দূরবীক্ষণ যন্ত্র
দূরবীক্ষণ যন্ত্র, দূরবীন বা টেলিস্কোপ হলো এমন একটি যন্ত্র যা দূরবর্তী কোনো বস্তুকে ওই বস্তুটির নির্গমন, শোষণ বা তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের প্রতিফলনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। [১] একেবারে শুরুর দিকে এটি ছিল নিছক একটি আলোকযন্ত্র যা লেন্স, বক্রতল দর্পণ বা উভয়ের সংমিশ্রণ ব্যবহার করে দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণ করার জন্য তৈরি হতো; আলোকীয় দূরবীক্ষণ যন্ত্র এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমানে, "দূরবীক্ষণ যন্ত্র" বা "টেলিস্কোপ" শব্দটিকে আরও বিস্তৃত অর্থে প্রয়োগ করা হয়; তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর বিভিন্ন বর্ণাঞ্চল শনাক্তকারী যন্ত্রসহ আরও কয়েক ধরণের শনাক্তকারী যন্ত্রকেও এর দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলে বর্ণনা করা হয়।
যতদূর জানা যায় প্রথম দিককার কার্যকরী টেলিস্কোপগুলো ছিল কাঁচের লেন্সযুক্ত প্রতিসরণ দূরবিন এবং ১৭ শতকের শুরুতে নেদারল্যান্ডসে সেগুলো উদ্ভাবিত হয়েছিল। এগুলো পৃথিবীর মধ্যকার এবং বাহিরের তথা জ্যোতিবিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হত।
প্রথম প্রতিফলক দূরবীক্ষণ যন্ত্র দূরবিন তৈরির কয়েক দশকের মধ্যেই প্রতিফলিত টেলিস্কোপ উদ্ভাবিত হয়েছিলো। এগুলো আলো সংগ্রহ এবং ফোকাস করতে দর্পণ ব্যবহার করে।
বিংশ শতাব্দীতে, অনেক নতুন ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়, যার মধ্যে ১৯৩০-এর দশকে বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র এবং ১৯৬০-এর দশকে ইনফ্রারেড দূরবীক্ষণ যন্ত্র অন্যতম।
ব্যুৎপত্তি
সম্পাদনাটেলিস্কোপ শব্দটি ১৬১১ সালে সর্বপ্রথম গ্রিক গণিতবিদ জিওভান্নি ডেমিসিয়ানি অ্যাকাডেমিয়া দেই লিন্সিতে এক ভোজসভায় উপস্থাপিত গ্যালিলিও গ্যালিলেইর একটি যন্ত্রের নাম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।[২][৩] স্টারি মেসেঞ্জার গ্রন্থে গ্যালিলিও গ্যালিলেই ল্যাটিন পার্সপিসিলাম শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। টেলিস্কোপ বা τηλεσκόπος, শব্দটি মূলত প্রাচীন গ্রিক শব্দ τῆλε থেকে উৎপন্ন, ইংরেজি প্রতিবর্ণে এটিকে tele (টেলি / আক্ষরিক অর্থে দূর) এবং σκοπεῖν (স্কোপেইন / আক্ষরিক অর্থে দর্শন) লেখা হয়েছিলো।[৪]
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি তৈরি করেছিলেন হ্যান্স লিপারশে, ১৬০৮ সালে। ১৬০৯ সালে দূরবর্তী তারা পর্যবেক্ষণের জন্য গ্যালিলিও গ্যালিলি একটি দুরবিন তৈরি করেন। তিনি এই যন্ত্র তৈরির ধারণা লাভ করেছিলেন এক চশমা নির্মাতার কাছ থেকে। ঐ চশমা নির্মাতা একদিন লক্ষ্য করেন, তার দোকানে বসানো স্থির লেন্স পদ্ধতির মধ্য দিয়ে দেখলে দূরের বাতাসের দিক নির্ধারক যন্ত্রটি বিবর্ধিত দেখা যায়। গ্যালিলি তার দুরবিনের মাধ্যমে বৃহস্পতির উপগ্রহ এবং শনির বলয় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ১৬১১ সালে ইয়োহানেস কেপলার একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা অনেকটা জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মতো ছিল।[৫][৬][৭] তখন পর্যন্ত প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের যুগ চলছিল। ১৭৩৩ সালে জেমস গ্রেগরি একটি অ্যাক্রোমেটিক ডাবলেট অবজেক্টিভ তৈরি করেন যার মাধ্যমে প্রতিসরণ দুরবিনের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়।
প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন জেমস গ্রেগরি। আইজাক নিউটন-ও একটি প্রতিফলন দুরবিন তৈরি করেছিলেন। বর্ণীল অপেরণমুক্ত সাধারণ লেন্স নির্মাণ বেশ কষ্টসাধ্য হওয়ায় নিউটন এ ধরনের দুরবিন তৈরিতে উৎসাহিত হয়েছিলেন। তার মতে, প্রতিসরণ দূরবীক্ষণ যন্ত্রে যেখানে অবজেক্টিভের স্থানে লেন্স ব্যবহার করা সেখানেই দর্পণ ব্যবহার করা সম্ভব; কারণ দর্পণে ঠিক একইভাবে সকল বর্ণের আলো প্রতিফলিত হয়। বড় আকারের দূরবীক্ষণের অবজেক্টিভের স্থানে ব্যবহৃত দর্পণগুলো পরাবৃত্তীয় আকারের হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পালমার মানমন্দিরে স্থাপিত প্রতিফলন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অবজেক্টিভে ব্যবহৃত দর্পণের ব্যাস হল ৫০০ সেন্টিমিটার।[৮]
মহাকাশে
সম্পাদনাযেহেতু বেশিরভাগ তড়িৎচৌম্বক বর্ণালীর জন্য বায়ুমণ্ডল অভেদ্য, তাই পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে কেবল কয়েকটি বর্ণ দেখা যায়। এই বর্ণগুলো দৃশ্যমান – নিকটবর্তী-ইনফ্রারেড এবং বর্ণচ্ছটার বেতার-তরঙ্গ অংশের একটি অংশ।[৯] এই কারণে ভূপৃষ্ঠ-ভিত্তিক কোনও এক্স-রে বা দূরবর্তী-ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ নেই কারণ এগুলো কক্ষপথ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এমনকি যদি ভূপৃষ্ঠ থেকে কোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়, তবুও মেঘ, জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এবং আলোক দূষণের মতো নানান সমস্যার কথা মাথায় রাখলে মহাকশা দূরবিনগুলো স্যাটেলাইটে স্থাপন করাই অধিক সুবিধাজনক।[১০]
মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র চালু করার অসুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে এগুলো ব্যয় বেশি, আকার বড়, এবং রক্ষণাবেক্ষণযোগ্যতা ও আপগ্রেডিবিলিটি কম।[১১]
নাসার মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের কয়েকটি উদাহরণ হলো-
- হাবল মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র যা দৃশ্যমান আলো, অতিবেগুনী এবং নিকট-অবলোহিত তরঙ্গদৈর্ঘ্য সনাক্ত করে
- স্পিৎজার মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র যা ইনফ্রারেড বিকিরণ সনাক্ত করে
- কেপলার মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র যা হাজার হাজার এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করে। [১২]
২০২১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ফরাসি গায়ানার কাউরোতে জেমস ওয়েব স্পেস মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র উৎক্ষেপণ করা হয়। ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ইনফ্রারেড আলো সনাক্ত করে থাকে।[১৩]
তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালির মাধ্যমে
সম্পাদনা"টেলিস্কোপ" শব্দটি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রকে নির্দেশ করে। বেশিরভাগ টেলিস্কোপ তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ সনাক্ত করে, তবে বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে আলোকসংগ্রহের ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।
যখন তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘতর হয়, তখন অ্যান্টেনা প্রযুক্তি ব্যবহার করা সহজ হয় (যদিও খুব ক্ষুদ্র অ্যান্টেনা তৈরি করাও সম্ভব)। নিকট-ইনফ্রারেড আলোক ঠিক দৃশ্যমান আলোর মতোই সংগ্রহ করা যায়; তবে, দূর-ইনফ্রারেড এবং সাবমিলিমিটার পরিসরে টেলিস্কোপগুলি রেডিও টেলিস্কোপের মতো কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপ ৩ মাইক্রোমিটার (০.০০৩ মিমি) থেকে ২০০০ মাইক্রোমিটার (২ মিমি) পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করে, তবে এটি একটি প্যারাবলিক অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্টেনা ব্যবহার করে। অন্যদিকে, স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ, যা ৩ মাইক্রোমিটার থেকে ১৮০ মাইক্রোমিটার (০.১৮ মিমি) পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে, এটি একটি প্রতিফলক (আয়না) ব্যবহার করে। একইভাবে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ, তার ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩-এর মাধ্যমে ০.২ মাইক্রোমিটার (০.০০০২ মিমি) থেকে ১.৭ মাইক্রোমিটার (০.০০১৭ মিমি) পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করতে পারে (অতিবেগুনী থেকে ইনফ্রারেড পর্যন্ত)।
ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি) ফোটনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রতিফলক অপটিকসের পরিবর্তে গ্ল্যান্সিং-ইনসিডেন্ট অপটিকস ব্যবহার করা হয়। TRACE এবং SOHO-র মতো টেলিস্কোপগুলি চরম অতিবেগুনী পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ আয়না ব্যবহার করে, যা উচ্চ রেজোলিউশন এবং উজ্জ্বল ছবি তৈরি করতে সাহায্য করে। বড় অ্যাপারচ���র মানে কেবল বেশি আলো সংগ্রহ করা নয়, এটি সূক্ষ্ম কৌনিক রেজোলিউশন অর্জন করতেও সক্ষম।
টেলিস্কোপগুলিকে অবস্থান অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে: স্থলীয় টেলিস্কোপ, মহাকাশ টেলিস্কোপ, বা উড়ন্ত টেলিস্কোপ। এগুলি পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী বা অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী দ্বারা পরিচালিত হয় কিনা তা অনুযায়ীও শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। একটি যানবাহন বা স্থায়ী ক্যাম্পাস যেখানে এক বা একাধিক টেলিস্কোপ বা অন্যান্য যন্ত্র স্থাপন করা হয় তাকে মানমন্দির বলা হয়।
রেডিও এবং সাবমিলিমিটার
সম্পাদনারেডিও টেলিস্কোপগুলি দিকনির্দেশক রেডিও অ্যান্টেনা, যা সাধারণত একটি বড় ডিশ ব্যবহার করে রেডিও তরঙ্গ সংগ্রহ করে। এই ডিশগুলি কখনও কখনও একটি পরিবাহী তারের জাল দিয়ে তৈরি হয়, যার খোলা অংশগুলি পর্যবেক্ষিত তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট।
একটি অপটিক্যাল টেলিস্কোপের মতো নয়, যা পর্যবেক্ষিত আকাশের একটি অংশের একটি বিস্তৃত চিত্র তৈরি করে, একটি ঐতিহ্যবাহী রেডিও টেলিস্কোপ ডিশ একটি একক রিসিভার ধারণ করে এবং পর্যবেক্ষণকৃত অঞ্চলের সময় পরিবর্তিত সংকেত রেকর্ড করে। এই সংকেতটি বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে নমুনা করা যেতে পারে। কিছু আধুনিক রেডিও টেলিস্কোপ ডিজাইনে একটি একক ডিশে একাধিক রিসিভারের একটি ফোকাল-প্লেন অ্যারে থাকে।
একাধিক ডিশ দ্বারা একই সাথে সংগৃহীত এবং সংশ্লিষ্ট সংকেত ব্যবহার করে উচ্চ-রেজোলিউশনের চিত্র গণনা করা যেতে পারে। এই ধরনের বহু-ডিশ অ্যারেগুলিকে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ইন্টারফেরোমিটার বলা হয় এবং এই পদ্ধতিকে অ্যাপারচার সিনথেসিস বলা হয়। এই অ্যারেগুলির "ভার্চুয়াল" অ্যাপারচারগুলি টেলিস্কোপগুলির মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান আকারের হয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত, সবচেয়ে বড় অ্যারে আকার পৃথিবীর ব্যাসার্ধের চেয়েও অনেক বেশি, ভিএলবি টেলিস্কোপ যেমন জাপানের HALCA (ভিএসওপি স্যাটেলাইট) ব্যবহার করে।
অ্যাপারচার সিনথেসিস এখন অপটিক্যাল টেলিস্কোপেও প্রয়োগ করা হচ্ছে, যেমন অপটিক্যাল ইন্টারফেরোমিটার এবং একক প্রতিফলক টেলিস্কোপে অ্যাপারচার মাস্কিং ইন্টারফেরোমেট্রি।
রেডিও টেলিস্কোপগুলি মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ সংগ্রহের জন্যও ব্যবহৃত হয়, যা বায়ুমণ্ডল এবং আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘের মধ্য দিয়ে যেতে সক্ষম।
কিছু রেডিও টেলিস্কোপ যেমন অ্যালেন টেলিস্কোপ অ্যারে, সেটি এবং অ্যারেসিবো মানমন্দির প্রোগ্রাম দ্বারা ভিনগ্রহের প্রাণের সন্ধানের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইনফ্রারেড
সম্পাদনাদৃশ্যমান আলো
সম্পাদনাঅপটিক্যাল টেলিস্কোপ প্রধানত তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালির দৃশ্যমান অংশ থেকে আলো সংগ্রহ এবং কেন্দ্রীভূত করে। অপটিক্যাল টেলিস্কোপ দূরবর্তী বস্তুগুলির আপাত কৌনিক আকার এবং আপাত উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। ছবি পর্যবেক্ষণ, ছবি তোলা, অধ্যয়ন এবং কম্পিউটারে প্রেরণের জন্য টেলিস্কোপ সাধারণত কাঁচের লেন্স বা আয়নার মতো একটি বা একাধিক বাঁকানো অপটিক্যাল উপাদান ব্যবহার করে আলো বা বিকিরণকে ফোকাল পয়েন্টে নিয়ে আসে। অপটিক্যাল টেলিস্কোপ জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অনেক অ-জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন: theodolites (ট্রানজিট সহ), spotting scopes, monoculars, দোনলা দুরবিন, camera lenses, এবং স্পাইগ্লাস। তিনটি প্রধান অপটিক্যাল প্রকার রয়েছে:
- প্রতিসর টেলিস্কোপ, যা লেন্স ব্যবহার করে একটি ছবি তৈরি করে।
- প্রতিফলক টেলিস্কোপ, যা আয়নার বিন্যাস ব্যবহার করে ছবি তৈরি করে।
- ক্যাটাডিওপট্রিক টেলিস্কোপ, যা লেন্স এবং আয়নার সংমিশ্রণ ব্যবহার করে ছবি তৈরি করে।
একটি ফ্রেনেল ইমেজার একটি মহাকাশ টেলিস্কোপের জন্য প্রস্তাবিত একটি অতি-হালকা নকশা, যা আলো কেন্দ্রীভূত করতে একটি ফ্রেনেল লেন্স ব্যবহার করে। বেসিক অপটিক্যাল প্রকার ছাড়াও, বিভিন্ন কাজের জন্য শ্রেণিবদ্ধ অনেক সাব-টাইপ ডিজাইন রয়েছে, যেমন অ্যাস্ট্রোগ্রাফ, ধূমকেতু অনুসন্ধানকারী, এবং সৌর টেলিস্কোপ।
অতিবেগুনী
সম্পাদনাঅধিকাংশ অতিবেগুনী আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল দ্বারা শোষিত হয়, তাই এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ উচ্চ বায়ুমণ্ডলে বা মহাকাশ থেকে সম্পন্ন করতে হয়।
এক্স-রে
সম্পাদনাএক্স-রে সংগ্রহ এবং কেন্দ্রীভূত করা দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের তুলনায় অনেক কঠিন। এক্স-রে টেলিস্কোপগুলি এক্স-রে অপটিক্স ব্যবহার করে, যেমন ভলটার টেলিস্কোপ, যা ভারী ধাতুর তৈরি রিং-আকৃতির 'গ্ল্যান্সিং' আয়না ব্যবহার করে, যা কয়েক ডিগ্রি কোণে রশ্মি প্রতিফলিত করতে সক্ষম। আয়নাগুলি সাধারণত একটি ঘূর্ণিত প্যারাবোলা এবং একটি হাইপারবোলা, বা এলিপস-এর অংশ। ১৯৫২ সালে হান্স ভলটার এই ধরনের আয়না ব্যবহার করে তিনটি ভিন্নভাবে টেলিস্কোপ তৈরি করার পদ্ধতি উল্লেখ করেন। এই ধরনের টেলিস্কোপ ব্যবহারকারী মহাকাশ মানমন্দিরগুলির উদাহরণ হলো আইনস্টাইন মানমন্দির, ROSAT, এবং চন্দ্র এক্স-রে মানমন্দির। ২০১২ সালে নিউস্টার এক্স-রে টেলিস্কোপ চালু হয়, যা ভলটার টেলিস্কোপের নকশার অপটিক্স ব্যবহার করে ৭৯ কেভি ফোটন শক্তি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি দীর্ঘ প্রসারণযোগ্য মস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে।
গামা রশ্মি
সম্পাদনাউচ্চ শক্তির এক্স-রে এবং গামা রশ্মি টেলিস্কোপ সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত না হয়ে coded aperture মাস্ক ব্যবহার করে: মাস্কের ছায়ার ধরণটি পুনর্গঠিত করে একটি ছবি তৈরি করা যায়।
এক্স-রে এবং গামা-রে টেলিস্কোপ সাধারণত উচ্চ-উড়ন্ত বেলুন বা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা উপগ্রহগুলিতে স্থাপন করা হয়, কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল তড়িৎচুম্বকীয় বর্ণালির এই অংশে অস্বচ্ছ। এই ধরনের টেলিস্কোপের একটি উদাহরণ হলো ফার্মি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপ, যা ২০০৮ সালের জুনে চালু হয়েছিল।
খুব উচ্চ শক্তির গামা রশ্মি শনাক্ত করার জন্য, যা স্বাভাবিক গামা রশ্মির চেয়ে সংক্ষিপ্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি ধারণ করে, আরও বিশেষায়িত প্রযুক্তি প্রয়োজন। এই ধরনের শনাক্তকরণ ইমেজিং অ্যাটমোসফেরিক চেরেনকভ টেলিস্কোপস (IACTs) বা ওয়াটার চেরেনকভ ডিটেক্টরস (WCDs) ব্যবহার করে করা যায়। IACTs-এর উদাহরণ হলো H.E.S.S. এবং VERITAS। আগামী প্রজন্মের গামা-রে টেলিস্কোপ, চেরেনকভ টেলিস্কোপ অ্যারে (CTA) বর্তমানে নির্মাণাধীন। HAWC এবং LHAASO হলো ওয়াটার চেরেনকভ ডিটেক্টর ভিত্তিক গামা-রে ডিটেক্টরের উদাহরণ।
২০১২ সালে একটি আবিষ্কার দেখায় যে গামা-রে টেলিস্কোপ কেন্দ্রীভূত করা সম্ভব হতে পারে। ৭০০ কেভির বেশি ফোটন শক্তিতে, প্রতিসরণ সূচক পুনরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
টেলিস্কোপের তালিকা
সম্পাদনাএছাড়াও দেখুন
সম্পাদনা- বায়ুভর (Airmass)
- অপেশাদার টেলিস্কোপ তৈরি
- কৌণিক রেজোলিউশন
- ASCOM টেলিস্কোপের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্মুক্ত মান
- বাখতিনভ মাস্ক
- দোনলা দুরবিন (বাইনুকোলার)
- Bioptic telescope
- কেরি মাস্ক
- ডি শিল্ড
- ডায়নামিটার
- এফ-নাম্বার
- প্রথম আলো
- হার্টম্যান মাস্ক
- কীহোল সমস্যা
- অণুবীক্ষণ যন্ত্র
- প্ল্যানেটেরিয়ামের তালিকা
- রিমোট টেলিস্কোপ মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ
- রোবোটিক দূরবীক্ষণ যন্ত্র
- দূরবীক্ষণ যন্ত্রপ্রযুক্তির সময়ক্রম
- দূরবীক্ষণ যন্ত্র, মানমন্দির, এবং পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির সময়ক্রম
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Telescope"। The American Heritage Dictionary। ১১ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৮।
- ↑ Sobel (2000, p.43), Drake (1978, p.196)
- ↑ Rosen, Edward, The Naming of the Telescope (1947)
- ↑ Jack, Albert (২০১৫)। They Laughed at Galileo: How the Great Inventors Proved Their Critics Wrong। Skyhorse। আইএসবিএন 978-1629147581।
- ↑ archive.org "Galileo His Life And Work" BY J. J. FAHIE "Galileo usually called the telescope occhicde or cannocchiale ; and now he calls the microscope occhialino. The name telescope was first suggested by Demisiani in 1612"
- ↑ Sobel (2000, p.43), Drake (1978, p.196)
- ↑ Rosen, Edward, The Naming of the Telescope (1947)
- ↑ A Textbook of Optics - রচনা করেছেন এন সুব্রামানিয়াম ও ব্রিজ লাল। পৃষ্ঠা: ১৬২ - Telescopes
- ↑ Stierwalt, Everyday Einstein Sabrina। "Why Do We Put Telescopes in Space?"। Scientific American (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২০।
- ↑ Siegel, Ethan। "5 Reasons Why Astronomy Is Better From The Ground Than In Space"। Forbes (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২০।
- ↑ Siegel, Ethan। "This Is Why We Can't Just Do All Of Our Astronomy From Space"। Forbes (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২০।
- ↑ Brennan, Pat; NASA (২৬ জুলাই ২০২২)। "Missons/Discovery"। NASA's exoplanet-hunting space telescopes। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ Space Telescope Science Institution; NASA (১৯ জুলাই ২০২৩)। "Quick Facts"। Webb Space Telescope। সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Elliott, Robert S. (১৯৬৬), Electromagnetics, McGraw-Hill
- King, Henry C. (১৯৭৯)। The history of the telescope। H. Spencer Jones। Dover Publications। আইএসবিএন 0-486-23893-8। ওসিএলসি 6025190।
- Pasachoff, Jay M. (১৯৮১)। Contemporary astronomy (2nd সংস্করণ)। Saunders College Pub। আইএসবিএন 0-03-057861-2। ওসিএলসি 7734917।
- Rashed, Roshdi; Morelon, Régis (১৯৯৬), Encyclopedia of the History of Arabic Science, 1 & 3, Routledge, আইএসবিএন 978-0-415-12410-2
- Sabra, A. I.; Hogendijk, J. P. (২০০৩)। The Enterprise of Science in Islam: New Perspectives। MIT Press। পৃষ্ঠা 85–118। আইএসবিএন 978-0-262-19482-2।
- Wade, Nicholas J.; Finger, Stanley (২০০১), "The eye as an optical instrument: from camera obscura to Helmholtz's perspective", Perception, 30 (10), পৃষ্ঠা 1157–1177, এসটুসিআইডি 8185797, ডিওআই:10.1068/p3210, পিএমআইডি 11721819
- Watson, Fred (২০০৭)। Stargazer : the life and times of the telescope। Allen & Unwin। আইএসবিএন 978-1-74176-392-8। ওসিএলসি 173996168।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- গ্যালিলিও থেকে গামা সেফেই - টেলিস্কোপের ইতিহাস । ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ মে ২০১৩ তারিখে
- গ্যালিলিও প্রজেক্ট - আল ভ্যান হেলডেনের টেলিস্কোপ
- "প্রথম টেলিস্কোপ"। কসমিক জার্নি থেকে একটি প্রদর্শনীর অংশ: বৈজ্ঞানিক কসমোলজির ইতিহাস . ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ এপ্রিল ২০০৮ তারিখেআমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্স দ্বারা
- অপটিক্যালের বাইরে: অন্যান্য ধরণের টেলিস্কোপ