স্নাতক উপাধি
কোনও শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষাজীবনের প্রথম তিন বা চার বছরে একটি পূর্বনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্দেশক যে উপাধি প্রদান ক���ে, তাকে স্নাতক উপাধি (ইংরেজিতে "ব্যাচেলার্স ডিগ্রি") বলে। স্থানভেদে স্নাতক শিক্ষাক্রমের মেয়াদ কম-বেশি হতে পারে। যে ব্যক্তি স্নাতক উপাধি লাভ করে, তাকে "স্নাতক" (গ্র্যাজুয়েট) বলা হয়।
আক্ষরিক অর্থে স্নাতক বলতে (জ্ঞানের) জলে স্নান বা অবগাহন করাকে বোঝায়।[১]
স্নাতক উপাধির প্রকারভেদ
সম্পাদনাব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলসমূহ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে স্নাতক উপাধি দুই ধরনের হয়ে থাকে — সম্মান (অনার্স) এবং সাধারণ (ডিগ্ৰি পাস কোর্স)। সম্মানসহ স্নাতক উপাধি বোঝাতে স্নাতক শব্দের পরে "সম্মান" শব্দটি বন্ধনীর ভেতরে রেখে যুক্ত করা হয়।[২] সম্মানসহ স্নাতক উপাধি অর্জনের জন্য সাধারণ উপাধির (পাস কোর্স) তুলনায় উৎকৃষ্টতর উচ্চশিক্ষায়তনিক যোগ্যতার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ
সম্পাদনাবাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণভাবে চার বছর মেয়াদী সম্মান (অনার্স) ও তিন বছর মেয়াদী সাধারণ (ডিগ্রি পাস কোর্স) এই দুই ধরনের স্নাতক উপাধি প্রদান করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে এসব ডিগ্রির জন্য ভর্তি হওয়া যায়। কলাবিদ্যা বা মানববিদ্যা ধারায় স্নাতক উপাধিকে "কলাবিদ্যায় স্নাতক" (ইংরেজিতে "ব্যাচেলর অব আর্টস বা সংক্ষেপে বিএ") বলা হয়। চারুকলা ধারায় "চারুকলায় স্নাতক" (ইংরেজিতে "ব্যাচেলর অফ ফাইন আর্টস বা সংক্ষেপে বি.এফ.এ."), অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞান ধারায় "সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক" ("ব্যাচেলর অফ সোশ্যাল সায়েন্স:-বি.এস.এস."), বিজ্ঞান ধারায় "বিজ্ঞানে স্নাতক" ("ব্যাচেলর অফ সায়েন্স, সংক্ষেপে বি.এসসি.") এবং ব্যবসায় শিক্ষা ধারায় "বাণিজ্যে স্নাতক" (ইংরেজিতে "ব্যাচেলর অফ কমার্স বা বি.কম.") কিংবা "ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক" (ইংরেজিতে "ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সংক্ষেপে বি.বি.এ") নামক উপাধি দেয়া হয় কিংবা (ইংরেজিতে "ব্যাচেলার অফ বিজনেস স্টাডিজ, সংক্ষেপে বিবিএস")। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ চার বছর মেয়াদী স্নাতক শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি "(ব্যাচেলর অফ সায়েন্স ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্ষেপে বি. এসসি. ইঞ্জ)" প্রদান করে থাকে। আবার ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকৌশলীদের একমাত্র স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান "দি ইনস্টিটিউশন ইঞ্জিনিয়ার্স ,বাংলাদেশ" হতে এএমআইই (AMIE) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি ("গ্র্যাজুয়েশন ইন ইঞ্জিনিয়ারিং") প্রদান করে থাকে । আইন বিষয়ে চার বছর মেয়াদী "ব্যাচেলর অফ লজ বা এলএল.বি." (অনার্স) তথা "আইনবিদ্যায় স্নাতক (সম্মান)" উপাধি এবং দুই বছর মেয়াদী "এলএল.বি. (ডিগ্ৰি পাস কোর্স)" "আইনবিদ্যায় স্নাতক (সাধারণ)" উপাধি চালু আছে। চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলিতে (মেডিকেল কলেজ) স্নাতক শিক্ষাক্রম ৫ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে এবং এগুলি শেষ করলে "চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শল্যচিকিৎসায় স্নাতক (ইংরেজিতে সংক্ষেপে এম.বি.বি.এস.") উপাধি প্রদান করা হয়।
ভারত
সম্পাদনাভারতে স্নাতক ডিগ্রীগুলি সাধারণত ৩ বছরের অধ্যয়ন শেষ করতে সময় নেয়, যদিও বিই / BTech, এমবিবিএস, BVSc বা BArch- এর মতো কোর্সগুলি বেশি সময় নেয়৷ একজন BE/BTech সাধারণত ৪ বছর সময় নেয়, যখন একজন MBBS বা BArch সম্পূর্ণ হতে সাধারণত ৫ বছর সময় লাগে। বেশিরভাগ বিজ্ঞান, বাণিজ্য এবং কলা ডিগ্রী হল ছাত্র দ্বারা নির্বাচিত ইলেকটিভ সহ সম্মান ডিগ্রী। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ বাস্তবায়নের সাথে, ৩ বছরে প্রোগ্রামটি ছেড়ে দেওয়ার বিকল্প হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলি ৪ বছর সময় নেবে এবং ।
সাধারণ স্নাতক ডিগ্রি এবং সংক্ষিপ্ত রূপ:
- কলা স্নাতক : বিএ
- ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন : বিবিএ
- ব্যাচেলর অফ ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ : বিএমএস
- বিজ্ঞান ব্যাচেলর : বিএসসি
- তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যাচেলর অফ সায়েন্স : বিএসআইটি
- ব্যাচেলর অফ কমার্স : বিকম
- চারুকলা স্নাতক : বিএফএ
- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন স্নাতক : বিসিএ
- আইন স্নাতক : এলএলবি
- ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক : বি.ই/AMIE/BTech
- প্রযুক্তি ব্যাচেলর : বিটেক
- ব্যাচেলর অফ এডুকেশন : বিএড (৩ বছরের স্নাতক কোর্স সম্পন্ন করার পরে বিএড ডিগ্রি দেওয়া হয়।)
- ব্যাচেলর অফ মেডিসিন, ব্যাচেলর অফ সার্জারি : এমবিবিএস
- ভেটেরিনারি সায়েন্স ব্যাচেলর : বিভিএসসি
- স্থাপত্যের স্নাতক : বিএআরচ
ভারতে একাডেমিক গ্রেডিং সিস্টেমের জন্য, ভারতে একাডেমিক গ্রেডিং দেখুন।
শিক্ষার্থীরা সাধারণত ন্যাশনাল বা স্টেট বোর্ড থেকে দ্বাদশ শ্রেণী শেষ করার পর তাদের স্নাতক শুরু করে ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "স্মারক, গ্রন্থ ও স্মারকগ্রন্থ; স্নান থেকে স্নাতক, অনুমৃতা"। draminbd.com। ২০২৩-০৬-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০১।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১১।