টোপর
টোপর বাঙালি হিন্দুদের ব্যবহৃত একপ্রকার ধর্মীয় মস্তকাবরণী। সাধারণত বিবাহ উপলক্ষে বরকে টোপর পরতে হয়। অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানেও টোপর ব্যবহৃত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে যে শিশুটির অন্নপ্রাশন হয়, তাকে টোপর পরানো হয়। টোপর সাধারণত ভঙ্গুর। এগুলি শোলার দ্বারা নির্মিত। টোপরের রং সাদা।
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]টোপরের উৎপত্তি সংক্রান্ত কিংবদন্তিটি হিন্দু দেবতা শিবের বিবাহ-সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ উপাখ্যানটির সঙ্গে জড়িত। উক্ত কিংবদন্তি অনুযায়ী, নিজের বিবাহ অনুষ্ঠানে শিব একটি বিশেষ মুকুট পরার ইচ্ছার পোষণ করেন এবং দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে তা প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেন। কিন্তু বিশ্বকর্মা ছিলেন ধাতুশিল্পী। তিনি শিবের চাহিদামতো মুকুট নির্মাণে ব্যর্থ হন। তখন মালাকার নামে এক ব্যক্তি জলা অঞ্চল থেকে শোলা সংগ্রহ করে শিবের জন্য এক বিশেষ মস্তকাবরণী প্রস্তুত করে দেন। এই মস্তকাবরণীই "টোপর" নামে পরিচিত।[১] কথিত আছে, মালাকারের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে শিব তাকে নিজের ব্যক্তিগত হস্তশিল্পী নিয়োগ করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের শোলা শিল্পী মালাকার সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের এই মালাকারের বংশধর মনে করেন। তারা উক্ত কিংবদন্তি স্মরণে বিশ্বকর্মা পূজা করেন না; করেন শিবপত্নী মহেশ্বরীর পূজা।[২]
ব্যবহার
[সম্পাদনা]বিবাহ উপলক্ষে টোপর পরিধান একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রথা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, টোপর সৌভাগ্য এনে দেয়। সাধারণত কনের বাড়ি থেকে টোপর পাঠানো হয় বরের বাড়িতে। বিবাহ অনুষ্ঠানের পূর্বে বর টোপর মাথায় দিয়ে ছাদনাতলায় উপস্থিত হয়।
বিবাহ ছাড়াও অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানেও টোপরের প্রচলন রয়েছে। অন্নপ্রাশন উপলক্ষে শিশুকে বরের সাজে সাজানো হয় এবং তার মাথায় টোপর পরানো হয়। এই টোপর শোলানির্মিত হলেও স্বাভাবিক কারণেই বিবাহের টোপরের তুলনায় আকারে ছোটো হয়।[৩]
সংস্কার
[সম্পাদনা]বিবাহ অনুষ্ঠানে টোপর শুধুমাত্র তার সৌন্দর্যের কারণেই পরা হয় না, টোপর পরিধানের বিশেষ ধর্মীয় তাৎপর্য রয়েছে এবং তা পরা বরের অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। এই কারণে টোপর নিয়ে হিন্দু সমাজে নানাবিধ সংস্কারও রয়েছে। টোপর খুব সাবধানে ব্যবহার করা হয়। টোপর ভেঙে যাওয়া বা পুড়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যের লক্ষণ বলে ধরা হয়। টোপর বা শোলা নির্মিত যে কোনো সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেলে তাকে জলাশয়ের গর্ভে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। লোকবিশ্বাস, এতে ভাঙা জিনিসটি নিয়ে কেউ ব্যবহারকারীর ক্ষতি করতে পারে না।[১]