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ)
(অর্থ: তোমরা আল্লাহ ও তারঁ রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যকার যারা ‘উলিল আমর’।” সূরা নিসা: ৫৯), এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আতা’ বলেন: ‘উলিল আমর’ বলতে ইলম ও ফিকহের (গভীর জ্ঞানের) অধিকারী আলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে আর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ বলতে কিতাব ও সুন্নাহর’ অনুসরণকে বুঝানো হয়েছে।
— গ্রন্থঃ সুনান আদ-দারেমী, অধ্যায়ঃ ভূমিকা (আল-মুক্বাদ্দিমাত, المقدمة), হাদিস নম্বরঃ ২২৫
হাদীসে উলিল আমরকে নসীহত করতে নির্দেশ করা হয়েছে।
আলিমগণের অনুসরণঃ জুবাইর ইবনু মুতঈম তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বিদায় হজ্জ্বের দিন আরাফার মাঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুতবার সময় উপস্থিত ছিলেন। ( নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন): “হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহর কসম! আমি জানিনা, হয়তোবা, আজকের পরে আমার এ অবস্থানস্থলে তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ নাও হতে পারে। সুতরাং যে ব্যক্তি আজকের আমার এ বক্তব্য শুনবে ও তা স্মরণ রাখবে, আল্লাহ তাকে রহম করবেন। কেননা, অনেক জ্ঞান বহনকারী প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী হয় না এবং জ্ঞান বহনকারীর চাইতে তার শিক্ষার্থীরাও অধিক জ্ঞানী হয়ে থাকে। তোমরা জেনে রাখ, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের রক্ত তোমাদের পরস্পরের নিকট সম্মানিত, যেমন সম্মানিত এ শহরে এ মাসে আজকের এ দিনটি। জেনে রাখ, অন্তর তিনটি বিষয়ে খিয়ানত করে না: ১. একমাত্র আল্লাহর জন্য আমলকে বিশুদ্ধ করা, ২. উলিল আমর (শাসক) এর প্রতি নসীহত করা, ৩. মুসলিমগণের জামা’আতকে আঁকড়ে থাকা। কেননা, তাদের দু’আ তাদের পেছনের সকলকে বেষ্টন করে নেয়।
— গ্রন্থঃ সুনান আদ-দারেমীঅধ্যায়ঃ ভূমিকা (المقدمة)
হাদিস নম্বরঃ ২৩৩
প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]উলিল আমর দুই প্রকারঃ
- ওলামাগণঃ দ্বীনী উলিল আমর বা ধর্মীয় অভিভাবক (العلماء: أولياء أمورِ الدين،)
- শাসকগণঃ দুনিয়াবী উলিল আমর বা পার্থিব অভিভাবক (والحكام: أولياء أمور الدنيا)
তবে অধিকাংশ আলেমগণ দ্বিতীয় প্রকারকে অর্থাৎ শাসকদেরকে কুরআনে বর্ণিত উলুল আমর হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
ব্যাখ্যা
[সম্পাদনা]আবু হুরায়রা-এর মতে, উলিল-আমরের অর্থ হচ্ছে সে সমস্ত লোক যাদের হাতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত। তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসীর এবং তাফসীরে ইবনে মাযহারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে এ শব্দটির দ্বারা ওলামা ও শাসক উভয় শ্রেণীকেই বোঝায়। কারণ নির্দেশ দানের বিষয়টি তাদের উভয়ের সাথে সর্ম্পকিত। শাব্দিক অর্থে, উলিল-আমর বলতে সে সমস্ত লোককে বোঝায় যাদের হুকুম বা নির্দেশ চলতে পারে। তাফসীর গ্রন্থ "মাআরেফুল কোরআনে" মুফতি মো: শফি বিষয়টিকে বর্ণনা করেছেন, হুকুম চলার দুটি প্রেক্ষিত রয়েছে। এক, জবরদস্তিমুলক যা শুধু মাত্র শাসকগোষ্ঠী বা সরকার দ্বারাই সম্ভব হতে পারে। দুই, বিশ্বাস বা আস্থার দ্বারা হুকুম মান্য করা, যেটি ফকীহগণ অর্জন করতে পেরেছিলেন। আল্লামা আবু বকর জাসসাস বিষয়টিকে ব্যাখা করেছেন এভাবে যে, "সঠিক ব্যাপার হলো এতদুভয় অর্থই ঠিক অর্থাৎ উলিল-আমর বলতে ওলামা ও শাসক উভয় শ্রেণীকেই বোঝায় কারণ শাসন ও নির্দেশ দানের বিষয়টি তাদের উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।"
আনুগত্য ও বিরোধিতা
[সম্পাদনা]মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আলেম কর্তৃক লিখিত "উসুলুল ঈমান" নামক বইতে লেখকগণ উলিল আমর সম্পর্কে বলেন, "কুরআন, সুন্নাহ এবং এ উম্মাতের সালাফে সালেহীন তথা সঠিক পথের দিশারি আলেমগণের ঐকমত্য এটা প্রমাণ করছে যে, আল্লাহর নির্দেশের গণ্ডির ভিতরে থেকে শাসকের আনুগত্য করা ওয়াজিব, যদিও তারা অত্যাচার করে, যতক্ষণ তিনি গুনাহর কাজের নির্দেশ না দিবেন। যদি গুনাহর কাজের নির্দেশ দেন তখন স্রষ্টার অবাধ্য হয়ে সৃষ্টি জগতের কারোরই আনুগত্য করা যাবে না। তাদের পিছনে নামায পড়া ওয়াজিব, তাদের সাথে হজ্জ ও জিহাদ করা ওয়াজিব। যে সমস্ত মাসআলার মধ্যে ইজতিহাদ বা দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করার অধিকার রয়েছে সে সমস্ত মাসআলাতে তার আনুগ��্য করতে হবে। ইজতিহাদী বিষয়ে শাসকের ওপর তার অনুসারীদের আনুগত্য করা ওয়াজিব নয়, বরং তারা সেগুলোতে শাসকের অনুসরণ করবে, তার মতের বিপরীত মত পরিত্যাগ করবে; কেননা সর্বসাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণ, তাদেরকে একত্রিতকরণ এবং বিচ্ছিন্নতা ও মতভেদ থেকে বেঁচে থাকা বিশেষ স্বার্থের চেয়ে অনেক বড়। অনুরূপভাবে শরী'আতসম্মত পদ্ধতিতে তাকে নসীহত করা, তার আনুগত্য ত্যাগ করার চেষ্টা পরিত্যাগ করা এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা ওয়াজিব।"
উক্ত গ্রন্থে আরও বলা হয় , কুরআন ও সুন্নাহ থেকে উপস্থাপিত দলীল-প্রমাণ অনুসারে গুনাহের কাজ ছাড়া অন্যান্য যাবতীয় ব্যাপারে ইমাম ও শাসকগোষ্ঠির আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ নিম্নরূপ:[২]
- গুনাহর কাজ ছাড়া সর্বাবস্থায় শোনা ও মানা ওয়াজিব।
- শাসকগোষ্ঠী যদি নসীহত কবুল না করে তারপরও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা।
- যে কেউ শরী'আত সমর্থিত পদ্ধতিতে শাসকগোষ্ঠীকে নসীহত করল এবং তাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করল সে গুনাহ থেকে মুক্তি পেল।
- ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করা নিষেধ, অনুরূপভাবে যে সমস্ত কারণে ফিত্না বা অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে তা করাও নিষেধ।
- যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমতাশীলদের থেকে এমন কোনো সুস্পষ্ট কুফুরী প্রকাশ না পাবে যা কুফুরী হওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রকার দ্বিমত থাকবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না।
- কথা, কাজ ও বিশ্বাসে কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শে পরিচালিত মুসলিমদের জামা'আতকে আঁকড়ে ধরে থাকা ওয়াজিব, তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে, তাদের পথে চলতে হবে, হক ও ন্যায়ের পথে তাদের কথা এক রাখার ব্যাপারে আগ্রহ থাকতে হবে। তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না বা তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা যাবে না।
ইমাম ত্বাহাবী বলেন, "'আমরা আমাদের ইমাম ও শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পক্ষে মত দেই না, যদিও তারা অত্যাচার করুক। আমরা তাদের উপর বদদো'আ করি না, তাদের আনুগত্য ত্যাগ করি না, আমাদের মতে যতক্ষণ তারা কোনো গোনাহ বা অন্যায় কাজের নির্দেশ না দিবেন ততক্ষণ তাদের আনুগত্য করা ফরয, মহান আল্লাহর আনুগত্যের শামিল। আমরা তাদের সঠিক পথ লাভ ও নিরাপত্তার জন্য দো'আ করি।"
বারনার্ড লুইস আনুগত্যের আয়াতে উলিল আমর সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় বলেন, "এই কুরআনের আয়াতটি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি আরোপিত অনেক বাণীতে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে এমন কিছু কথাও রয়েছে যা বাধ্যতামূলক কর্তব্যের কঠোর সীমাবদ্ধতা রাখে। নবীর প্রতি আরোপিত এবং সর্বজনীনভাবে প্রামাণিক হিসাবে গৃহীত দুটি নির্দেশ নির্দেশক। একটিতে বলে, "পাপের মধ্যে কোন আনুগত্য নেই"; অন্য কথায়, শাসক যদি ঐশী বিধানের পরিপন্থী কিছু আদেশ করেন, তবে কেবল আনুগত্যের দায়িত্বই নেই, অবাধ্যতাও রয়েছে। এটি পশ্চিমা রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিপ্লবের অধিকারের চেয়ে বেশি। এটি বিপ্লবের একটি কর্তব্য, বা অন্তত অবাধ্যতা এবং কর্তৃত্বের বিরোধিতা। অপরটিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, "কোন প্রাণীকে তার স্রষ্টার বিরুদ্ধে মানবেন না," আবারও স্পষ্টভাবে শাসকের কর্তৃত্বকে সীমিত করে, শাসকের যে রূপই হোক না কেন।"
নির্বাচন
[সম্পাদনা]উলিল আমর নির্বাচিত হয় আহলে হিল্ল ওয়াল আকদ এর দ্বারা।
টীকা
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ইসলামের রাজনৈতিক দিক
- আনুগত্যের আয়াত (আয়াতুল উলিল আমর)